ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

শেখের বেটির জন্য এত বড় পুল পাইনো বাহে

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
শেখের বেটির জন্য এত বড় পুল পাইনো বাহে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা রুদ্ধেশ্বর গ্রামের বৃদ্ধ কেরামত আলী। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: শেখ সাইব দিলো দ্যাশ। সেই শেখের বেটির জন্যে হামরা তিস্তা নদীত এত বড় পুল (সেতু) পাইনো বাহে। শেখ সাইব আর তার বেটি ছাড়া কায়ো হামার ভিত্তি (দিকে) দ্যাখে না বাহে। 

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’র উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখে বাড়ি ফেরার পথে এভাবে কথাগুলো বলেন তিস্তা পাড়ের লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা রুদ্ধেশ্বর গ্রামের বৃদ্ধ কেরামত আলী (৮২)।

তিনি জানান, দুঃখ কষ্টের অন্ত ছিল না তিস্তা পাড়ের মানুষের। শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। ঘাটে নৌকার অপেক্ষা করতেই কত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যাতায়াতের সমস্যার কারণে তিস্তা পাড়ের ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পানির দামে বিক্রি করতে হয়েছে তাদের উৎপাদিত পণ্য। অনেকেই ভোটের সময় আসেন প্রতিশ্রুতি দেন ঠিকই কিন্তু বাস্তবে তাদের দুঃখ ঘোচায় না কেউ। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর তাদের বিশ্বাস হয়েছে তিস্তা নদীর উপর সেতু হবে। যা তাদের কাছে ছিল কল্পনাতীত।

কেরামত আলী বলেন, দ্যাশের মানুষের কষ্ট দ্যাখি শেখ সাইব দ্যাশ স্বাধিন করছেন, যা হামরা ভাববারও পারি নাই। তার বেটি হামার কষ্ট দেখি পুল (সেতু) দিচে। হামরাও শেখের বেটির সঙ্গে আছি এবং থাকমো।

তিস্তা পাড়ের কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, যোগাযোগ সমস্যার কারণে চরের মানুষদের পানির দামে পণ্য বিক্রি করতে হতো। সেতুটি চালু হওয়ায় সকালের টাটকা সবজি ক্ষেত থেকে তুলেই রংপুরে বিক্রি শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয় এ অঞ্চলের পণ্য এখন টাটকায় চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে। টাটকায় বিক্রি করায় দামও বেশি পাচ্ছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।

গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু।  ছবি: বাংলানিউজবেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমি বাংলানিউজকে জানান, রংপুর থেকে গ্রামের বাড়ি এলে যাওয়া নিয়ে চিন্তায় থাকতে হতো। বালুময় পথ পায়ে হেঁটে কিছু পথ নৌকায়। কখনো কাঁদা মাটি মাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হত। ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ চালু হওয়ায় বাড়ি থেকেই অনেক শিক্ষার্থী বিশ্বাবিদ্যালয় ও রংপুর মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করতে পারবে। এটা লালমনিরহাট জেলাবাসীর জন্য বড় উপহার। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

লালমনিরহাটের কাকিনা বাজারের ব্যবসায়ী মিঠু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ৪০ কিলোমিটার ঘুরে রংপুর থেকে মালামাল কিনে আনতে পরিবহন খরচ যেমন বেশি হতো, তেমনি যথেষ্ট সময়ও অপচয় হতো। সেতু হওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি ও প্রসার ঘটবে। সেতুটি নির্মাণ করে লালমনিরহাটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’র নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থ্যের ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতুটি ১৬টি পিলার, ২টি এপার্টমেন্ট, ১৭টি স্প্যানে ৮৫টি গার্ডারের উপর নির্মিত। একই অর্থে সেতুটি রক্ষার জন্য উভয় পাশে ১৩০০ মিটার নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর সঙ্গে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের কাকিনা থেকে সেতু পর্যন্ত ৫.২৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ২টি প্যাকেজে ৪ কোটি ৪৬ লাখ এবং এ সড়কে ২টি ব্রিজ ও ৩টি কালভার্ট নির্মাণে ৩টি প্যাকেজে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় হয়। সেতু থেকে রংপুরের অংশে ৫৬৩ মিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সেতুতে চলাচলকারীদের নিরাপত্তার জন্য লাইটিং এর ব্যবস্থাও রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।