ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শাহজালাল (র.) এর ওরস, ৭শ’ বছরের ইতিহাস

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০১ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
শাহজালাল (র.) এর ওরস, ৭শ’ বছরের ইতিহাস

সিলেট: ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দ। ৩৬০ জন আউলিয়াকে (সফরসঙ্গী) নিয়ে গৌড় রাজ্যে এসে অত্যাচারী রাজা গৌড় গোবিন্দের পতন ঘটান হযরত শাহজালাল (র.)। এরপর গৌড় রাজ্যের নাম রাখা হয় শ্রীহট্ট। ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জিলকদ ইন্তেকাল করেন হযরত শাহজালাল (র.)। এরপর তিনি যে টিলায় বসবাস করতেন, সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।

প্রায় ৭শ’ বছর আগে ৩৬০ জন আউলিয়ার মধ্যে অন্যতম ওলি সৈয়দ ওমর সমরখন্দ (রহ.) তার জীবদ্দশায় হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজারে প্রথম গিলাফ ছড়িয়ে ওরস মোবারক পালন করেন। সেই থেকেই শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে প্রতি বছরের ১৯ ও ২০ জিলকদ (২৩ ও ২৪ জুলাই) ওরস মোবারক পালন হয়ে আসছে।

হযরত শাহজালাল (র.) মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামুন মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, পূর্বের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এবারও এ দু’দিন শাহজালাল (র.) মাজারে ওরস পালিত হবে।

তিনি বলেন, প্রতি বছরই প্রথমে হযরত ওমর সমরখন্দের (র.) মাজারের খাদেমের দেওয়া গিলাফ এ মাজারে ছড়ানো হয়। এরপর রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ গিলাফ ছড়ান।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) গিলাফ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে ওরস শুরু হলেও শিরনির জন্য গরু জবাই করা হয় সোমবার (২২ জুলাই) রাত ১১টায়। পরবর্তীতে বুধবার (২৪ জুলাই) ভোর ৩টা ১৫ মিনিটে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে ওরস মোবারক।  

সামুন মাহমুদ আরও বলেন, বুধবার জোহর ও আসর নামাজের পর মিলাদ মাহফিল ও শরবত বিতরণ করা হবে। এখানে দূর থেকে যারা আসেন তারা শিরনি নিয়ে গেলে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই শরবত দেওয়া হয়। এরপর রাত ১১টায় ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে হালুয়া-শিরনি বিতরণ করা হবে।

মাজার কমিটির সহ-সভাপতি মকন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর ওরসে লাকড়ি তোলা উৎসবের মাধ্যমে ওরস মোবারকের জানানো হয়। ২৩ জুলাই শুরু হয় এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। যদিও ভক্তরা আগে থেকেই আসা শুরু করেন। এবার অর্ধ শতাধিক গরু ও আড়াইশ’ খাসি জবাই করে শিরনি করা হয়েছে।

এদিকে ওরস মোবারক উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিলেটে এসেছেন শাহজালাল (র.) এর লাখো ভক্ত। মঙ্গলবার দিনভর মাজারে গিলাফ ছড়াতে এসেছেন সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাসহ সাধারণ মানুষ।

ওরসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও  সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী মাজারে গিলাফ ছড়ান। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ও নিজের তরফ থেকে গিলাফ ছড়িয়েছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এছাড়া ভক্তরাও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গিলাফ নিয়ে আসেন শাহজালাল (র.) এর মাজারে।

১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম প্রচারের জন্য ৩৬০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে সিলেটে আসেন হযরত শাহজালাল (র.)। পরবর্তীতে ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জিলকদ তিনি ইন্তেকাল করেন। সিলেটে যে টিলায় তিনি বসবাস করতেন, সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে এটি হয় তার মাজার। সারা বছরই ভক্তদের পদচারণায় মুখর থাকে এ মাজার।  

২০০৪ সালের ১২ জানুয়ারি হযরত শাহজালাল (র.) ওরস উৎসব চলাকালীন বোমা হামলায় ৫ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনার পর থেকে প্রতিবছর এ উৎসব এলেই সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৪০১ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
এনইউ/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।