ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছিলেন জেলে, এখন নৌকা আর জলে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০
ছিলেন জেলে, এখন নৌকা আর জলে বৌঠা হাতে কুশিয়ারার পাড়ে জমির উদ্দিন। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: কপালে অনেকগুলো ভাঁজ! যেনো একটা একটা করে গুনে ফেলা যায়। তামাটে কপালের সেই দাগগুলো ছুঁয়ে আজ কেবল ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবনের তাচ্ছিল্য। একপা-দু’পা করে সামনের দিকে এগোলেও মুক্তি নেই। নেই স্বচ্ছলতা।

নাম তার জমির উদ্দিন। ছিলেন কুশিয়ারার জেলে।

দিনের একটা সময়ে মাছ ধরতেন। তারপর সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে ভালোই চলে যাচ্ছিলো সংসার। তবে আজ আর তার পৈত্রিক পেশাটি আকড়ে ধরে নেই। সেটা বিনষ্ট করে দিয়েছে স্থানীয় বালুখেকোরা।

ছিলেন জেলে; তবে এখন নৌকা আর জলের মাঝেই কাটে তার ক্লান্ত সময়। ধীরস্থিরে নৌকা যখন সামনের দিকে এগিয়ে যায় তখন ঝিলমিল করে উঠে সকালের সূর্যালোক।   

বড় ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবন তার। পেশা বদল করেও মিলছে না সুখ-স্বস্তি। তবে পেশা বদলটা নিজের ইচ্ছেতে নয়; পরিস্থিতির চাপে। প্রভাবশালীদের দাপট আর দৌরাত্ম্যে পৈত্রিক পেশা মাছ ধরতে তাদের তীব্র নিষেধ। তাহলে কী করে চলবে সংসার? কীভাবে চলবে জীবন আর জীবিকার চাকা?কুশিয়ারা নদী।  এ নদীর মাঝি আজ জমির উদ্দিন।  ছবি: বাংলানিউজকুশিয়ারা নদীর সঙ্গে তার মধুর সম্পর্ক শৈশব থেকে। এ নদীর কোলেই তার বড় হয়ে ওঠা। কাদা-বালু ছোড়াছুড়ি করতে করতে কখন যে বয়স বেড়ে গেছে সেটা বুঝতে পারেননি জমির উদ্দিন। এখন তার বয়স সত্তরের ওপরে।

বিকেল তখন নিজের আলোটুকু নিভিয়ে সন্ধ্যার গহ্বরে প্রবেশের অপেক্ষায়। চারদিকের আলো কমে এসেছে। পাশে নীরবে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারার শরীর থেকে তখন ধীর পায়ে এগিয়ে আসছেন এক বয়োবৃদ্ধ। তামাটে মুখের শুভ্রদাড়িগুলো নিভে যাওয়ার আলোর মাঝে তীব্রতা ছড়িয়েছে যেন।

মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার মনুর মুখ ইউনিয়ন। এখানেই অবস্থিত বাদরপুর (বাহাদুরপুর) গ্রাম। শেষ বিকেলে গন্তব্যের দিকে ধীরে ছুটে চলা জমির উদ্দিনের গতি এক সময় থামে।

সম্প্রতি কথা প্রসঙ্গে কুশিয়ারা নদী সম্পর্কে তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরি (ধরে)  অনো (এখানে) প্রতিদিন বালু তোলা হরো (হচ্ছে)। ইটা (এটা) কেউ বন্ধ করতে পারে না।

‘আগে তো আমি জাল দিয়া কুশিয়ারাত মাছ ধরতাম। এখন আর আমারে মাছ ধরতে দেয় না। তাড়াই (তাড়িয়ে) দেয়। এখন আমি কুশিয়ারাত খেয়া দেই। ইতা (এটি) কিতার লাগি যে করে বুঝতাম পারি না। শুধু আমারে নায় (না)। আমরা বাদরপুর গ্রামের আরো জেলেরে তারা মাছ ধরতে দেয় না। কইন ছাইন (বলেন দেখি) স্যার, আমরার (আমাদের) দোষ কিতা (কি)?’

বৈবাহিক জীবনে এক মেয়ে এবং দু’ছেলের বাবা তিনি। বড় মেয়ের নাম রাহেলা বিবি। তার সাত বছরের একমেয়ে রয়েছে। অপর দু’ছেলের নাম কাইয়িদ এবং বাবুল। স্ত্রী রফি বেগমকে নিয়ে দিন আনা-দিন খাওয়ার মতন অবস্থা তার।

দৈনিক দুই-আড়াইশ’ টাকায় আয়। প্রতিদিন সকাল সাতটা-আটটা থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীতে খেয়া বেয়ে যান জমির উদ্দিন।

মাঝি জমির উদ্দিন প্রসঙ্গে বাদরপুরের এলাকাবাসী আনোয়ার বলেন, সাদ্দামের যুদ্ধের সময় তিনি কুয়েতের শ্রমিক ছিলেন। বর্তমানে তার অবস্থা খুবই করুণ। বালুখেকোরা জমির উদ্দিনের মতো অনেক জেলের জীবন বিপন্ন করে তুলেছেন। নদীতে মাছ ধরতে না পারায় বিকল্প পেশায় এসেও তারা সুবিধা করতে পারছে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।