স্লিপারের লুজ কানেকশনে কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করলেও গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
কুলাউড়ায় ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় চারজন নিহত ও দুই শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সিলেট-কুলাউড়া-আখাউড়া সেকশনে ১৭৮ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। দীর্ঘ এ পথে ছোট-বড় ২৫০টির বেশি সেতু রয়েছে। সর্বনিম্ন তিন ফুট থেকে ৩০০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ সেতুগুলো ৬০-৭০ বছর আগে নির্মিত। প্রতিদিন এ রেলপথে ৬ জোড়া আন্তঃনগর এবং ৮টি ডেমু ও লোকালসহ কয়েকটি পণ্যবাহী ট্রেনও চলাচল করে।
জানা যায়, এ রুটের রেলসেতু ও কালভার্টগুলোর অর্ধশত বছরের পুরনো কাঠের স্লিপারের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। রেল লাইনের ক্লিপ-হুক উঠে যাওয়া, সেতু-কালভার্ট সংস্কারের অভাব ও রেলসেতুর কাঠের স্লিপারগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ রেলপথটি।
এছাড়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ‘মোটর-ট্রলি’ করে লাইন চেকে গাফিলতির ফলে নানা ত্রুটি অজানা থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয় প্রতিনিয়ত।
সরেজমিনে কুলাউড়া উপজেলার দুর্ঘটনাকবলিত বরমচাল এলাকায় অনুসন্ধানে দেখা যায়, এখানকার রেল লাইনের শতকরা ৪০টি ক্লিপই নাই। অনেক জায়গায় টাই প্লাট ভাঙা, কোথাও আবার আরসিসি স্লিপার ভাঙা ও কাঠের স্লিপার পচে গেছে। এমনও দেখা গেছে, একটি স্লিপারের কোনো মাথায় ক্লিপস নেই। মানে টান দিলে স্লিপার বের করে আনা যাবে।
একই চিত্র টিলাগাঁও, লংলা ও কুলাউড়া স্টেশন এলাকায়ও।
এছাড়া কয়েকটি সেতু পরিদর্শন করে দেখা যায়, সেতুগুলোর গার্ডারের অবস্থা জরাজীর্ণ। সেতুর মধ্যে স্লিপার বেঁকে রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেলওয়ের বিধান অনুযায়ী মোটর-ট্রলিতে করে লাইন পরীক্ষা করার কথা। কিন্তু কুলাউড়া স্টেশন থেকে সিলেট অভিমুখে বা শ্রীমঙ্গল স্টেশন অভিমুখে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। ফলে লোহা ব্যবসায়ীরা রেললাইনে স্পাইক খোলার বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে টাই প্লাট, ক্লিপস ও ফিসপ্লেট খুলে নিয়ে যায়। খাঁটি লোহার এসব সরঞ্জামের চড়া দাম থাকায় প্রতিনিয়ত তা চুরি হচ্ছে। রেলওয়ের টহল ও মোটর ট্রলি না থাকায় নিবিঘ্নে তারা এসব চুরি করতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুলাউড়া স্টেশনের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, এ রেলপথের যন্ত্রাংশ পুরনো হওয়াতে ট্রেন চলাচলের সময় ক্লিপ-হুক স্লিপারও রেললাইন থেকে খুলে উড়ে যায়। কাঠের স্লিপার পড়ে যাওয়াতে ট্রেনের চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেক স্লিপার বেঁকে যায়। এতে লাইন দুর্বল হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কুলাউড়ার ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জুয়েল আহমদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল জলিল বলেন, আমাদের লোকেরা নিয়মিত লাইন পরিদর্শন করার কথা। কোথাও যদি সেটি না হয়ে থাকে তাহলে সেই লাইনের যেসব ত্রুটি তৈরি হবে তার দায় দায়িত্বরতদের উপর বর্তায়। আমরা এখন এই রুটের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। সেগুলো সমাধান হয়ে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৯
এসএইচ