ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

করোনা আতঙ্কে পাল্টে গেছে সিরাজগঞ্জে হাসপাতালের চিত্র

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২০
করোনা আতঙ্কে পাল্টে গেছে সিরাজগঞ্জে হাসপাতালের চিত্র

সিরাজগঞ্জ: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আতঙ্কে পাল্টে গেছে সিরাজগঞ্জের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র। কয়েকদিন আগেও হাসপাতালগুলোর বর্হিবিভাগ ও অন্তর্বিভাগে ভিড় ছিলো। প্রতিটি ওয়ার্ডের করিডরে রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হতো নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের। বেড সংকটের কারণে বারান্দাতে ঠাঁই হতো একাধিক রোগীর। আগে যেখানে রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হতো এখন সেখানে হাসপাতালের বেশিরভাগ বেড খালি পড়ে আছে।

যেসব রোগী ভর্তি রয়েছেন তাদের স্বজনদের উপস্থিতিও একেবারেই কম।  সব হাসপাতালেই বিরাজ করছে সুনশান নিরবতা।

একই অবস্থা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও। কাজ না থাকায় বসে রয়েছেন ল্যাব টেকনোলজিস্টরা।  

সরেজমিনে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল, আভিসিনা হাসপাতাল, মেডিনোভা হাসপাতাল, হেলথ এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সোহাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।  

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সূত্রমতে, গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। অথচ ১০ দিন আগেও এ হাসপতালে প্রতিদিন গড়ে ১৭০-১৮০ জন রোগী ভর্তি হতেন।  

এ হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জেবুন্নেছা বেগম বাংলানিউজকে জানান, আড়াইশো বেডের এ হাসপাতালে বর্তমানে ৮৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে শিশু বিভাগে ১৪, মেডিসিনে ১২, সার্জারি ৩৩, অর্থপেডিক্স ৬, গাইনী ১৫ ও সিসিইউতে ৭ জন রয়েছেন। অথচ আগে বেশিরভাগ সময় সাড়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৪০০ রোগী ভর্তি থাকতো। সিট খালি না থাকায় বারান্দাও রোগী দিয়ে ভর্তি হয়ে যেতো। তিনি বলেন, আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হতো। বর্তমানে অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত এক সপ্তাহ ধরে বর্হিবিভাগে গড়ে দেড়শো জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।  

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের কিডনি রোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শরিফুল ইসলাম বলেন, আজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগে মাত্র ৪ জন রোগী দেখেছি। এর আগে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন রোগী দেখতে হতো।  

এ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. রঞ্জন কুমার দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, ডাক্তাররা সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। দু-একজন চিকিৎসক বাইরে থাকতে পারেন। তবে বেশিরভাগই হাসপাতালে অবস্থান করে ভর্তি রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সব জায়গাতেই রোগীর সংখ্যা কম। জরুরি কোন প্রয়োজন ছাড়া কেউ হাসপাতালে আসতে চাচ্ছে না। ছোটখাট সমস্যা হলে ফোনেই ব্যবস্থাপত্র নিচ্ছেন রোগীরা। এ কারণে রোগী অনেক কম হচ্ছে।  

শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম আভিসিনা হসপিটালে গিয়ে একই চিত্র দেখা গেছে। ৬০ বেডের হাসপাতালটিতে বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছেন ৫ জন। কয়েকদিন আগেও প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগী এখানে চিকিৎসাধীন থাকতেন।  

এ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মোসাদ্দেক মাসুম বলেন, এ দুর্যোগের মুহুর্তে রাতদিন ২৪ ঘন্টা আমাদের ইমার্জেন্সি বিভাগ চালু রয়েছে। সবসময় একজন চিকিৎসক ইমার্জেন্সিতে দায়িত্ব পালন করেন। আগে গড়ে প্রতিদিন ২০ জন রোগী ভর্তি হতেন। এখন কোনদিন একজন আবার কোনদিন দুজন ভর্তি হচ্ছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পিপিই সরবরাহ করেছি। তবে চেম্বারের চারজন চিকিৎসকের মধ্যে কেউ আপাতত বসছেন না। রোগী না থাকার কারণেই তারা হয়তো চেম্বারে আসছেন না।  

হেলথ এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার ফাহাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে এখানে রোগীও নেই, চেম্বারে চিকিৎসকও নেই। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আসা কিছু রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা এখানে করা হয়। তবে প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ জনের বেশি নয়। করোনা পরিস্থিতির আগে প্রতিদিন ৫০/৬০ জন রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখানে করা হতো।  

সোহাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, পরীক্ষার জন্য দিনে ১/২টি রোগী আমরা পাচ্ছি। তবুও প্রতিষ্ঠান চালু রেখেছি।

সিরাজগঞ্জ বেসরকারি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুস সামাদ আজাদ খোকন বলেন, করোনা আতঙ্কে এখন ৮০/৯০ শতাংশ রোগী কমে গেছে হাসপাতালগুলোতে। আউটডোর-ইনডোর সব জায়গাতে একই অবস্থা।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২০
এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।