ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কর্মস্থলে ফেরার লড়াইয়ে উত্তরের মানুষ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৯
কর্মস্থলে ফেরার লড়াইয়ে উত্তরের মানুষ এভাবে মানুষ কর্মস্থল ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হচ্ছেন বগুড়া থেকে। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: ট্রাক বোঝাই মালামাল ত্রিপল দিয়ে ঢাকা। সে ট্রাকের পেছনে বসেছিলেন তিন যাত্রী। মাথার ওপর শোভা পাচ্ছিল আরও একটি ত্রিপল। দু’জনকে পরিষ্কার দেখা গেলেও আরেকজনের চেহারা অনেকটা অস্পষ্ট। অনেক কষ্টের পর ট্রাকের ওপর স্থান হয় তাদের। কর্মস্থলে ঢাকায় ফেরার লড়াইয়ে এভাবেই নেমেছেন ওরা।

শনিবার (১৭ আগস্ট) বগুড়ার কেন্দ্রীয় চারমাথা বাস টার্মিনাল, ঠনঠনিয়ায় অবস্থিত আন্তঃজেলা কোচ টার্মিনাল, বনানী, বি-ব্লকসহ বেশ কয়েকটি বাসষ্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য।

আরিফ ও সাবিনা দম্পতি ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।

ঈদের ছুটিতে প্রায় ১৮ ঘণ্টা গাড়িতে কাটিয়ে বগুড়ায় আসতে পেরেছিলেন। তারা নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার বাসিন্দা। সেখানে আজ (১৭ আগস্ট) বাস না পেয়ে বগুড়ায় এসেছেন ঢাকায় যাওয়ার জন্য। এখানে সব বাস অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেছে তাদের কাছে। ফলশ্রুতিতে ট্রাকে চড়ে ঢাকা যাচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকামুখী বাসষ্ট্যান্ডগুলোয় মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। গাড়ির জন্য এদিক-ওদিক ছুটতে দেখা যাচ্ছে তাদের। কেউ বাসের আসন পেয়েছেন কেউ আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাসের ভেতরে। আবার অনেকে জায়গা করে নিয়েছেন বাসের ছাদ বা ট্রাকে।

জানা যায়, নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধাসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা সরাসরি ঢাকার বাস না পেয়ে ভেঙে ভেঙে বগুড়ায় আসছেন। কিন্তু বগুড়ায় এসেও দেখেন বাসের চিত্র একইরকম। তবে এখানে বাসে জায়গা না পেলেও ঢাকা যাওয়ার মতো ‍উপায় আছে। এ কারণেই মূলত তারা বগুড়া আসছেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার আমিনুল ইসলাম নামের এক পোশাক শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, চাকরিটা বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ঈদে বাড়ি ফেরার আগে বেতন-বোনাস যা পেয়েছিলাম গাড়ি ভাড়া বাদে তার পুরোটাই শেষ। এখন চাকরি থাকলে বেতন মিলবে। তবেই জীবনের চাকা ঘুরবে। নইলে জীবনের চাকা থমকে যাবে। বাসের ছাদেও মানুষ।  ছবি: আরিফ জাহানপোশাক শ্রমিক বিউটি ও শারমিন বাংলানিউজকে জানান, তার দুই বোন। তাদের দু’বোনের আয়ে চলে সংসার। বাড়িতে মা-বাবা থাকেন। কিন্তু বয়সের ভারে বাবা তেমন একটা কাজ করতে পারেন না। মা’র সংসারের কাজকর্ম করতেই বেলা শেষ। চাকরিটাই তাদের সব। সুতরাং যেভাবেই হোক রোববারের (১৮ আগস্ট) আগে তাদের ঢাকা যেতেই হবে।

ফাতেম নামের আরেক পোশাক শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, যেভাবেই হোক নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে। নইলে চাকরিটা চলে যাবে। কর্তৃপক্ষ এমনটা বলেই ছুটি দিয়েছে। তাই কর্মস্থলে ফিরতে একটু ঝুঁকি নিতে তো হবেই।

সরকারি চাকরিজীবী মফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বুধবার (১৪ আগস্ট) থেকে সরকারি ছুটি শেষ। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বুধবারের ছুটি নিয়েছিলাম। রোববার (১৮ আগস্ট) অবশ্যই অফিস করতে হবে। তাই কষ্ট হলেও ঢাকা চলে যেতে হবে।

টিকিট বিক্রেতা আজিজ ও সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যেক ঈদেই ঘরে ও কর্মস্থলে ফেরার পথে বাসের সঙ্কট দেখা দেয়। মূলত মহাসড়কে যানজটের কারণে এমনটি হয়। এছাড়া উত্তরের যাত্রীরা চাহিদামতো যানবাহন না পেয়ে বগুড়ায় চলে আসেন। এ কারণে প্রত্যেক ঈদেই বগুড়ায় যাত্রীদের বাড়তি চাপ থাকে।

তবে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৯
এমবিএইচ/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad