ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রিন্ট মিডিয়া চ্যালেঞ্জের মুখে: বসুন্ধরা চেয়ারম্যান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৯
প্রিন্ট মিডিয়া চ্যালেঞ্জের মুখে: বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান | ছবি: শাকিল

ঢাকা: দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেছেন, প্রিন্ট মিডিয়া আসলেই একটি বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তবু প্রিন্ট মিডিয়া একটি ট্র্যাডিশন। ট্র্যাডিশন আজীবন বেঁচে থাকবে, এটার শেষ নাই। যেকোনো উপায়ে হোক এই ট্র্যাডিশনকে ধরে রাখতে হবে। যদিও আজকে মানুষ সবাই টেলিভিশনে, মোবাইল ফোনে কিংবা অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে সারাদিনের সব খবর পেয়ে যায়।

বুধবার (৩০ জানুয়ারি) ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) কনফারেন্স রুমে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি সম্মেলনে এসব কথা বলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান।

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আমি সবাইকে একটি কথাই বলবো—মানুষের জনদুর্ভোগ নিয়ে আপনারা লিখবেন।

প্রতিটি সেক্টরে মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে। আমি নিজেই খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করি, আমাদের যেভাবে ভোগান্তি হয়, সাধারণ মানুষ আজ কোন পর্যায়ে।

‘সরকারের প্রধান কাজ মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া’ উল্লেখ করে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, এই দুটির ভেতরে যে দুর্নীতি, যে অনাচার, যে জুলুম; কোনো চিকিৎসকের কাছে গেলে একটি পরীক্ষা দেয়। একজন গরিব মানুষের পক্ষে দশ হাজার টাকার পরীক্ষা করানো অনেক কষ্টের। বিষয় হলো, ওই চিকিৎসক দশ হাজার টাকায় কমিশন পান চার হাজার টাকা। হয়তো ওই পরীক্ষার কোনো প্রয়োজনই ছিলো না।

আহমেদ আকবর সোবহান আরো বলেন, প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুবিধা থাকার পরও আশপাশের কিছু ক্লিনিকে সবাইকে চিকিৎসা করাতে আগ্রহী ডাক্তাররা। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে বলেছেন, যাদের হাসপাতালে পাওয়া যায় না তাদের চাকরি করার দরকার নাই।

তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ আজ অনেক অসহায়। তারা চিকিৎসার জন্য ঢাকা এসে দালালের খপ্পরে পড়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। আদালতে একটি সিভিল কেস নিষ্পত্তি হতে ২০-২৫ বছর লাগে। একজন কৃষকের মামলার পেছনে ২০-২৫ বছর গেলে তিনি মামলা চালাতে গিয়েই ফকির হয়ে যান। ব্রিটিশ আমলের এই আইন সংশোধন করা উচিত।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি সম্মেলন | ছবি: শাকিল আহমেদবসুন্ধর‍া গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সবসময় সরকার, রাজনীতিবিদদের পরামর্শ দেওয়ার কাজ করবো; কী করবে সেটা তাদের বিষয়। আমি মিডিয়ার যাত্রাকালে বলেছিলাম, আপনারা কখনো মিথ্যা সংবাদ দেবেন না। মিথ্যা আজীবনই মিথ্যা, সত্যের জন্য মৃত্যু হলেও ভয় পাওয়ার কিছু নাই। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতি—অনেক কিছু মিডিয়া প্রকাশ করতে পারে না। তারা অনেক শক্তিশালী।

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়াই মাদকের বিরুদ্ধে প্রথম লড়াই শুরু করে। আমাদের ১৪ জন সাংবাদিক সেখানে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকে মৃত্যুর মুখে পড়েছিলেন। আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু দেশের জন্য নয়, নিজের জন্যও করতে হবে। আজকে আপনার ছেলেও মাদকাসক্ত হতে পারে। শুধু মাদক ব্যবসায়ী নয়, গ্রহণকারীদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরির ক্ষেত্রে যেন তাদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এতে প্রতিটি পরিবারই মনে করবে মাদকাসক্ত হলে আমার ছেলে চাকরি পাবে না, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না।

বসুন্ধর‍া গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার নীতি হলো কালোকে কালো বলা, সাদাকে সাদা। আমি অনুরোধ করবো আপনারা মিথ্যা সংবাদ দেবেন না। কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে না জেনে কিছু লিখবেন না। ব্যবসায়ীরা প্রতিটি সেকেন্ডে যুদ্ধ করছেন। তারা হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করছেন। মিথ্যা লিখে কোনো ব্যবসায়ীকে হয়রানি করবেন না। মিডিয়া আমার বিরুদ্ধ‍াচারণ করেছে সবচেয়ে বেশি। সেই কারণে আমার মিডিয়ার জন্ম। মিডিয়ার যে চরিত্র কিছুটা হলেও আমরা পরিবর্তন করতে পেরেছি। আজ মিথ্যাভাবে কোনো ব্যবসায়ীকে হয়রানি করতে পারে না।

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আদেশও বেশকিছু সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিরা মানেন না। সুপ্রিম কোর্ট যে আদেশ দেন সেটাই আইন। সেটা যদি না মানেন তাহলে আইন ব্যবস্থা রক্ষা করা কঠিন হবে। সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের নির্দেশ যারা মানেন না, তাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের আরো কঠোর হওয়া উচিত। এমনও লক্ষ্য করা গেছে—সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের বেশ কয়েক নির্দেশ জেলা প্রশাসকরা মানছেন না। এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের আরো সোচ্চার হওয়া উচিত। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত।

বসুন্ধর‍া গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা জানেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে মিডিয়ার যেসব ভূমিকা আছে, আমরা সবগুলোই পালন করি। আমাদের তরুণ ও যুব সমাজের কাছে স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে রাখতে হবে। কীভাবে দেশ স্বাধীন হয়েছে, কীভাবে দেশ এই অবস্থানে আসলো—এসব কিছুই জানাতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা কোনদিন চাই না স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আসুক। ষড়যন্ত্র ছিলো, আছে, থাকবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মাদক, হুন্ডি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আজীবন আমরা সোচ্চার থাকবো। দুদিন আগে দেখলাম, ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এসব তো দেশের কৃষকের টাকা। এই টাকা দেশে থাকলে অনেক উন্নয়ন হতো।

‘দেশ যাতে রকেট গতিতে এগিয়ে যেতে পারে চীন-ভারতকে ছাড়িয়ে। সেই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা প্রকাশ করছি। দেশের উন্নয়নে সব সময় পাশে থাকবো’, যোগ করেন আহমেদ আকবর সোবহান।

ভালো রিপোর্টারদের জন্য তিন মাস পর পর ১ লাখ টাকার একটি পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন আহমেদ আকবর সোবহান। একই সঙ্গে প্রতি বছর ৫ জন প্রতিনিধিকে শ্রেষ্ঠ রিপোর্টিংয়ের জন্য চেয়ারম্যান পুরস্কার দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজামের সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক আবু তাহের, উপ-সম্পাদক মাহমুদ হাসান, প্রধান বার্তা সম্পাদক মাশুক চৌধুরী, বার্তা সম্পাদক কামাল মাহমুদ প্রমুখ। পত্রিকাটিতে কর্মরত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংবাদকর্মীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৯
এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।