ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮
যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই এফবিসিসিআই আয়োজিত ব্যবসায়ী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারি জোট ‘প্রহসনের নির্বাচন’ করে ফের ক্ষমতায় যেতে চায় বলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনের অভিযোগের জবাবে দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমন কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই যে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসতে হবে। 

বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ ভোট দেবে, যাকে দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে।

আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যদি ক্ষমতায় আসতে পারি আলহামদুলিল্লাহ। যদি না পারি কোনো অসুবিধা নেই।

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। আপনাদের কাছ থেকে একটা সহযোগিতা চাই, আজ যে সুন্দর-শান্তিপূর্ণ পরিবেশটা আছে, সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রেখেই যেন নির্বাচনটা হয়।

বিএনপি-জামায়াতের আমলে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হাওয়া ভবন’ তৈরি করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ‘যেভাবে চাঁদা আদায় করা হয়েছিল’ তারও অবসান ঘটেছে।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। সরকার হিসেবে দায়িত্ব ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা।

‘আপনাদের জন্য যে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করেছি, এখনতো আর বলতে পারবেন না যে, কেউ হাওয়া ভবন খুলে সব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে থাবাথাবি করছে যে, কিছু করতে গেলেই ভাগ দিতে হবে। অন্তত আমরা সেটা করি না, করবো না। ’

বাস্তবায়নাধীন মেগাপ্রকল্পগুলোর কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এতোগুলো কাজ হাতে নিয়েছি। কোনো দিক বাকি রাখি নাই। সব দিকেই উন্নয়ন করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যার হাতে দেশের প্রতিটি খাতের উন্নয়নের রূপরেখা রয়েছে। ব্যবসায়ী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: পিআইডিনৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আরেকবার সুযোগ দিন আপনাদের সেবা করার। হাতে নেওয়া কাজগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির, এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাত কবীর, সাবেক সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ফোলি, মাইক্রোসফট বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সোনিয়া বশীর কবির, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, বিএসআরএম স্টিলের চেয়ারম্যান আলী হুসেন আকবর আলী, বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপালী চৌধুরী, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক, বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর প্রমুখ।

এছাড়াও দেশের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাবৃন্দ, সিইও, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আমদানি-রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন সেবাখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা সম্মেলনে যোগ দেন।  

বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় সবসময় বঙ্গবন্ধুকন্যার পাশেই থাকার অঙ্গীকার করেন। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির প্রতি শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রতি সমর্থন করে ব্যবসায়ীরা বলেন, আগামী নির্বাচন হবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শান্তি সমৃদ্ধির দেশ গড়ার মাইলফলক।

আওয়ামী লীগ সভাপতির উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, শেখ হাসিনার সরকার দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। তার দরজা দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য সবসময় খোলা থাকে। ব্যবসায়ীরা যে কোনো প্রয়োজনেই তাকে কাছে পেয়ে থাকেন।

বর্তমান সরকারের উপদ্রবহীন ব্যবসাবন্ধব পরিবেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ বলতে পারবেন না, ব্যবসা করতে গিয়ে কোনো রূপ প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন বা হাওয়া ভবনের মতো চাঁদা গুণতে হয়েছে। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।  ছবি: পিআইডিএফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা চাই দেশের চলমান উন্নয়নের গতিধারা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য বিদ্যমান ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ দেশে বজায় থাকুক। ’

তিনি বলেন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এমন নেতৃত্ব চায় যিনি কি-না দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, সাহসী এবং যার দুয়ার সবসময় ব্যবসায়ীদের জন্য অবারিত থাকবে। শেখ হাসিনা এমনই একজন ব্যক্তিত্ব, তিনি যে কোনো সমস্যায় ব্যবসায়ীদের শেষ ভরসাস্থল।

মহিউদ্দিন বলেন, আমার সামনে যারা বসে আছেন। আপনারাই বাংলাদেশকে বদলে দিতে পারেন। আর এর দিক নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে রাজনীতিতে কোনো জ্বালাও-পোড়াও-নৈরাজ্য দেখতে চাই না।

নির্বাচনে দেশের সব ব্যবসায়ীকে হাতে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।

দেশের শীর্ষস্থানীয় এ শিল্পপতি বলেন, ‘আমি শুধু সারাদেশের ব্যবসায়ীদের একটা কথাই বলবো, আজকে আমরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকবো? নাকি স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থাকবো? যদি আমরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকি আপনারা সারাদেশের সমস্ত ব্যবসায়ী সবাই একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনুন। ’ 

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজকে অত্যন্ত আনন্দের দিন, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা আজ এখানে। সবাই এক পতাকা তলে সমবেত হয়েছি। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আজকে আমাদের মাঝে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির সন্তান জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মাঝে উপস্থিত। ’ 

‘বঙ্গবন্ধুর নাম এদেশে লক্ষ কোটি বছর থাকবে। উনি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছেন। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করছেন। আজ আমরা সারাবিশ্বে সবার কাছে ইর্ষণীয়, সারাবিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে- কিভাবে তারা জিডিপি প্রবৃদ্ধি আটে নিয়ে গেলো। ’

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘অনেকে তার উন্নয়নের কথা বলেছেন। আমি এ বিষয়ে বলবো না। আমি শুধু ওনার মানবতার একটা দিক বলবো। আজকে প্রধানমন্ত্রী যদি না চাইতেন একজন রোহিঙ্গাও এদেশে ঢুকতে পারতো না। উনি মানবতার যে উৎকৃষ্ট প্রমাণ দিলেন লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে এখানে বসবাস করতে দিচ্ছেন। তাদের খাওয়া পরা সব কিছুর উনি টেক-কেয়ার করছেন। ’ 

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে আপনারা সবাই ব্যবসা করেন। এদেশে ব্যবসা করা যতো সহজ বিদেশে ব্যবসা করা এতো সহজ না। এই সরকার যদি থাকে, আপনাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেবে। যেন আমরা বিশ্ব দরবারে বলতে পারি, আমরা বাঙালি জাতি অনেক শক্তিশালী জাতি। আমরা আজকে মাথা উঁচু করে বলতে পারি- আমরা আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড কারও চেয়ে কম না। আমরা ইনশাল্লাহ এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। ’

অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতাদের বক্তব্যেও ফুটে উঠে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশা।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে গত ১০ বছরে দেশের বিভন্ন সেক্টরে উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮/আপডেট ২১০১ ঘণ্টা
এমইউএম/এএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।