ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোনে ক্যাসিনো থাকবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
‘এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোনে ক্যাসিনো থাকবে’ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হকসহ অন্যরা

ঢাকা: দেশের পর্যটন বিকাশে একটি মাস্টার প্ল্যান এবং বিদেশিদের জন্য এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

আর এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোনগুলোতে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ক্যাসিনোর সুবিধা থাকবে বলে জানিয়েছেন এই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক।

বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পর্যটন সচিব বলেন, আমরা একক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোনই করছি।

বিদেশি পর্যটকদের জন্য কী করা হচ্ছে- প্রশ্নে সচিব বলেন, আপনারা যে কথা বলেছেন ঠিকই আছে, বাইরের পর্যটক কেন আসবে? আমাদের এখানে যখন সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হয়, বিদেশি যারা আসেন তারা কিন্তু চলে যান সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া না হয় থাইল্যান্ড। কেন চলে যান, সেখানে তাদের অ্যামুজমেন্টের (আনন্দ-বিনোদন) ব্যবস্থা আছে, বাংলাদেশে নেই।

‘যে ক্যাসিনো নিয়ে আজকে অনেক কথা হচ্ছে, ক্যাসিনো কিন্তু বাংলাদেশে বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য দরকার। মালয়েশিয়াতে কিন্তু ক্যাসিনো আছে, সেখানে কিন্তু পাসপোর্ট দিয়ে ক্যাসিনোতে ঢুকতে হয়। আমরাতো তাদের জন্য এ ধরনের কোনো সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছি না। আমরা যেখানে এক্সক্লুসিভ ট্র্যরিস্ট জোন করবো, সেখানে বিদেশিদের জন্য এসব সুযোগ-সুবিধাগুলো থাকবে’।

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে চাইলে সচিব বলেন, ‘কথাটা শোনেন। এখন যে সরকারের উদ্যোগ (ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান) আমি তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি না। সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমি যেটা বলতে চাইছি, বিদেশিদের জন্য, যেখানে শুধু পাসপোর্ট দিয়েই তারা যাবে, আমি একথাটাই বলতে চাইছি’।

ক্যসিনোতো অবৈধ ব্যবসা- এ বিষয়ে সচিব বলেন, আমরা পর্যটকদের জন্য এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে চাই। যেখানে তারা পাসপোর্ট দিয়ে যাবে। বর্তমানে ঢাকায় ক্যাসিনোতে যে অভিযানগুলো চলছে এগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আমি মনে করি সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিদেশিদের জন্য আমরা ব্যাংককের মতো নাইট ক্লাব-ক্যাসিনোর দিকে যাবো কিনা- প্রশ্নে সচিব বলেন, আমি যেটা মনে করি বিদেশি পর্যটকদের জন্য যদি আমরা কোনো এক্সক্লুসিভ জোন করি, পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশে যেসব সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান আছে বাংলাদেশেও সেই ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে আমারতো মনে হয় কোনো অসুবিধা নেই। হতেই পারে।

এক সাংবাদিক বলেন, মালয়েশিয়াতে এমন দেখা গেছে, তখন সচিব বলেন, আমিতো সে কথাটাই বলছি।

সচিব বলেন, আমাদের কিন্তু পর্যটন স্পট আছে, আকর্ষণ আছে। সেগুলোকে কিন্তু আমরা পণ্য হিসাবে তুলে ধরতে পারিনি। আমাদের সুন্দরবন আছে, সুন্দরবন কিন্তু পৃথিবীতে দ্বিতীয়টা নেই। কিন্তু আমরা কি পর্যটকদের জন্য সেখানে কোনো ব্যবস্থা করতে পেরেছি, পারিনি। সেই কারণেই আমরা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় স্পট বাছাই করে নিয়েছি; আমরা বিদেশি পর্যটকদের জন্য এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন সেখানে আমরা করবো। ঠিক একইভাবে, কক্সবাজারে আমরা প্রায় ৯৫ একর জায়গা নিয়েছি। আমরা সেখানে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করবো। তিন পার্বত্য জেলাকে নিয়ে স্ট্যাডি করছি, সেখানে পর্যটকদের জন্য কী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়- আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি।

সুন্দরবনের পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে সচিব বলেন, আমরা পরিবেশ নষ্ট করতে চাই না। আমরা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কাজগুলো করতে চাই।

পর্যটন বিকাশে মাস্টার প্ল্যান

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সারাদেশে একটা মাস্টার প্ল্যান প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পথে। সেই মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী সারাদেশে যতো দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করবো।

বিদেশিদের আকৃষ্ট করার জন্য অনবরত যোগাযোগ করছি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারাও আসছে, এ ব্যাপারে প্রাইভেট ট্যুর অপারেটররাও কাজ করছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কর্মকর্তারা বসে পদক্ষেপ নেবো। সেই পদক্ষেপের কারণে আমাদের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে, সফল হবে, বিদেশি পর্যটকরা আকৃষ্ট হবে এবং দেশের লাখ লাখ পর্যটক যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারাও দেশের প্রতি আকৃষ্ট হবেন এবং পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে একটা বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।

সত্যিকার অর্থে পর্যটন নিয়ে আমাদের কোনো কর্মপরিকল্পনা ছিল না জানিয়ে সচিব বলেন, আমরা এখন পর্যটনে একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করার জন্য এটা চূড়ান্ত করে ফেলেছি। এ মাসের মধ্যে আমরা ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে দেবো।

পর্যটন দিবসের কর্মসূচি নিয়ে সচিব বলেন, এবার আমরা ৬৪ জেলাতেই কর্মসূচি নিয়েছি। কিন্তু যেখানে পর্যটকেরা যাচ্ছেন সেখানকার মানুষদেরকেও সহনশীল আচরণ করতে হবে, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তারাও সাহায্য-সহযোগিতা চায়।

মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাডভান্স প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন সিস্টেম চালু করা হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, আশা করছি ২-৩ মাসের ভেতর এটা বাস্তবায়ন করবো। তাহলে বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরের মাধ্যমে কতজন দেশি পর্যটক আসছেন বা যাচ্ছেন তার চূড়ান্ত পরিসংখ্যান দিতে পারবো। আর গতবছরের তুলনায় এবছর পর্যটক আসার সংখ্যা বেড়েছে দেড় থেকে দুই লাখ।

সচিব আরো জানান, বেসরকারি ট্যুর অপারেটরদের জন্য কোনো আইন এবং ট্যুর গাইডদের জন্য কোনো নীতিমালা নেই, আমরা এগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি নভেম্বরের ভেতরে গেজেট নোটিফিকেশন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।