ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৪৬ বছরে মাত্র ১৫ আন্তর্জাতিক রুটে বিমান!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
৪৬ বছরে মাত্র ১৫ আন্তর্জাতিক রুটে বিমান! বাংলাদেশ বিমান

ঢাকা: প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছরেও কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক আর্ন্তজাতিক রুট বাড়াতে পারেনি রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। মাত্র ১৫টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে সংস্থাটি। যদিও বিশ্বের ৫২টি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে বিমানের। 

সম্প্রতি বিমানের বহরে যুক্ত হয়েছে নতুন ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন সব উড়োজাহাজ। কিন্তু বাড়ানো হয়নি নতুন কোনো আন্তর্জাতিক রুট।

সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রুট বাড়াতে না পারার জন্য বিমানের অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও দক্ষ লোকবলের ঘাটতির কারণে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে যেতে পারছে না বিমান। তবে সময়সূচি ঠিক রেখে সেবার মান বাড়ানো গেলে মুনাফা বাড়বে। নতুন রুট বাড়ানো ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে উড়োজাহাজ বাড়ালে দেখবে না লাভের মুখ।  

এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ায় আন্তর্জাতিক গন্তব্যে বেড়েছে দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা। এছাড়া বিশ্বের বহু দেশে প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করছেন। চীন ও ভিয়েতনামসহ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যবসায়িক কাজে বছরে কয়েক লাখ মানুষ যাতায়াত করে। বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও এসব রুটে বিমানের ফ্লাইট বাড়াতে পারছে না সংস্থাটি। এজন্য বিমানের দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন যাত্রীরা।  

জানা যায়, ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমান বাহিনী থেকে পাওয়া ডিসি-৩ উড়োজাহাজ দিয়ে যাত্রা শুরু বাংলাদেশ বিমানের। কয়েক বছর বন্ধুপ্রতীম দেশের উপহার ও নিজস্ব কেনা পুরনো এয়ারক্রাফট দিয়ে চলতে থাকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল। আশির দশক থেকে উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়তে থাকলে বিশ্বের ২৬টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে বিস্তৃত হয় বিমানের ফ্লাইট। তবে ক্রমাগত লোকসান ও রাজনৈতিক বিবেচনায় ফ্লাইট পরিচালনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ রুট।  

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের ৭টি রুট, ইউরোপে ১টি, দক্ষিণ এশিয়ায় ২টি, পূর্ব এশিয়ার ৫টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়া ৭টি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি। রুটগুলো হলো- মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, কুয়েত, দাম্মাম, জেদ্দাহ, দোহা, রিয়াদ, আবুধাবি, মাসকাট, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, নেপালের কাঠমান্ডু, ভারতের কলকাতা, মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুর।  

জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে ১৫টি উড়োজাহাজ রয়েছে। চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, একটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর, একটি এয়ারবাস ৩৩০-২০০ এবং দুটি ড্যাশ-৮-কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ। সবশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর বিমানের বহরে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক বোয়িং ৮৭-৮ ড্রিমলাইনার আকাশবীণা। ৭টি বোয়িং ছাড়া বাকিগুলো ভাড়া নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে সংস্থাটি।  

ভাড়ায় আনা দু’টি ড্যাশ ড্যাশ-৮-কিউ ৪০০ এয়ারক্রাফট ২০২০ সালের এপ্রিলে ও দু’টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ফেরত যাবে। এতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে উড়োজাহাজ সংকট আরও বাড়বে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর বছর তিনেক আগে প্রথমবারের মতো লাভের মুখ দেখে রাষ্ট্রয়াত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু সেই বছর থেকেই নিট মুনাফা কমে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিমান মুনাফা করে ৩২৪ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে তা কমে হয় ২৩৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে মুনাফা অর্জিত হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা।  

বিমানের যাত্রীদের মতে, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না বিমান। অবস্থার উন্নয়নে সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ তাদের। চায়নায় ব্যবসার কাজে নিয়মিত যাতায়াত করেন হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী কায়েস আহমদ। তিনি বলেন, চীনে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ব্যবাসায়িক কাজে যাতায়াত করেন। সেখানে বাংলাদেশের পতাকা বহনকারী বিমানের কোনো ফ্লাইট নেই। চীনে ফ্লাইট চালু করলে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করতে পারবে বিমান।

নিজের দেশের বিমানে যাওয়ার অনুভূতি অন্যরকম বলেও মন্তব্য করেন এই যাত্রী।  

সিপিডির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট সাঈদা জাহান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রায় এক কোটি প্রবাসী থাকেন। ওই রুটে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ঠিকভাবে সেবা দেওয়া গেলে মুনাফা বাড়বে। এছাড়া চীন, পূর্ব এশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপে বিমানের রুট চালু করা গেলে মুনাফা বাড়বে। কারণ এসব অঞ্চলে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। অনেক পর্যটকও আসবে বাংলাদেশে। ফলে বিমানের মুনাফার পাশাপাশি বাণিজ্য ও সম্পর্কের উন্নতি হবে।

প্রতিষ্ঠার এতো বছরেও বিমান কেন আর্ন্তজাতিক রুট বৃদ্ধি করতে পারেনি জানতে চাইলে বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নকে দায়ী করে বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরে মাত্র ৮টি বোয়িং ব্রিজ (বিমান অবতরণ করার ব্রিজ) রয়েছে। এখানে ট্রানজিটের
সুবিধা কম। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠার সময় যে ধারণ ক্ষমতা ছিল, তা ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন নতুন টার্মিনাল প্রয়োজন।  

তিনি জানান, ২০১৯ সালে বিমান শ্রীলংকার কলম্বো, মালদ্বীপের মালে, চীনের জুয়াংঝু ও সৌদি আরবের মদীনায় বিমানের ফ্লাইট বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

নতুন করে বিমানের রুট বাড়ানো হবে কিনা জানতে চাইলে সংস্থাটির এমডি এএম মোসাদ্দেক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, পরিকল্পনা তো অনেক কিছু রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।  

৫২টি দেশের সঙ্গে চুক্তি থাকলেও আন্তর্জাতিক রুট বাড়ানো যাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি একটি সভায় আছেন জানিয়ে পরবর্তীতে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।