ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পরকীয়া ও অর্থবিত্তের কারণেই বাবু সোনা হত্যাকাণ্ড

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
পরকীয়া ও অর্থবিত্তের কারণেই বাবু সোনা হত্যাকাণ্ড

রংপুর:  রংপুরের বিশেষ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আইনজীবী   রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনাকে পরকীয়া ও অর্থবিত্ত হাতিয়ে নিতেই হত্যা করেন তার স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ওরফে দীপা এবং তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম। 

পুলিশের তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান।  

তিনি জানান, এ হত্যা মামলায় স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও তার প্রেমিক কামরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

এ মামলায় অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে মৃত মিলনসহ অপর ৪ আসামিকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। । ১৩ সেপ্টেম্বর রংপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।  

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, এই মামলায় ৮০০ পৃষ্ঠার বেশি নথিপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। পাঁচ মাস ১২ দিনের মাথায় চার্জশিট দেওয়া হলো। দুই সপ্তাহ আগে বাবু সোনার ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। হত্যার দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেয়েছি।  

‘এই মামলায় মোট ৪০ জন সাক্ষী রয়েছে। বাবু সোনার বিশাল অর্থ বিত্ত ও পরকীয়ার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বাবু সোনার স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও কামরুল ইসলাম। ’

তিনি বলেন, কামরুলের জবানবন্দি অনুযায়ী, তিনি রংপুর নগরীর তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৫ বছর ধরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করে আসছেন। নিহত আইনজীবী বাবু সোনার স্ত্রী দীপা ভৌমিকও একই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। হত্যাকাণ্ডে ৮ মাস আগে থেকে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের দু’জনের মাঝে। হত্যার ৪ মাস আগে থেকে তারা দুইজনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাবু সোনা আইনজীবী ও প্রভাবশালী হওয়ায় বিয়েতে বাধা হতে পারে এমন মনে করে তারা তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।

‘কামরুল তার জবানবন্দিতে আরও জানিয়েছেন, তার ধারণা ছিলো- বাবু সোনাকে হত্যার পর তারা দুইজনে বিয়ে করার পর বাবু সোনার বিশাল সম্পদ সে ভোগ করতে পারবে। হত্যার পর মরদেহ কোথায় পুঁতে রাখা হবে, নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা কীভাবে প্রচার করা হবে সব পরিকল্পনা তিনি-ই সাজান,’ যোগ করেন রংপুরের এসপি।   

চলতি বছরের ২৯ মার্চ রাতে বাবু সোনাকে ১০টি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর তার মরদেহ তাজহাট মোলাপাড়ায় একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে পুঁতে রাখা হয়।  

গত ৩ এপ্রিল রাতে বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে র‌্যাব। পরে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন এবং মরদেহের অবস্থানের কথা জানান। পরে সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।  

এ ঘটনায় পুলিশ বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা, প্রেমিক কামরুল ইসলাম, মিলন মোহন্ত, ছাত্র মোলাপাড়া এলাকার সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামানকে গ্রেফতার করে। এরপর ৫ এপ্রিল কামরুল বাদে অপর ৪ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।  

এর মধ্যেই কারা হেফাজতে থাকা আসামি মিলন মোহন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মামলার অপর দুই আসামি সবুজ ইসলাম, রোকনুজ্জামান ও খড় বিক্রেতা স্বপন রায়কে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মামলার বাদী নিহত রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের ছোটভাই সুশান্ত ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, চার্জশিট নিয়ে  আমরা পারিবারিকভাবে সন্তুষ্ট। আমরা চাই দ্রুত বিচার আইনে মামলাটি হস্তান্তর করে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হোক।  

সংবাদ সম্মেলনে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) সাইফুর রহমান সাইফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্বিক) মারুফ হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad