কেমন ছিল সেই মুক্তিযুদ্ধকালীন দিনগুলো? কোন চেতনায় এক হয়ে লড়াই করেছিল মানুষ? বারবার আমাদের মনে এসব প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যায়। বারবার আমরা ফিরে যাই ইতিহাসের কাছে, খুঁজি এসবের উত্তর।
এসব নিয়েই বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতির কথা জানতে চাইলে এ শিক্ষাবিদ বলেন, একাত্তরে আমরা একটা অবরুদ্ধ বাংলাদেশে ছিলাম। বেশিরভাগ সময় ঢাকাতেই ছিলাম। পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণ, বর্বরোচিত নির্যাতন, সেগুলো অনেক সময় নিজের চোখে দেখেছি। সেগুলো হৃদয় বিদারক।
সেইসবদিনের ভয়াবহতা তুলে ধরে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, রাস্তায় বের হলে পাকিস্তানী বাহিনী এসে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে বডি সার্চ করতো। তখন মনে হতো, এখনই বোধ হয় গুলি করবে।
এতোসবের পরেও মুক্তিযুদ্ধে সারা ভূ-খণ্ডের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য, তাই বাংলাদেশের জন্মকে সম্ভব করে তুলেছে। সে প্রসঙ্গে ঢাবির সাবেক এ উপাচার্য বলেন, পাকিস্তানীদের নির্যাতনের পাশে আবার এটাও দেখেছি, মানুষ কত নিঃস্বার্থভাবে তখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়েছেন।
‘মুক্তিযোদ্ধাদেরকে জায়গা করে দেওয়া, খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া, কাপড় দেওয়া, ওষুধ সরবরাহ করার কাজগুলো করেছে সাধারণ মানুষ। তখন সাড়ে সাত কোটি মানুষকে আলাদা মনে হয়নি। তারা যেন কেবল একটি মানুষ। ’
আবেগতাড়িত হয়ে এ শিক্ষক আরো যোগ করেন, একাত্তরে একজন যে চিন্তা করছে, সবাই যেন সেই একই চিন্তা করছে। বাঙালি তখন প্রত্যেকদিন এগিয়ে গেছে।
কিন্তু সেই ধারাটি এখন আর অব্যাহত নেই বলে অভিমত আরেফিন সিদ্দিকের। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে সেই চেতনাটিই এখন কাজ করছে না। নিজেদের উন্নতি, দেশের উন্নয়ন, পৃথিবীর বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেশ এগিয়ে গেলেও আমাদের মাঝে কোথাও যেন একটা দূরত্ব আছে। কিন্তু আমদের মানবিকতা প্রয়োজন, সেখান থেকে দূরে সরে গেলে চলবে না। একত্রিত হওয়া, মানবিকতার বোধ ছাড়া শুধু দেশ বা পৃথিবী নয়, নিজের উন্নয়নও সম্ভব নয়।
মানুষের মধ্যে ঐক্যবোধ পচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে খণ্ডিত হয়েছে উল্লেখ করে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তার আদর্শ, দর্শন, সবকিছুকেই হত্যা করা হয়েছে। এরপর থেকে একাত্তরে বাঙালি যেমন প্রতিদিন এগিয়ে যেত, সেই একসাথে এগিয়ে যাওয়ার ধারাটি আর নেই। বিশেষ করে আমাদের প্রজন্মের মাঝে নেই। কিন্তু একাত্তরের সঠিক ইতিহাসটা এখন আমাদের তরুণ প্রজন্ম জানে। একাত্তরের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ স্মরণ করে, সেই ধারায় আমাদের প্রতিদিন এগিয়ে যাওয়া উচিত। তাহলেই দেশ আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২০
এইচএমএস/এইচজে