ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাঙামাটিতে অবৈধ অটোরিকশার ছড়াছড়ি, দেখার কেউ নেই!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
রাঙামাটিতে অবৈধ অটোরিকশার ছড়াছড়ি, দেখার কেউ নেই! অবৈধ অটোরিকশার ছড়াছড়ি

রাঙামাটি: রাঙামাটি শহরে এখন অবৈধ অটোরিকশার ছড়াছড়ি। স্থানীয় প্রশাসন, অটোরিকশা চালক সমিতিসহ বিষয়টি নিয়ে নেই কারো মাথাব্যথা। যেন দেখার কেউ নেই!

স্বাধীনতা-পরবর্তী রাঙামাটি শহরের সড়কগুলোর পরিধি কিছুটা বাড়ানো হলেও যে হারে অটোরিকশাসহ অন্য যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে তার তুলনায় সড়কের পরিধি বাড়েনি। সেজন্য যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ শহরের বাসিন্দাদের।

রাঙামাটি শহরে বসবাসকারী যাত্রী মনু মারমা বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটি শহরটিকে পর্যটকবান্ধব শহর বলা চলে। এখানে অনেকগুলো অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করছে। কোনো দুর্ঘটনা হলে অটোরিকশার নম্বর না থাকায় শনাক্ত করাও যাবে না। যান চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা দেখতে পাচ্ছি না। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে হলে জরুরি ভিত্তিতে অবৈধ অটোরিকশাগুলোতে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি অটোরিকশা চালক সমিতির একাধিক নেতা এবং চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরে বর্তমানে ৬৪০টির মতো বৈধ অটোরিকশা চলাচল করছে। চলতি বছরের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ রোর্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাঙামাটি সার্কেলের পক্ষ থেকে অনিবন্ধিত অটোরিকশাকে নিবন্ধনের জন্য ৩০ আগস্ট সময় বেঁধে দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন চালক সমিতি ২৫০টির মতো অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করে। বর্তমানে আবেদন করা এসব অটোরিকশাগুলোই শহর রুটে চলাচল করছে।

এদিকে রাঙামাটি সিরিয়ালের বাইরে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি সিরিয়ালের অনেকগুলো অটোরিকশা রাঙামাটি শহরে রুটপাস ছাড়াই অবৈধভাবে চলাচল করছে। যেখানে-সেখানে করা হচ্ছে পার্কিং। ফলে শহরটিতে তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। কিন্তু এ ব্যাপারে পুলিশকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছেনা।

রাঙামাটি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরেশ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, বিআরটিএ রাঙামাটি সার্কেল গত ৬ আগস্ট এক নোটিশের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশাগুলো রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। আর এ সময়ের মধ্যে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুমানিক ২৫০টির মতো অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।  

প্রায় আড়াইমাস পার হলেও বিআরটিএর পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত পরবর্তী কার্যক্রম দেখেননি বলে অভিযোগও করেন তিনি।

অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য কেন বাড়াচ্ছেন এবং কীভাবে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সমিতির এক হাজার চালক সদস্য রয়েছেন। যাদের লাইসেন্স রয়েছে তাদের আমরা সদস্য করি। প্রতি জেলায় ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের নিয়ম মেনে কেউ যদি সদস্য হতে আবেদন করেন, আমাদের তাদের নিতে হয়।

অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের এ নেতা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমাদের সমিতির অটোরিকশা ছাড়াও রুট পারমিটবিহীন চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান সিরিয়াল দেওয়া আরও ২শ’র কাছাকাছি অবৈধ অটোরিকশা রাঙামাটি শহরে চলাচল করছে। এ ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে ট্রাফিক বিভাগের প্রধানকে অবহিত করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।

এছাড়া বিআরটিএ কর্তৃক দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে কোনো সভা না করায় আমরা আমাদের অভিযোগগুলো যথাযথভাবে উত্থাপন করতে পারছি না- বলেন তিনি।

রাঙামাটি পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নজরে রয়েছে। এরই মধ্যে আমরা অনেকগুলো রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশার বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নিয়েছি। মূলত সমস্যা হলো- যেগুলোকে রেজিস্ট্রেশবিহীন অটোরিকশা বলা হচ্ছে, সেগুলো রেজিস্ট্রেশন পেতে বিআরটিএ বরাবর আবেদন করেছে। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সেগুলো এখনো রেজিস্ট্রেশন পায়নি।

ইসমাইল হোসেন আরও বলেন, রাঙামাটিতে যাত্রীদের চলাচলের জন্য বিকল্প কোনো যান না থাকায় অটোরিকশার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাইলেও মানবিক কারণে সবগুলো অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ চালক সমিতির পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যাবেন। যে কারণে আমাদের অভিযান কিছু দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাইরে থেকে আসা অটোরিকশাগুলো পর্যটক নিয়ে রাঙামাটি শহরে প্রবেশ করে। এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে বাইরে থেকে আসা এসব অটোরিকশা স্থানীয় যাত্রী বহন করে ভাড়ায় চলতে পারবে না। যদি এ রুটে ভাড়ায় চালানোর চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিআরটিএ রাঙামাটি সার্কেলের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ২৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভার মাধ্যমে আবেদন করা এসব অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে কি-না ব্যাপারটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রেজিস্ট্রেশনের জন্য কয়টি আবেদন জমা পড়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৮৮৪টি আবেদন জমা পড়েছে। তবে আবেদনগুলো এখনো যাচাই-বাচাই করা হয়নি। ২৫ নভেম্বর সভার পর বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দুর্ঘটনার সময় অটোরিকশাগুলো শনাক্ত করতে আগে বডির পেছনে নম্বরগুলো বড় করে লেখা থাকলেও এখন বেশিরভাগ অটোরিকশায় নম্বর দেওয়া নেই- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আইনে স্পষ্ট বলা রয়েছে, প্রতিটি অটোরিকশার বডির পেছনে তাদের নম্বরগুলো বড় করে লেখা থাকতে হবে। তবে যেসব অটোরিকশার বডির পেছনে নম্বর নেই, সেগুলো বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটি জেলা বড় হলেও শহরটি অনেক ছোট। এ ছোট্ট শহরে যে পরিমাণ রেজিস্ট্রেশনবিহীন অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করছে, তার কারণে সড়কে যেকোনো মূহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেখানে বৈধ অটোরিকশা চালাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে অবৈধ অটোরিকশার দৌরাত্ম্য সড়কে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের উচিত এসব অবৈধ অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশনের মধ্যে নিয়ে আসা। তাহলে যান চলাচলে যেমন কিছুটা সুশৃঙ্খল ফিরে আসবে, তেমনি সরকারও পাবে বড় অংকের রাজস্ব।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad