ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসন পুলিশ প্রশাসনসহ বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ মে) সরেজমিনে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে দেখা যায় ভাসমান কারখানা মধুমতীতে ফেরিগুলোতে নানা ধরনের মেরামত কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিসির মেকানিক্যাল বিভাগ।
অন্যদিকে ফেরিঘাটের পন্টুনগুলো উঁচুতে বসানোসহ সাইনবোর্ডের কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। ঘাটের যানজট নিরসনে ফেরিঘাট থেকে নবগ্রাম ৪ কিলোমিটার রাস্তায় জেলা পুলিশ প্রশাসন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসিয়েছে। যাতে করে ঈদের সময় যানজট ও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘাট এলাকাতে না ঘটে। কোনো যাত্রী যেন হয়রানি না হয় সেজন্য পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে তা তদারকি করা হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসন পাটুরিয়া ঘাট এলাকাতে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে পারাপারের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে। ঘাট এলাকাতে জেলা প্রশাসন (মোহনা) নামে একটি কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থা করেছে। এখান থেকে যাত্রীদের সব ধরনের সেবা প্রদান করা হবে। যাত্রীদের সুবিধার্থে পাটুরিয়া ঘাট এলাকাসহ রাস্তার ধারে ২০টি অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ, টিউবওয়েল স্থাপন এবং প্রাথমিক চিকিৎসার্থে হেলথ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি'র পাটুরিয়া ঘাট শাখার ভাসমান কারখানা মধুমতীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের সব ফেরিগুলো চেকআপ করা হচ্ছে। যে ফেরিগুলোতে সমস্যা অাছে সে সব ফেরি মেরামত করা হচ্ছে। ঈদ যাত্রার অাগেই সব ফেরি প্রস্তুত রাখা হবে এবং নিরাপদে নির্বিঘ্নে যাত্রী পরিবহন ও যাত্রীদের পারাপার করতে পারবো ইনশাঅাল্লাহ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) পাটুরিয়া ঘাট শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছি। ১৬টি ফেরি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে চলাচল করছে তবে ঈদের আগেই এ বহরে আরো ৪টি ফেরি যোগ হবে। এ নৌরুটে এবার ২০টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রীদের পারাপার করা হবে। অাশা করছি কোনো রকম ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই ঈদে ঘরমুখো মানুষেরা তাদের গন্তব্যে যেতে পারবে। বিআইডব্লিউটিএ'র সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মো. ফরিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এবারের ঈদে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। আমাদের দুইটি নৌপথে ৩৫টি লঞ্চ থাকলেও ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করবে। এম এল হিরুক নামের লঞ্চটির ফিটনেস না থাকায় এবারের ঈদ যাত্রায় যাত্রী পারাপার করতে পারবে না। দিনে অারিচা-কাজিরহাট নৌরুটে লঞ্চ চলাচল করলেও রাতে তা বন্ধ থাকবে এবং ওই সময় ৩৪টি লঞ্চ এক সঙ্গে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে চলাচল করবে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌপথ পারি দিতে না পারে সেজন্য অানছার সদস্য ছাড়াও রোভার স্কাউটের সদস্যরা থাকবে।
শিবালয় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএফএম ফিরোজ মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে শিবালয় উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষদের যেন কোনো রকম ভোগান্তি পোহাতে না হয় সেজন্য ভ্রাম্যমাণ অাদালত সব সময় ঘাট এলাকাতে প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া জরুরি রোগীর জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে জেলা প্রশাসকের কন্ট্রোল রুমে (মোহনা)। মহাসড়কে যে সমস্ত স্থানে আলোর স্বল্পতা রয়েছে সে সব জায়গাতে অালোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন অাহাম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জেলা পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে। পাটুরিয়া ঘাট এলাকাতে ট্রাফিক পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
এছাড়া ঢাকা-অারিচা মহাসড়কে ১২৮টি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রণসহ ঘাট এলাকাতে জিরো পয়েন্ট থেকে আরসিয়াল মোর পর্যন্ত ১৬টি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যাতে করে মহাসড়কে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এবং ঘাট এলাকাতে যানজট না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা হবে।
শিবালয় থেকে ছোট গাড়ির (প্রাইভেট কার) অালাদা লেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকাতে প্রবেশের জন্য রোড ডিভাইডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অাশা করছি ঈদে ঘরমুখো মানুষ নিরাপদে তাদের নির্ধারিত গন্ত্যবে পৌঁছাতে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
আরএ