রাজধানীর মহাখালী, তেজগাঁও সাতরাস্তা, পল্টন, গুলশানহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কে ফুটপাতে বাইক ওঠা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। মঙ্গলবার (২৮ মে) এসব এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায় বাইকাররা ফুটপাতকে রীতিমতো নিজেদের লেনের মতো ব্যবহার শুরু করেছেন।
অথচ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ এর খসড়ায় এমন অপরাধের জন্য কঠোর আইনের সুপারিশ করা হয়েছে। গত মার্চে খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনও দেওয়া হয়, যা এখন সংসদে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আইনটির ৪০ ধারায় সুপারিশ করা হয়েছে, ফুটপাতে বাইক নিয়ে উঠলে চালকের তিন মাসের জেল অথবা তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
এছাড়াও প্রচলিত মোটরযান নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৮৮ কার্যকর আছে এখনও। সেই আইন অনুযায়ী, এমন অপরাধের জন্য মোটরসাইকেলচালকদের মামলাও দিচ্ছে পুলিশ। কিন্তু সেগুলো খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না চালকেরা। কোনো পথচারী এমন অপরাধের প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদেরকেই অপদস্ত করেন অনেক বাইকচালক। আইনটিতে আরোপিত শাস্তি কম হওয়ায় বাইকচালকদের এমন ঔদ্ধত্য বলে মনে করেন পুলিশ ও পথচারীরা।
রাজধানীর মহাখালীতে দায়িত্ব পালনরত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সার্জেন্ট শাহীন মঞ্জুর বাংলানিউজকে বলেন, মোটরযান নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৮৮ এর ১৪০ ধারায় ফুটপাতে ওঠা বাইক চালকদের সাধারণত আমরা মামলা দেই। এতে ৪শ টাকা আর্থিক জরিমানার কথা বলা হয়েছে। শাস্তির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় অনেক বাইক চালকই আইনটি মানতে চান না। একটু সুযোগ পেলেই বাইকগুলো ফুটপাতে উঠে পড়ে। আমাদের লোকবল কম। একজনকে থামিয়ে মামলা দিতে গেলে দেখা যায় পাশ দিয়ে আরও অনেকেই চলে যায়।
ঢাকার বাইরে থেকে এসে রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে রাজধানীতে বাইক চালানো চালকদের মধ্যে ফুটপাতে ওঠা ও ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা বেশি বলেও মনে করেন এই সার্জেন্ট।
এই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলতেই মহাখালী বাস টার্মিনালের উল্টো দিকের সড়কের ফুটপাত দিয়ে চলে যেতে দেখা যায় বেশ কয়েকটি বাইক। এদের কয়েকজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদক কথা বলার চেষ্টা করলে বাইকচালকেরা সড়কে জ্যাম, পথচারীদের উল্টো সড়কে হাঁটার মতো অজুহাত দেন।
নাম প্রকাশ না করা এক বাইক চালক বলেন, আমরা ফুটপাতে উঠলেই দোষ হয়। অথচ পথচারীরাই সড়ক দিয়ে হাঁটে। আবার সড়কে যত্রতত্র পার্কিং করে বাইক চালানোর পথও বন্ধ করে রাখে। আর ঢাকার জ্যাম তো অসহনীয়। এগুলোও কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।
কিন্তু মানুষের তিন নম্বর হাত ‘অজুহাত’ যতই বাইকচালকেরা দিক না কেন ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ পথচারীরা। বাইকাররা রীতিমতো তাদের কাছে এক ‘আতংক’ এবং ‘বিড়ম্বনা’র নাম।
গুলশানের একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা বলেন, ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের নির্বিঘ্নে হাঁটার পরিবেশ থাকার কথা। আমাদের জন্য সাম্প্রতিক ফুটপাত সংস্কার করা হয়েছে; প্রশস্ত করা হয়েছে। কিন্তু এতে যেন মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলচালকদের জন্য ভালো হয়েছে। ফুটপাতে উঠেও বিরতিহীনভাবে হর্ন দিতে থাকে। পথচারীদের ভিড় থাকলেও অনেক সময় তাদের আঘাত করেই বাইক নিয়ে যান তারা।
এদিকে ডিএমপি বলছে ফুটপাতে ওঠাসহ মোটরবাইক চালকদের নানাবিধ অপরাধের জন্য ২০১৭ সালে দুই লাখ ৭১ হাজার পাঁচটি এবং ২০১৮ সালে মামলা হয়েছে তিন লাখ ৮৩ হাজার ৭০৭টি। আর চলতি ২০১৯ সালের প্রথম চার মাসে এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৯৮৮টি। অর্থ্যাৎ রাজধানীতে মোটরবাইকের সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বাইকারদের আইন ভঙ্গের পরিমাণ ও মামলার সংখ্যা।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি অ্যাডমিন অ্যান্ড রিসার্চ) নিশাত রহমান মিথুন বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যমান আইনের পাশাপাশি বাইকারদের এমন অপরাধের জন্য নতুন আইন হতে যাচ্ছে যেখানে অনেক কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এটা এমন একটি সমস্যা যা শুধু আইন দিয়ে সমাধান হবে না। এরজন্য আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।
‘বাইকাররা যেন ফুটপাতে উঠতে না পারেন এরজন্য ঢাকার বিভিন্ন সড়কের কয়েক হাজার পয়েন্টে আমরা বাঁশ দিয়ে ফেন্সিং করে দিয়েছে। এরমধ্যে দিয়ে পথচারী যেতে পারবেন কিন্তু বাইক যেতে পারবে না। এছাড়াও ভিডিও মামলা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ভিডিও থেকে তথ্য নিয়েও আমরা দিচ্ছি। আসলে যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তারা এমনিতেও ফুটপাতে ওঠে না। কোনো অবস্থাতেই না। তাই আমাদের সবার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সচেতন হতে হবে। তাহলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯
এসএইচএস/এএ