ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

এজেন্ডা-২০৩০ বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৯
এজেন্ডা-২০৩০ বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা

নিউইয়র্ক থেকে: টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঘোষিত এজেন্ডা-২০৩০ এর সফল বাস্তবায়নে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর অগ্রগতি টেকসই করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। 

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) '৪র্থ উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন ফোরাম’ (এফএফডি) এর চলতি অধিবেশনের ফাঁকে ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো ও এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি’ শীর্ষক আলোচনায় বাংলাদেশের আলোচকরা এ আহ্বান জানান। তারা এজেন্ডা-২০৩০ বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উদার সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেছেন।


 
জাতিসংঘে বাংলাদেশ ও ক্যাপ-ভার্দের স্থায়ী মিশন এবং অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি), জাতিসংঘের এলডিসি, ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধির কার্যালয় এবং ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আনকটাড) যৌথভাবে নিউইয়র্কের একটি হোটেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিচ দেন। এসময় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনও উপস্থিত ছিলেন। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ক্যাপ-ভার্দের স্থায়ী প্রতিনিধি জোসে লুইস ফিয়ালহো রোচা, আনকটাড মহাসচিব মুখিসা কিটুয়ি, জাতিসংঘের এলডিসি, ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধি ফেকিটামোয়েলোয়া কাটোয়া উটয়কামানু, ওইসিডির পরিচালক হোর্হে মরেইরা দ্য সিলভা এবং জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির প্রধান রোনাল্ড মোলেরাস। অনুষ্ঠানের মডারেটর ছিলেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ভারপ্রাপ্ত সচিব মানোয়ার আহমেদ।

স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মাসুদ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণই বাংলাদেশের সর্বশেষ লক্ষ্য নয়; আমরা উত্তরণকে টেকসই ও স্থায়ী করে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করতে চাই। এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদার সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কি-নোট স্পিচে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে এলডিসি ক্যাটেগরি সৃষ্টি এবং তৎপরবর্তী উত্তরণ মেকানজিমসমূহের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফলভাবে তার অভিষ্ঠ উন্নয়ন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলছে। এর ফলেই ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনে প্রতিটি সূচকে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ।

এজেন্ডা-২০৩০ এর পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য অবশ্যই বাংলাদেশের মতো এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর অগ্রগতি বাধাহীন, মসৃণ ও টেকসই করতে হবে বলে উল্লেখ করেন নজিবুর রহমান। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যবস্থার উদার ও বাধাহীন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি। মুখ্য সচিব টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে উন্নত দেশসমূহ যেন প্রযুক্তি ও জ্ঞান হস্তান্তরে এগিয়ে আসে, সে বিষয়ের ওপরও জোর দেন। এই দেশগুলোর প্রতি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আরও উদাত্ত সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেন নজিবুর রহমান।

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা না থাকলেও বাংলাদেশ এর বিরূপ প্রভাবের শিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, এক্ষেত্রে আমরা উত্তরণকালীন ও উত্তরণপরবর্তী সময়ের জন্য আরও বাড়তি নীতিগত ও আর্থিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।

ক্যাপ-ভার্দের স্থায়ী প্রতিনিধি রোচা তার দেশের উত্তরণকালীন এবং উত্তরণপরবর্তী বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। নিজ দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি সদ্য উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর অগ্রগতির পথ মসৃণ এবং টেকসই করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পদক্ষেপসমূহ অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।  

আনকটাড মহা-সচিব মুখিসা কিটুয়ি উত্তরণ টেকসই করতে ডিজিটাল ইকোনমি সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেন। দেশগুলোর ই-কর্মাসের প্রস্তুতি, সক্ষমতা বিনির্মাণের উপরও জোর দেন তিনি।  

জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির প্রধান রোনাল্ড মোলেরাস উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর জন্য একটি কনসালটেটিভ মেকানিজম তৈরি করার কথা উল্লেখ করেন।  

জাতিসংঘের এলডিসি, ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধি কাটোয়া উটয়কামানু উত্তরণশীল দেশগুলোকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।  

ওইসিডির পরিচালক জর্জ মরিরা দ্য সিলভা বলেন, উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে উত্তরণশীল দেশগুলোকে অবশ্যই সহযোগিতা প্রদান চালিয়ে যেতে হবে।

এজেন্ডা-২০৩০ এর বাস্তবায়ন এবং এলডিসি থেকে উত্তরণসহ সামগ্রিক উন্নয়ন অভিযাত্রায় যেন কোনো দেশ পিছিয়ে না থাকে সে লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্যানেল আলোচকেরা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
এমআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।