ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

যাত্রা করলো রংপুর-গাজীপুর মহানগর পুলিশ

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
যাত্রা করলো রংপুর-গাজীপুর মহানগর পুলিশ

ঢাকা: আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু হলো রংপুর মহানগর পুলিশ (আরপিএমপি) ও গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি)। দুই মহানগরের বাসিন্দাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বিঘ্ন রাখতে কাজ করবে এ দু’টি ইউনিট।

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর ও গাজীপুর মহানগর পুলিশের উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হলো পুলিশের এ দু’টি ইউনিটের।

 

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার পর ২১ বছর দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে জনগণের কল্যাণে কাজ করি। তখনই দেশবাসী বুঝতে পারে, সরকার জনগণের জন্য কাজ করে। রংপুর ও গাজীপুরের মানুষের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই দু’টি ইউনিট কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বেশি কষ্টটা পুলিশকেই করতে হয়। তাদের কোনো কর্মঘণ্টা নেই। মানুষ যখনই চায় তাদের ছুটে যেতে হয়। কিন্তু তারপরও পুলিশের ওপরই আঘাত আসে বেশি।

এসময় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর আক্রমণের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আক্রমণ করা হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে, এখান থেকেই প্রতিরোধ করা হয় প্রথম। বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাসের শিকারও হতে হয়েছে আমাদের পুলিশকে। ৫শ’ নাগরিকের পাশাপাশি আমাদের ২৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে।

পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে মন থেকে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে এসেছে, যেটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

এসময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের ভূমিকা ও সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সফলতা ধরে রাখার পাশাপাশি  মানুষের সেবায় পুলিশকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারেরও পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন ২০ ভাগ পুলিশ রেশন পেতো। সেটা আমরা শতভাগ করে দিয়েছি। পুলিশের জন্য চিকিৎসার ভালো ব্যবস্থা ছিল না, আবাসনের ভালো ব্যবস্থা ছিল না। অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। এই বাহিনীর চিকিৎসা-বাসস্থানের উন্নয়নে আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রতিবছরই পুলিশের জন্য বাজেট বাড়াচ্ছি।

‘কারণ আমরা জানি দেশকে উন্নত করতে হলে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। আর সেটা করতে হলে পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তারা মানুষের সেবা দেওয়ার কাজটি করে আসছে, সেজন্য পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। ’

ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে যেন কারও কাছে হাত পেতে চলতে না হয় সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

গণভবনে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জননিরাপত্তা সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুর ও রংপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।

মহানগর পুলিশের উদ্বোধন উপলক্ষে রংপুর-গাজীপুরে বর্ণিল আয়োজন
আরপিএমপি ও জিএমপির উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হতে দুই নগরীতেই বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

রংপুর নগরীর গঙ্গাচড়া রোডে বিশাল প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য টিপু মুন্‌শি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ,  রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রংপুর পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, আরপিএমপির কমিশনার মোহা. আবদুল আলীম মাহমুদ, র‍্যাব-১৩ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক্ব প্রমুখ।

আরপিএমপি কার্যক্রমের উদ্বোধন নিয়ে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায় নগরজুড়ে। পুরো রংপুর মহানগরজুড়ে পড়ে যায় সাজ সাজ রব। বাহারি রঙের পতাকায় সাজানো হয় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো। নতুন থানাগুলোতে করা হয় আলোকসজ্জা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে সাঁটানো হয় ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড।  

আর গাজীপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য বেগম মেহের আফরোজ চুমকি, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল।

আরপিএমপির কার্যক্রম
নতুন পোশাকে নতুন মুখের সংযোজনে কার্যক্রম শুরু হয়েছে আরপিএমপি’র। একজন পুলিশ কমিশনার, একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, দুই জন উপ-পুলিশ কমিশনার, একজন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, পাঁচ জন সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ ৪৭০ কর্মকর্তা আরপিএমপিতে যোগদান করেছেন। বিভিন্ন ধরনের যানবাহন রয়েছে ৪৭টি। রংপুর সদর, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, কাউনিয়া ও পীরগাছার কিছু অংশ আরপিএমপি এলাকায় থাকছে। এর থানাগুলো হচ্ছে- কোতোয়ালি, পরশুরাম, তাজহাট, মাহিগঞ্জ, হারাগাছ ও হাজীরহাট।

জিএমপির কার্যক্রম
আর গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কার্যক্রমও চলবে আটটি থানা নিয়ে। এ থানাগুলো হলো- গাজীপুর সদর, কাশিমপুর, কোনাবাড়ি, বাসন, গাছা, পূবাইল, টঙ্গী পূর্ব ও টঙ্গী পশ্চিম।

বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮/আপডেট ১১৪৯ ঘণ্টা
এমআইবি/এমইউএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।