ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

ধীরে চলছে রাবি, শিগগির জাবির তফসিল

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৯
ধীরে চলছে রাবি, শিগগির জাবির তফসিল বাম থেকে রাকসু ভবন ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ভবন

ঢাকা: দীর্ঘ আলোচনা, আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠান গড়ানোর পর দেশের অন্য বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচনমুখী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাদে স্বায়ত্বশাসিত অপর তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শিগগিরই তফশিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের জন্য সংলাপ শুরু হলেও ধীরে চলো নীতিতে এগোচ্ছে প্রশাসন।

তবে ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জোরালো দাবি উঠেছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের। ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বাংলানিউজকে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের পর প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে যে আশা ছিল তা হতাশাজনক।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র জাহাঙ্গীরনগর ছাড়া রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্রিয়া লোক দেখানো। জাহাঙ্গীরনগরের বিষয়ে আমরা আশাবাদী যে সেখানে কমিশন গঠন করা হয়েছে।

বাংলানিউজের রাবি করেসপন্ডেন্ট মঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, ডাকসু নির্বাচনের পর রাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) চলতি বছরেই নির্বাচনের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার পাশাপাশি কবে নাগাদ নির্বাচন দেওয়া হবে এ নিয়ে সুস্পষ্ট করে কিছুই জানানো হয়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে নির্বাচনের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। রাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে এখন ‘ধোঁয়াশা’ কাজ করছে।

রাকসু নির্বাচন দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে, তাতে এ বছরে রাকসু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ফেডারেশন রাবি শাখার সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় রাকসু সংলাপ। ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আড়াই মাস সংলাপ শেষে ৪ জুলাই হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক করে রাকসু সংলাপ কমিটি।  

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হল ও মাদার বখশ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। পর্যায়ক্রমে সবকটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপে বসার কথা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের অনুসরণে এখানে একই ধরনের নির্বাচন করতে চায় না প্রশাসন। তাছাড়া এখন নির্বাচন দিলে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের প্রার্থিতা নিয়েও সংকট তৈরি হবে। এছাড়া এখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তাই এখনই রাকসু নির্বাচন দিতে চায় না প্রশাসন। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ‘ধীরে চলার’ নীতিতে এগোতে চায়।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদ বলেন, রাকসু নির্বাচন হওয়া অত্যাধিক গুরুত্ববহ। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রস্তুতিপর্বে যা দেখছি তাতে মনে হয় না অচিরেই নির্বাচন করা সম্ভব। ভোটার কারা হতে পারবে, কারা প্রার্থী হতে পারবে, হল প্রশাসন প্রস্তুত কিনা- এখনো অনেকের জানা নাই। সকল প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী নির্বাচন হওয়া জরুরি।

প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রাকসু নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। সেক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে রাকসু নির্বাচন দিতে হবে। ডাকসুর ন্যায় এখানে যাতে কোনো ধরনের অঘটন না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ধীর গতিতে এগোনো উচিৎ।

ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, রাকসু নির্বাচন দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একক আধিপত্য কমে ‘জবাবদিহিতামূলক’ পরিবেশ তৈরি হবে। সেক্ষেত্রে প্রশাসন চাইছে রাকসু নির্বাচন না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে।

রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, রাকসু সচল করার দাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই প্রথম জানানো হয়েছিল। আমরা শিগগরি উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত রাকসু নির্বাচনের দাবি জানাবো। প্রশাসন ঠুনকো অযুহাতে কালক্ষেপণ করলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে কর্মসূচি দেওয়া হবে।

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জবাবদিহিতার ভয়ে রাকসু নির্বাচন দিতে চায় না। রাকসু হলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে ছাত্র প্রতিনিধিরা প্রশ্ন তুলবে। তাই বিভিন্ন অজুহাতে রাকসু নির্বাচন দিতে চায় না প্রশাসন।

রাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, আমারা কিছু দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো। যদি প্রশাসন নির্বাচনের জন্য দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেয় তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাবো।

যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৮৯-৯০ এর পর দীর্ঘ তিন দশক রাকসু নির্বাচন হয়নি। তাই নতুন করে নির্বাচন দিতে গেলে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে। সেক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠনগুলো চাইলে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে দ্রুত রাকসু নির্বাচন দেওয়া হবে।  

তবে কবে নাগাদ নির্বাচন দেওয়া হবে সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

এদিকে বাংলানিউজের জাবি করেসপন্ডেন্ট আবির আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর গত ৩১ জুলাই জাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু-আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’র সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয় এবং অতি দ্রুত নির্বাচন কমিশনার পূর্ণাঙ্গ করতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, দীর্ঘ দুই যুগ ধরে জাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ অচল। সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম ঘোষণা করে জাকসুর কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিবাচক রাজনীতির ধারা শুরু হবে।  

অধ্যাপক মান্নান চৌধুরীর অধীনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ছাত্রলীগের এই নেতা।

তবে নিরপেক্ষ কাউকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার না করায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সব সংগঠন।

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন পরে জাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনার হওয়া উচিৎ ছিল দল ও মত নিরপেক্ষ। তবুও আমরা আশা করছি তিনি স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে পারবেন। কিন্তু আসলে নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে সে ব্যাপারে শঙ্কা রয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মান্নান বলেন, এ সপ্তাহের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন পূর্ণাঙ্গ করা হবে। ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা না বলে তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব নয়। আমরা ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। শিগগিরই তফসিল ঘোষণা করা হবে।

জাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য কোষাধ্যক্ষ শেখ মো. মনজুরুল হককে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এরই মধ্যে একটি প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্র ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের কাছে পাঠিয়েছে কমিটি।

প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এম ফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন না। এই প্রস্তাবকে সব ছাত্র সংগঠন সাধুবাদ জানালেও আপত্তি জানিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৯
এমআইএইচ/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।