ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দু’মুঠো খাবার খেয়ে পড়ালেখা করতে চায় আল-আমিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
দু’মুঠো খাবার খেয়ে পড়ালেখা করতে চায় আল-আমিন আল-আমিন-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা (সাভার): কাজের ব্যস্ততার মধ্যে হঠাৎ করে চোখ আটকে গেল সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পল্লি বিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ডে। মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে ছবি তুলতে থাকি। হঠাৎ আমার দিকে নজর পড়ে শিশু আল-আমিনের। দৌঁড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, আঙ্কেল আমার ছবি তুলছেন? একটু দেখি। ছবি বের করে দেখাতেই তার চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে ওঠে। সে সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে দুই টাকা, পাঁচ টাকার নোটসহ পনের-বিশ টাকার মতো হাতে নিয়ে বলতে লাগলো, আঙ্কেল আমার সব টাকা নিয়ে যান তবুও ছবিটা ফেসবুকে দিয়েন না।

কেন দেব না জানতে চাইলে সে জানায়, শুনেছি বাচ্চারা ভিক্ষা করলে পুলিশ জেলে দেয়।

নিজের বয়সটাও ঠিকমতো বলতে পারে না ৪-৫ বছরের শিশু আল-আমিন।

তবুও যে বয়সে তার বাবা-মায়ের আদর ভালোবাসায় পড়ালেখা করার কথা সেই বয়সে পেটের দায়ে জড়িয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। সবার সামনে এ ধরনের কাজ চালিয়ে গেলে বিষয়টি যেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি কিংবা সচেতন নাগরিক কারোর চোখেই পড়ছে না।

আল-আমিন জানায়, বাবা মারা গেছে না কি কোথায় আছে সে খবর জানে না সে। মায়ের সঙ্গে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার দুলালের ভাড়া বাড়িতে সে সৎ বাবার সংসারে থাকে। সৎ বাবা যখন যে কাজ পান তাই করেন। আর মা মানুষের বাড়িতে কাজ করেন।

গত দুইদিন ধরে পল্লি বিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি পার্কিং করিয়ে চেয়ে টাকা রোজগার করছে সে। প্রথমদিন তিনশ’ টাকা এবং দ্বিতীয়দিন দুইশ’ টাকা আয় হয়েছে তার। গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ করছে আল-আমিন-ছবি-বাংলানিউজস্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলে পড়ালেখা করতে চায় আল-আমিন। কিন্তু অভাবের সংসারে যেখানে দুইবেলা খেয়ে-পড়ে বাঁচার জন্য রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি পার্কি করে যাচ্ছে সেখানে তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেবে কে?

আল-আমিন অভিযোগ করে, পড়ালেখার প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকলেও সৎ বাবা স্কুলে ভর্তি করে না দেওয়ায় পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত আল-আমিন।

গাইবান্ধার বেলকা গ্রামে তার বাবার বাড়ি। রাস্তায় কে কাজ করতে বলেছে জানতে চাইলে সে বলে, কেউ বলেনি কিন্তু পেটের ক্ষুধায় করি। বিভিন্ন গাড়ির হেলপাদের কাছে চেয়ে যা পায় বেলাশেষে বাড়িতে নিয়ে বাবার হাতে তুলে দিতে হয়।

ঝুঁকিপূর্ণভাবে সড়কে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন বলেন, আমাদের কোনো সদস্য তাকে রাস্তায় কাজ করতে বলেছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া শিশুটি পড়ালেখার সময় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে কেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিধিসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।