ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

দুর্বৃত্তের হাতে দেশ ছেড়ে না দেওয়ার আহ্বান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
দুর্বৃত্তের হাতে দেশ ছেড়ে না দেওয়ার আহ্বান তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কনভেনশনে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

ঢাকা: দুর্বৃত্তের হাতে দেশ ছেড়ে না‌ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। 

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কনভেনশনে তিনি এ আহ্বান জানান।

অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমরা এখানে উপস্থিত সবাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ।

আমরা নিজেরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি এই দেশের প্রতি, দেশের মাটি-প্রাণ-প্রকৃতি এবং মানুষের প্রতি আমাদের নৈতিক, সাংবিধানিক ও মানবিক দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব থেকেই স্পষ্ট করে সুকান্তের ভাষায় বলতে চাই, ‘বাংলার মাটি দুর্জয়ের ঘাঁটি, বুঝে নিক দুর্বৃত্ত। ’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সুলতানা কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গিয়ে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে, সেখান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে কথাগুলো তিনি বলেন সেগুলো দেশের মানুষের সঙ্গে বলেন না কেন? দেশের মানুষের কথা শুনে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না কেন? প্রধানমন্ত্রী আরও বলছেন, পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে না পারলে এসডিজি বাস্তবায়নের গতি কমে যাবে।  যারা সুন্দরবন ধ্বংস করছে তাদের কাছে আমাদের আবেদন, তোমরা সুন্দরবন ধ্বংস করো না, তোমরা আমাদের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করো না।

তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ। পরিচালনা করেন যৌথভাবে রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং লুনা নূর।

কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, খালেকুজ্জামান, টিপু বিশ্বাস, সাইফুল হক, মোশারফ হোসেন নান্নু, জোনায়েদ সাকি, ইকবাল কবির জাহিদ, মোশরেফা মিশু প্রমুখ।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, সুন্দরবন শুধুমাত্র আমাদের ঐতিহ্য বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ নয়। সুন্দরবন আমাদের রক্ষাকবচ। সুন্দরবনের সঙ্গে আমাদের বাঁচা-মরার প্রশ্ন জড়িত। সুন্দরবন ও আমাজন বন এই দু’টির মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তাদের বিপন্ন দশার মধ্যেও যথেষ্ট মিল রয়েছে। আমাজনে আগুন জ্বলছে, অন্যদিকে সুন্দরবন ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে। যারা উন্নয়নের নামে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করছে, তারাই সুন্দরবন ও আমাজন ধ্বংস করছে। প্রকৃতি আজ এতো বেশি বিপন্ন যা ইতোপূর্বে কখনো দেখা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাদ আজ ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়েছে। পুঁজিবাদ দেশ এদেশ লুণ্ঠন করছে। পুঁজিবাদ আজকে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করছে মানুষকে নিপীড়ন করার জন্য। পৃথিবীর দেশে দেশে নিকৃষ্টতম মানুষেরা আজ রাষ্ট্রব্যবস্থা শাসন করছে। আমাদের সম্পদ বারবার লুণ্ঠন করা হয়েছে। দিল্লি-লন্ডন-পিন্ডি আমাদের লুণ্ঠন করেছে। এখন দেশেরই মানুষ আমাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিভিন্ন দেশে পাচার করছে। আমাদের মূল লড়াইটা সামাজিক বিপ্লবের লড়াই, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, পুঁজিবাদ বিশ্ব থেকে বিতাড়িত করতে না পারলে আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। পুঁজিবাদের কাছে আমাদের প্রাণ-প্রকৃতি নিরাপদ নয়।

সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, দেশের মধ্যে নদী বিনাশী, প্রকৃতি বিনাশী প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মধ্যে আরও বেশি এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে ‌। উপকূলজুড়ে কক্সবাজার থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত ২২টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আয়োজন করা হচ্ছে। ভারত-চীন-জাপানের পরিত্যক্ত কয়লা দিয়ে উপকূলজুড়ে ভয়ঙ্কর বিষাক্ত পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সম্পন্ন হলে জলবায়ু উদ্বাস্তু সাথে যোগ হবে উন্নয়ন উদ্বাস্তু।

তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির জাতীয় কনভেনশনে সারাদেশের ৬৪টি জেলার পাঁচশতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।

বিকেলে জাতীয় কনভেনশন শেষে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে নেতাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘন্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
আরকেআর/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।