ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিসিক কাউন্সিলর শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৯
সিসিক কাউন্সিলর শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

সিলেট: সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) দাপুটে কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। করপোরেশনের ৬নং ওয়ার্ড থেকে বারবার নির্বাচিত এই কাউন্সিলর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তিনি।

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকালে তিনি প্রথমবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন।

সময়ের বদলে সরকার বদল হলেও কমেনি তার আধিপত্য। নগরের ৬নং ওয়ার্ডের বাদামবাগিচা, খাসদবির, চৌখিদেখি, পীরমহল্লার একাংশ ও হাউজিং এস্টেট পূর্বাংশকে তিনি ‘শামীম সম্রাজ্য’ বানিয়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ শোনা যায়। এ ‘সাম্রাজ্যে’ তার বিরুদ্ধে টু শব্দটি করতেও লোকে ভয় পায় বলে জানা যায়।   

সূত্র জানায়, শামীমের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, জমিদখল, গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা ও অভিযোগ রয়েছে অন্তত ২৮টি। কোনো কোনো হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়েছে। এসব মামলা থেকে জামিন নিয়ে বুক ফুলিয়ে চলছেন শামীম।

শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি দিয়ে ভুক্তভোগীরা সরকারের সর্বোচ্চ মহলে লিখিত দিয়েছেন। সূত্র বলছে, ওপর মহলের নির্দেশে অচিরেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্তে নামতে পারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী!
 
জনশ্রুতি রয়েছে, শামীম কালো টাকা ছড়িয়ে সিসিকের ৬ নং কাউন্সিলর বনে যান। প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর কলোনির লোকদের স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে প্রায় দুই হাজার পরিচয়পত্র তৈরি করেন শামীম। নিম্নবিত্তদের ভয় দেখিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনে হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুসারে ‘স্বশিক্ষিত’ ফরহাদ চৌধুরী শামীমের উত্থান ঘটে ১৯৮৮ সালে স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে। তখন ওসমানী বিমানবন্দর ছিল স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট। অবৈধ পথে আসা কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে রাতারাতি ভাগ্য বদলে যায় তার।
 
স্থানীয়রা জানান, গত ২০ বছরে তার ওয়ার্ডে ৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা থাকলেও তিনি মামলার আসামি হন না। যারা খুন হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই হতদরিদ্র পরিবারের। যে কারণে শামীমের দেন-দরবারে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় মামলার কার্যক্রম। তবে ২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল জালাল আহমদ নামের এক যুবক খুন হওয়ার পর শামীমকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন নিহতের মা ফাতেমা খাতুন।
 
সূত্র মতে, ২০০৫ সালের ২৭ জুলাই ফরহাদ চৌধুরী শামীমকে প্রধান আসামি করে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন স্থানীয় ইলাশকান্দি এলাকার সোনারা বেগম। এ নিয়ে সোনারা বেগমকে বেশ খেসারত দিতে হয়েছে। ২৮ জুলাই ওই মামলায় অবশ্য শামীমকে গ্রেফতার করা হয়।
 
ওই বছর মুক্তিযোদ্ধা শায়েস্তা মিয়ার ছেলে ফখরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। সওজের কর্মচারী হিসেবে চৌকিদেখি এলাকায় উত্তরকাছ ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন সওজের কিছু খালি জায়গায় বসবাস করে আসছিলেন শায়েস্তা মিয়া। কাউন্সিলর শামীমের নজর পড়ে সেখানে। এই মুক্তিযোদ্ধাকে উৎখাত করতে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শামীমের বাড়িতে লালিত এক যুবকই ফখরুল হত্যা মামলার মূল আসামি। কিন্তু শামীম প্রভাব খাটানোয় সুবিচার পাননি সন্তানহারা মুক্তিযোদ্ধা পিতা।
 
২০১২ সালে মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবজি ব্যবসায়ী মুহিবুর রহমানকে খুন করে শামীমের লোকজন। চুরির বিচারের পরিবর্তে শামীম গালাগালি করায় প্রতিবাদ করেন মুহিব। এরই জের ধরে তাকে হত্যার অভিযোগ ওঠে তখন।
 
২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা আরেক মামলায়ও (নং-৪৫(১০) ১৮) শামীমের নাম রয়েছে। কিন্তু কোতোয়ালি থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো (আদালতে জিআর ৪৫/১৩, ৩৬০/১২, ৩১৬/১২, ৩৬৫/১১) সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে খারিজ হয়ে গেছে।  

তবে এ বছরের ৩০ এপ্রিল এয়ারপোর্ট থানায় দায়ের করা আরেক মামলায় (নং-৭৬(৪) ১৯) প্রধান আসামি হন শামীম।  

জানা যায়, ২০০২ সালে সোনা চোরাচালানের ঘটনায় মামলা (নং-এসজি আর ২৯/০২) সিলেট সদর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন ছিল। এ মামলায় সাজা হওয়ার আগেই উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আনা হয়। অপর একটি হত্যা মামলার (দায়রা ১৭৭৭/১৭ ধারা-৩০২/৫০৬/৯২/৩৪দ:বি) চার্জশিটভূক্ত আসামি শামীম। এছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক আইনে আরও চার মামলা আদালতে বিচারাধীন।  
 
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ গ্রামের আলাউদ্দিন চৌধুরী ও রেজিয়া খানম দম্পতির ছেলে ফরহাদ চৌধুরী শামীমের বর্তমান নিবাস নগরের পশ্চিম চৌখিদেখি ‘মায়াবী’ হাউজে।  
 
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করলে ফরহাদ চৌধুরী শামীম বাংলানিউজকে বলেন, আমি কমিশনার হওয়ার পর হত্যার ঘটনাতো দূরে থাক, এলাকায় বড় কোনো দুর্ঘটনাও ঘটেনি।
 
তিনি বলেন, আমি বিএনপির রাজনীতি করি, তাই আমার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া স্বাভাবিক। অবশ্য এলাকায় একটা পক্ষ আছে, যারা সব সময় আমার পেছনে কোনো না কোনো অভিযোগ তুলবেই।
 
তিনি বলেন, আমি বিএনপি, ১/১১ ও আওয়ামী লীগের দুই বারের শাসনামলে কাউন্সিলর নির্বাচিত হই। খুনি-চাঁদাবাজ হলেতো মানুষ বিপুল ভোটে পাস করাতো না। জনগণ এলাকার উন্নয়ন ও ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য আমাকে বারবার ভোট  দিয়ে নির্বাচিত করে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
এনইউ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।