ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ লাখ মানুষ, ৭৫ জনের মৃত্যু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৯
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ লাখ মানুষ, ৭৫ জনের মৃত্যু সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: চলমান বন্যায় দেশের ২৮ জেলায় এ পর্যন্ত মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৫ জন এবং ১৪ জেলায় ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

রোববার (২৮ জুলাই) সচিবালয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এবং মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল।
 
প্রতিমন্ত্রী এনামুর জানান, গত ১০ জুলাই উজান থেকে নেমে আসা পানি ও দেশের ভেতরে বৃষ্টিপাত বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

ক্রমান্বয়ে ২৮ জেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যা কবলিত হয়।
 
জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর।

তিনি জানান, বন্যায় সুনামগঞ্জে দুইজন, গাইবান্ধায় আটজন, শেরপুরে ১১ জন, বান্দরবানে একজন, নেত্রকোণায় একজন, লালমনিরহাটে একজন, কুড়িগ্রামে ১৪ জন, চট্টগ্রামে পাঁচজন, সিরাজগঞ্জে চারজন, জামালপুরে ২২ জন, টাঙ্গাইলে তিনজন, ফরিদপুরে একজন, মাদারীপুরে একজন ও মানিকগঞ্জে একজন মারা গেছেন।

তিনি আরও জানান, পানিতে ঢুবে ৬৭ জন ও নৌকা ডুবে আট জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৫৬ জন শিশু, পুরুষ ১৩ জন ও নারী ছয়জন।
 
প্রতিমন্ত্রী জানান, বন্যা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। তবে বন্যা দীর্ঘায়িত হবে না। পানি দু’এক দিনের মধ্যে কমে যাবে। বন্যা দীর্ঘ মেয়াদি হলেও ত্রাণের কোনো সমস্যা হবে না।
 
ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ২৭ জুলাই পর্যন্ত জিআর (গ্র্যান্ট রিলিফ) চাল মোট ২৭ হাজার ৩৫০ টন, জিআর টাকা (নগদ) বরাদ্দ চার কোটি ৬১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জামালপুরে নৌকা কেনার জন্য আরও সাড়ে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য তিন হাজার ৯০০ বান্ডিল ঢেউটিন, ঘর নির্মাণের জন্য এক কোটি ১৭ লাখ টাকা, শুকনো খাবারের প্যাকেট এক লাখ ১৩ হাজার কার্টন, আট হাজার ৫০০ সেট তাবু, শিশু খাদ্য কেনার জন্য ১৮ লাখ টাকা, গো-খাদ্য কেনার জন্য ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আমরা বন্যা মোকাবিলায় সব সময় সতর্ক আছি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি মুহূর্তে বন্যার্তদের খোঁজ-খবর রাখছি। এবার সমন্বিত কাজের ফলে বন্যার ক্ষতি অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি এবং সফলভাবে বন্যা মোকাবিলা করতে পেরেছি।
 
তিনি বলেন, এবার মানুষ দাবি করেছেন আমরা ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই। আমরা বারবার বন্যা কবলিত হতে চাই না। আমরা চাই দুর্যোগ সহনীয় বাংলাদেশ। সেই ভিত্তিতে আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি, আমরা জনগণের দাবি পৌঁছে দিয়েছি।

বন্যা সহনীয় বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জানান, গত ২১ জুলাই আমরা জাপানের জাইকাকে প্রস্তাব দিয়েছি- আমাদের বড় বড় নদীগুলোর দু’পাড়ে বাঁধ দিয়ে বন্যা সহনীয় করার জন্য। জাপান আমাদের কথা দিয়েছে, এ সপ্তাহে জাপানের সঙ্গে তৃতীয় দফা মিটিং হবে। সেই মিটিংয়ে আমরা সেই কাজগুলোর করার জন্য একটা চুক্তি করতে পারবো।

সংবাদ সম্মেলনে সচিব শাহ্ কামাল জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৩০ হাজার ৩৮৩ জন এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৩২ জন।

তিনি জানান, বন্যায় পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭৮ ঘরবাড়ি, এক লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৩ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৫টি গবাদিপশু, ২২ হাজার ৩৩৯টি হাঁস-মুরগি মারা গেছে। এছাড়া চার হাজার ৯৩৯টি শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সাত হাজার ২৭ কিলোমিটার সড়ক, ২৯৭টি ব্রিজ বা কালভার্ট, ৪৫৯ কিলোমিটার বাঁধ, ৬০ হাজার ২৮৯টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
 
সরকারের ত্রাণ পর্যাপ্ত কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে সচিব শাহ কামাল বলেন, বন্যা এলে সবাই এফেক্টেড হবে। দেশের ২২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। ওই ২২ শতাংশ ত্রাণ পেতে পারে। কোথায় ত্রাণ পাচ্ছে না- তা সুনির্দিষ্টভাবে বললে আমরা সেখানে ব্যবস্থা নেবো।
 
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত একজন সাংবাদিক জামালপুরের একটি উপজেলায় ত্রাণ না পৌঁছানোর তথ্য জানালে তাৎক্ষণিক ৫০ মেট্রিক টন ত্রাণ বরাদ্দ দেন সচিব শাহ কামাল।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৯
এমআইএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।