ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৪৮ বছর পর বাবাকে ফিরে পেলেন সন্তানরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
৪৮ বছর পর বাবাকে ফিরে পেলেন সন্তানরা

সিলেট: অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ৪৮ বছর পর হারিয়ে যাওয়া বাবাকে ফিরে পেলেন সন্তানরা। ঘটনাটি সিলেটের বিয়ানীবাজারের।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। হারিয়ে যাওয়া সেই হাবিবুর রহমানকে ঘিরে সন্তান-সন্ততি ও নাতি-নাতনিদের চোখে ছিল আনন্দাশ্রু।

আর তা সম্ভব হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে।
 
এখন সিলেট নগরের অভিজাত হাসপাতাল আল হারামাইনে সন্তানদের সেবায় রয়েছেন এ বৃদ্ধ। সন্তানরাও তার বৃত্তের কোঠায়।

হারিয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমানের ছেলে জালাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বাবা হারিয়ে যাওয়ার সময় আমরা বিয়ানীবাজারের বেজগ্রামে থাকতাম। এখন বাড়ি বিয়ানীবাজার পৌরসভার কবসায়। মুক্তিযোদ্ধের পরবর্তী বছরে বাবা ব্যবসার উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। স্বজনরাও তাকে খুঁজেছেন। কিন্তু কোথাও তার হদিস মিলেনি।

তিনি বলেন, বাবার স্মৃতি লালন করেই মা মারা গেছেন ২০০০ সালে। বাবাকে ফিরে পাওয়ার ঘটনা অবিশ্বাস্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, সন্তানদের তাদের দাদা হারিয়ে যাওয়ার কাহিনী শুনিয়েছি।

হারিয়ে যাওয়ার সময় ৪০ দিনের রেখে যাওয়া ছোট ছেলের সংসারেও হাবিবুর রহমানের দুই নাতি। বড়, মেঝো ছেলেদের ঘরেও নাতি-নাতনি রয়েছে। নাতি-নাতনি ও নাতবৌরাও দাদা হারিয়ে যাওয়ার কাহিনী শুনেছেন। তাইতো হাবিবুর রহমানের নাতবৌ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে দাদা শ্বশুরকে নিয়ে শোনা গল্পের কথা মনে করেন এবং ভিডিওচিত্রটি শ্বশুরসহ পরিবারের সদস্যদের দেখান। এরপর তারা ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে হাবিবুর রহমানকে শনাক্ত করেন।
হাসপাতালে ভর্তি হারিয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমান (ইনসেটে নাতিরা), ছবি: বাংলানিউজহাসপাতাল সূত্র জানায়, মৌলভীবাজারের হযরত শাহব উদ্দিনের মাজারে থাকাতেন হাবিবুর রহমান। সেই মাজারেই পরিচয় জেলার রায়শ্রী গ্রামের রাজিয়া বেগমের। মাজার ভক্ত রাজিয়া সেই থেকেই হাবিবুর রহমানের সেবা ও দেখাশুনা করে আসছিলেন। এরআগেও তিনি বিভিন্ন মাজারে ঘুমাতেন। গত এক যুগ থেকে বিছানায় পড়েছিলেন তিনি। মাসখানেক আগে খাট থেকে পড়ে তার ডান হাতের ভেঙ্গে গেলে তাঁকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন রাজিয়া। সপ্তাহদিন আগে ভাঙ্গা হাতে ইনফেকশন দেখা দিলে চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
 
এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুদিন আগে ভাঙ্গা হাতে অস্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু অর্থ ও ওষুধ পথ্যের যোগান না থাকায় অস্ত্রপচার হয়নি। ঘটনাটি হাবিবুর রহমান পাশের শয্যার একজনকে শেয়ার করেন। ওই ব্যক্তি হাবিবুর রহমানের সামগ্রিক বিষয় জানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করে সাহায্যর জন্য আবেদন করেন। এ ভিডিও দেখেন আমেরিকা প্রবাসী হাবিবুর রহমানের বড় ছেলের বউ। এরপর তিনি পরিবারের সদস্যদের দেখালে পরিবারের সদস্য অনুমান করেন তিনিই হারিয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমান। তবে হাবিবুর রহমান শুধু স্ত্রী জয়গুন নেছার নাম বলতে পারেন।
 
পরিবারের সদস্যরা তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বর্তমানে তিনি সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। এখন সন্তান ও নাতিপুতিরা তাকে ঘিরে আছেন হাসপাতালে। হাবিবুর রহমানকে ফিরে পাওয়ায় পরিবারটিতে যেনো আরেক ‘নবজাতকের’ আবির্ভাব হয়েছে। আর তাকে ঘিরেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এখন বিরাজ করছে আনন্দ উৎসব।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২০
এনইউ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।