ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গাইবান্ধায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, আতঙ্কিত এলাকাবাসী 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
গাইবান্ধায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, আতঙ্কিত এলাকাবাসী  পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মালপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ

গাইবান্ধা: উজানের ঢলে গাইবান্ধার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনা, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে ভাঙনসহ বড় বন্যার আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

এরই মধ্যে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তা ঘাট, নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত।

নদীতে স্রোত থাকায় বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনও অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং শহর রক্ষা বাঁধ ঘাঘট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। গত কয়েকদিনে পানি বৃদ্ধি আর প্রবল স্রোতে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সাতদিনে সদরসহ চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৫০টি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে বসতবাড়ি, আবাদি জমিসহ সর্বস্ব হারিয়েছেন। হুমকির মুখে রয়েছে শত শত বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

পানি বেড়ে ডুবে গেছে রাস্তা।  ছবি: বাংলানিউজতবে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে সদরের কামারজানি, সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর, কাপাসিয়া, লালচামার, ফুলছড়ির উড়িয়া ও সাঘাটার হলদিয়াসহ বেশ কিছু এলাকায় স্থানীয়দের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেকে বসতভিটে ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছেন উঁচু জায়গায়।

ব্রহ্মপুত্র নদের পানির প্রবল চাপে ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব কঞ্চিপাড়া কাইয়ারহাটে টিআর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবশে করায় নতুন করে খলাইহাড়া, মশামারি, ধনারপাড়া, কাইয়ারহাট ও কঞ্চিপাড়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমিসহ চলাচলের রাস্তাঘাট। এসব এলাকার মানুষ বর্তমানে চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে।

ফুলছড়ি উপজেলার ধনারপাড়া গ্রামের মজিরন বেওয়া বাংলানিউজকে বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানি বাড়ছে। বাড়ির আশপাশের সব রাস্তা ঘাট ডুবে গেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ঘরের মধ্যেও পানি প্রবেশ করবে। এখন যোগাযোগের জন্য নৌকা আর কলাগাছের ভেলায় আমাদের একমাত্র ভরসা।

একই গ্রামের কৃষক আইনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমার তিন বিঘা জমির রোপা আমন ক্ষেত এখন পানির নিচে। দু-এক দিনের মধ্যে পানি না কমলে তা নষ্ট হয়ে যাবে। আমার মত এই এলাকার শত শত কৃষকের কষ্টের রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলি জমি এখন পানির নিচে। পানি কমার ওপরই আমাদের আশা-ভরসা সবই নির্ভর করছে।

পানির স্রোতে ভেঙে গেছে বাঁধ।  ছবি: বাংলানিউজবন্যার প্রস্তুতিসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষায় সব প্রস্তুতির কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে প্রকৃত ভুক্তভুগীদের তালিকা প্রস্তুত করার কাজ শেষ করেছি।  

এছাড়া হুমকির মুখে থাকা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোর বাঁধ মেরামতের কাজ করে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় জিও ব্যাগ ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি। আমরা সব-সময় বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বদ্ধপরিকর।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী এটিএম মোনায়েম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙন এলাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয়  জিও ব্যাগ, ও বাঁশের পাইলিং দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আরো বেশি করে জিও ব্যাগ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।  

প্রতি বছরেই বর্ষা মৌসুমে বন্যা আর ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি আর সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয় হাজারো মানুষ। অথচ ভাঙন ঠোকানো আর ত্রাণ সহায়তায় সরকারের খরচ হয় কোটি কোটি টাকা। কিন্তু তাতে তেমন কোনো উপকার হয় না কারো। তাই বন্যা আর নদী ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে ত্রাণ সহায়তা নয়, স্থায়ী পদক্ষেপ চান এলাকাবাসী।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad