ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘বুদ্ধের বাণীতে মানুষের চিত্তকে শুদ্ধ করেছেন সত্যপ্রিয়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
‘বুদ্ধের বাণীতে মানুষের চিত্তকে শুদ্ধ করেছেন সত্যপ্রিয়’

কক্সবাজার: ‘বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের শুধু বুদ্ধের বাণী দিয়ে মানুষের চিত্তকে শুদ্ধ করেননি, তিনি ৭১'র মুক্তিযুদ্ধে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে রক্ষা করেছেন। জীবদ্দশায় তিনি মানুষের জন্য যা করেছেন, তাই আজ সর্বস্থরের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্মরণ করছেন।

বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজারে রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার প্রাঙ্গণে প্রয়াত বৌদ্ধ ধর্মীয়গুরু পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের পেটিকাবদ্ধ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং।

বীর বাহাদুর বলেন, মানুষের কল্যাণের জন্য, জীবের জন্য, ধর্মের জন্য কি করেন তিনি? আজ কর্মই তাকে এ আসনে উপনীত করেছে।

মৃত্যুর পরে এতো মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কয়জনে পায়। হাজার হাজার মানুষ এখানে ছুটে এসেছেন শুধু তাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন এ কথা জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, শ্রদ্ধেয় গুরু ভান্তে সত্যপ্রিয় মহাথের একজন ধর্মীয় গুরুই ছিলেন না, তার মৃত্যুতে বৌদ্ধ সমাজ একজন বড় অভিভাবককে হারালো। যে শূণ্যতা কোনো দিনও পূরণ হবার নয়। এর আগে মন্ত্রী সীমা বিহারে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রয়াত বৌদ্ধ ধর্মীয়গুরু পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বৌদ্ধদের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চগুরু উপসংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন উপ-সংঘরাজ ধর্মপ্রিয় মহাথেরো ও বাংলাদেশ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব এস লোকজিৎ মহাথেরো, চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক প্রধান সত্যপ্রিয় মহাথেরর শিষ্য প্রিয়রত্ন মহাথেরো ও ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়।  

বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. শরিফ আহমেদ, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. মুজিবুর রহমান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষন বড়ুয়া প্রমুখ।

সত্যপ্রিয় মহাথের চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (৩ আক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সত্যপ্রিয় মহাথেরের প্রকৃত নাম বিধু ভূষণ বড়ুয়া। প্রবীণ এ বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ২০১৫ সালে সমাজসেবায় একুশে পদক পান।

সংসার ত্যাগী সত্যপ্রিয় মহাথের ১৯৩০ সালের ১০ জুন কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা প্রয়াত হরকুমার বড়ুয়া ও মাতা প্রেমময়ী বড়ুয়া।

রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথের ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আরেক বৌদ্ধ মহাপুরূষ বিনয়াচার্য আর্যবংশ মহাথেরের কাছে প্রব্রজ্যা গ্রহণ (গৃহজীবন ত্যাগ) করে সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হন। এর ৬ মাস পরই পবিত্র মাঘী পূর্ণিমার দিনে তিনি উপ-সম্পদা (ভিক্ষুত্ব) গ্রহণ করেন।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সত্যপ্রিয় মহাথের ১৯৫৫ সালে মায়ানমারের ধর্মদূত পালি কলেজে অগ্রমহাপন্ডিত উ. বিশুদ্ধায়ু মহাথের ও প্রজ্ঞালোক মহাথেরর কাছে পালি ভাষা ও বিনয় শিক্ষা লাভ করেন। এ মহান পূণ্যপুরুষ পৃথিবীর বহু ভাষায় পারদর্শী। বুদ্ধ ধর্মের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ পালি ভাষার মূল ত্রিপিটকের বিভিন্ন অধ্যায় থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেন সত্যপ্রিয় মহাথের।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও অসাধারণ সাহসী ভূমিকা রাখেন শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথের। যুদ্ধ-চলাকালীন তিনি এলাকার সহস্রাধিক অসহায় ও নির্যাতিন মানুষকে ঐতিহ্যপূর্ণ  পুরাতন কাঠের সীমা বিহারে আশ্রয় দেন। এ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বাকবিকণ্ডা হয় এ বৌদ্ধ ভিক্ষুর।

দেশের সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায় ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে কক্সবাজারে রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়ার লাখেরায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার পর গৌতম বুদ্ধের সাম্য-মৈত্রী ও অহিংসার বাণীকে সর্বময় ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সত্যপ্রিয় মহাথেরের। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃস্থাপনসহ বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে অন্যন্য ভূমিকা পালন করছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৯
এসবি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।