ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

করোনা: এক রোগী নিয়েই নাকাল কক্সবাজার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২০
করোনা: এক রোগী নিয়েই নাকাল কক্সবাজার

কক্সবাজার: কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ছাড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক বৃদ্ধাকে চিকিৎসাসেবা দিতে সংস্পর্শে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছেন ২২ চিকিৎসক-নার্স, একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) অনেকেই। এ কারণে হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ইউনুচসহ ওই রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া ১০ চিকিৎসক, আট নার্সসহ সংশ্লিষ্ট ২২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

একইসঙ্গে ঘটনাটির জেরে লকডাউন করা হয়েছে চট্টগ্রামের দুইটি, কক্সবাজার শহরের দুইটি, চৌফলদন্ডীর একটি ও রামুর একটি বাড়ি। মোট কথা এই একজন রোগী নিয়েই সদর হাসপাতালসহ পুরো জেলা জেরবার হয়ে পড়েছে।

শুধু কক্সবাজার জেলা নয়, সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ইউনুচ ওই রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় বর্তমানে হোম কেয়ারেন্টিনে আছেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচিও। তাই এই একটি রোগীকে ঘিরে আরেক জেলার মানুষও বেশ আতঙ্কে আছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই আতঙ্কে অন্যান্য অনেক রোগী হাসপাতাল ছেড়েও চলে যান। এমনকি এর জরুরি বিভাগে রোগীর আগমনও কমে যায়। পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দেয়।

তবে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ওই রোগীর শারীরিক অবস্থার অনেক উন্নতি হচ্ছে। ঢাকা থেকে চিকিৎসকদল এসেছে। তারা ওই রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ওই রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ এবং রোগীর পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এমনকি ওই রোগী যেখানে যেখানে গেছেন, সব বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

জানা গেছে, ৭৫ বছর বয়সী ওই রোগীর বাড়ি কক্সবাজারের খুটাখালীতে। গত ১৩ মার্চ তিনি সৌদি আরব থেকে ওমরা পালন শেষে দেশে আসেন। এরপর জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ১৮ মার্চ তিনি কক্সবাজার সদর হাসসপাতালে ভর্তি হন। তখন চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে গত ২২ মার্চ তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকা রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়। পরে রিপোর্ট আসে তার করোনা ভাইরাস পজেটিভ।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহীন আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে ভর্তির সময় রোগীর স্বজনরা সৌদি আরব থেকে ফেরার তথ্য গোপন করেছিলেন। যে কারণে তাকে সাধারণ রোগী হিসেবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পিপিই ছাড়া তার সংস্পর্শে গিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েন অনেক চিকিৎসক-নার্স, স্টাফ ও তাদের পরিবারের সদস্য।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে এই রোগীর সংস্পর্শ পাওয়া ছয়টি বাড়ি লাল পতাকা টাঙিয়ে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কক্সবাজার শহরে তার দুই ছেলের বাসা, চৌফলদন্ডী ও রামুতে দুই মেয়ের বাড়ি এবং চট্টগ্রামে দুই ছেলের বাসা রয়েছে। এসব বাড়ির লোকজন যেন বাইরে না আসে, সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মানুষকে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বারবার উৎসাহ দিচ্ছি। প্রয়োজনে দরিদ্রদের জন্য খাবার সহায়তা দেওয়ার কথাও বলছি।

হোম কোয়ারেন্টিনে ইউএনও

অন্যান্য চিকিৎসক ও নার্সের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত এই রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ইউনুচ। পরবর্তীতে তিনি পরিবারের সংস্পর্শে গেলে মঙ্গলবার থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে যান তার স্ত্রী ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচিও।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২০
এসবি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad