ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভোলায় ১০ জেলে নিহত: যেভাবে ডুবলো ট্রলারটি

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৯
ভোলায় ১০ জেলে নিহত: যেভাবে ডুবলো ট্রলারটি আমজাদ হোসেন

ভোলা: ভোলার মেঘনায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কবলে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১০ জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছেন একজন। এ ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হয়েছে ১৩ জন। ঘটনার পর চারদিন পেরিয়ে গেছে। এখনো শোক কাটেনি নিহতের পরিবারে।

স্বজনদের কথা মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন পরিবারের মানুষ। প্রিয়জন হারিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন দরিদ্র পরিবারগুলো।

যে সাগরে মাছ শিকার করে জেলেদের জীবিকা নির্বাহ হতো সেই সাগর থেকে ফেরার পথেই প্রাণ গেল জেলেদের। তবুও জীবিকার টানে নদী সাগরে ছুটে চলেছেন জেলেরা।

সূত্র বলছে, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের জন্য মাছ ধরার বন্ধ ছিল। ৩০ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে মাছ ধরার শুরু হয়েছিল। তারপর থেকেই জেলেদের মাছ শিকারে নেমে পড়েন জেলেরা।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুরের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে ভোলার নদী ছিল উত্তাল। সেই উত্তাল নদীতে বাড়ি ফেরার পথে ট্রলার ডুবিতে চরফ্যাশনের ৪টি গ্রামের ১০ জেলের সলিল সমাধি ঘটে। ঘটনার দিন একজন এবং তিনদিন পর আরও ৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৎস্যজীবীদের কাছে এটি একটি শোকের দিন। সেদিন রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে ট্রলার ডুবির ঘটনা কীভাবে ঘটেছিল সে বিষয়ে জানা গেছে ঘটনাস্থলে থাকা জীবিত জেলে আমজাদ হোসেনের কাছ থেকে।

আমজাদ হোসেন বলেন, চরফ্যাশনের তোফায়েল মাঝির মালিকানাধীন আম্মাজান-২ নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে ১ অক্টোবর  সাগরে গিয়েছিলেন ২১ জেলে। বঙ্গোপসারের সোনার চরসহ বেশ কিছু পয়েন্টে ৮ দিন মাছ ধরার শেষ করে চাঁদপুর  গিয়ে মাছ বিক্রি করেন।

শনিবার (৯ নভেম্বর) আকাশের অবস্থা ভালো না থাকায় ট্রলারটি চরফ্যাশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসেনি, সেদিনও সকল জেলে চাঁদপুর অবস্থান করেছিল।

রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল ৮টায় দুর্যোগের দিনই চাঁদপুর থেকে চরফ্যাশনের ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা করেন আরও তিনজনসহ মোট ২৪ জেলে। সেখানকার আবহাওয়ায় বেশ ভালোই ছিল বলছেন কেউ কেউ। চাঁদপুর থেকে বাড়ি ফিরছেন সে কথাও অনেকে তাদের পরিবারকে জানিয়ে ছিল। ট্রলারটি ছাড়ার পরপরই নদীতে একটি বড় জালের সঙ্গে পেঁচিয়ে যায় ট্রলারের নিচের অংশ। এটা একটা বাধা ছিল বলা যায়, সেই জাল কেটে ফের গন্তব্যের রওনা করে ট্রলারটি। তবে, অনেক জেলে আবার আকাশের অবস্থা দেখে দুর্যোগে উপেক্ষা করে ফিরে আসতে চাননি। তারপরেও মাঝির কথা অনুযায়ী সবাই রওনা দেয়। দুই ঘণ্টা বোট ছাড়ার পর সকাল ১০টার পর থেকেই আকাশের অবস্থা খারাপ হতে শুরু হয়। ঝড়-বাতাস শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে আবহাওয়া আরও বেশি খারাপ হয়ে উঠে। ঝড় শুরু হয়, উত্তাল হয়ে উঠে নদী। ২৪ জেলে নিয়ে ট্রলারটি ভোলার ইলিশা পয়েন্টে আসতে থাকে। ২৪ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন ট্রলারের কেবিনে এবং বাকিরা বাইরে ছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঘুমিয়ে ছিল। তখন ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি উল্টে যায়।

আমজাদ হোসেন বলেন, তিনিও নিজেও কিছুটা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, হঠাৎ করেই দেখেন বোটের ভেতরে পানি ডুকেছে। তারপর কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন বাইরে ১৩ জন। পানির স্রোতে ততক্ষণে ট্রলারটি ডুবে যায়। তারপর ১৩ জন উদ্ধার হলেও ১১ জন কেবিনের ভেতরেই আটকা পড়ে যায়।

এদিকে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ২ সদস্যের তদন্ত টিম বৃহস্পতিবারও তাদের তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মৃধা মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ৩ কর্মদিবসের মধ্যে বৃহস্পতিবার ছিল ২ দিন।   আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলছে, শুক্রবার আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।