ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লেগুনা বিভ্রান্তি কাটছে না, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
লেগুনা বিভ্রান্তি কাটছে না, ভোগান্তিতে যাত্রীরা যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় লেগুনা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: চলতি মাসের শুরুর দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রাজধানীতে লেগুনা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয়। সে অনুসারে গত সপ্তাহ থেকে রাজধানীর মূল সড়কে লেগুনা চলাচল না করলেও কিছু কিছু এলাকায় এখনো লেগুনা চলতে দেখা যাচ্ছে। 

তবে সপ্তাহের ছুটির দিন বিশেষ করে শুক্রবারে এসব লেগুনাকে মূল সড়কে চলাচল করতেও দেখা গেছে। এতে কর্ম দিবসে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।

 

শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মিরপুর ২ নম্বর থেকে ৬০ ফুট রাস্তা দিয়ে আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ বেতার ভবন হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত, মিরপুর ১ নম্বর থেকে ও গাবতলী থেকে টেকনিক্যাল মোড় হয়ে শ্যামলী, মোহাম্মদপুর বা একই সড়কে ধানমন্ডির জিগাতলা বাস স্টপেজ পর্যন্ত লেগুনা চলাচল করতে দেখা গেছে। আরো জানা গেছে, সপ্তাহ জুড়ে সন্ধ্যার পর এবং সপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মূল সড়কে চলাচল করে লেগুনা।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) অনুমোদন নিয়ে ১৫৯টি রুটে এসব ছোট আকারের যান চলাচল করতো। বিআরটিএ প্রায় চার হাজার ৪৬৪টি লেগুনার নিবন্ধন দিলেও, ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লেগুনার সংখ্যা আরও বেশি। আর দীর্ঘদিন ধরে এসব লেগুনা রাজধানীতে চলাচল ও স্বল্প ভাড়ার কারণে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এছাড়াও রাজধানীবাসীও এই পরিবহনের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। কেননা রাজধানীর মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত।  

অন্যদিকে, লেগুনার সঙ্গে সংযুক্ত শ্রমিকরা পড়েছে বিপাকে। তাদের মতে, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করে হুট করেই লেগুনা বন্ধ করে দেওয়া একটি অমানবিক কাজ। এর ফলে যাত্রীরা বিপাকে পড়া ছাড়াও তারা বেকার হয়ে পড়ছে। তবে লেগুনা সার্ভিসের ক্ষেত্রে যে সব অনিয়ম রয়েছে (যেমন- অপ্রাপ্তবয়স্ক বা লাইসেন্সবিহীন চালকদের দিয়ে লেগুলা চালানো ও ফিটনেসবিহীন লেগুনা) সেগুলো সংশোধন করে বা আইনের সঠিক প্রয়োগ করে লেগুনা চালানো উচিত বলে মনে করেন যাত্রী-চালক সবাই।

শ্যামলী থেকে মোহাম্মদপুরগামী লেগুনার যাত্রী আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শ্যামলী থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত যদি প্রতিদিন রিকশায় যাওয়া আসা করি তাহলে দিন প্রতি আমার খরচ হবে ২০০ টাকা। সেখানে লেগুনায় শুধু ২০ টাকায় আমি গন্তব্যে যেতে পারছি। প্রতিদিন ২০০ টাকা খরচ করার মত সামর্থ্য আমার নেই। আর দূরত্বটা অনেক তাই হেঁটে যাওয়াও সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে লেগুনায় সর্বোৎকৃষ্ট পরিবহন। এছাড়া মোহাম্মদপুর পর্যন্ত বাসও চলে না। তাই লেগুনা বন্ধ করার আগে সরকারের অবশ্যই বিকল্প কোনো ব্যবস্থা চালু করা উচিত ছিল।  যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে লেগুনারাজধানীতে বেবিট্যাক্সি চলাচল যখন বন্ধ করা হয়েছিল তখন বিকল্প হিসেবে সিএনজিচালিত আটোরিকশা চালু করা হয়েছিল। সেরকম একটা কিছু করা দরকার।  

বিকল্প ব্যবস্থা চালু না করে লেগুনা বন্ধ করা ঠিক নয় মন্তব্য করে ফার্মগেট টু মিরপুর ২ নম্বরগামী লেগুনার যাত্রী ফয়সাল রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করেছিল তখন আমরা ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে হেঁটে গিয়েছি। তাই বলে এটা সম্ভব না যে সারা বছর হেঁটে হেঁটে কাজে যাবো।  

তিনি আরও বলেন, সড়কে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে বাস ও প্রাইভেটকারে। সর্ব প্রথমে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। লেগুনাতে খুব বেশি দুর্ঘটনার খবর দেখা যায় না। তারপর ওই যানবাহনটিকে বন্ধ করে দেওয়া অনেকটা অযৌক্তিক। আবার আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় মেট্রোরেলের কারণে সব সময় যে পরিমাণ যানজট থাকে সেটা থেকে দূরে থাকতেও এ রুটে লেগুনা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  

মোহাম্মদপুর থেকে ধানমন্ডির জিগাতলা রুটের লেগুনা চালক জিয়া বাংলানিউজকে বলেন, লেগুনা ছোট যানবাহন হলেও এর মালিকরা অনেক প্রভাবশালী। এজন্য রাস্তায় এখনও টুকটাক লেগুনা দেখা যায়। আর আগে ছোটদের দিয়ে লেগুনা চালানো হতো। এখন তা বন্ধ করা হয়েছে, এখন লাইসেন্সধারী চালক দিয়েই লেগুনা চালানো হচ্ছে। তবে হেলপার হয়তো কমবয়স্ক রয়েছে।  

লেগুনা অনেক জনপ্রিয় একটি যানবাহন। এতে উপার্জনও ভালো হয়। কিন্তু তা বন্ধ হওয়ায় ইতোমধ্যে আমাদের অনেক ভাইরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকে গাড়ি নিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু কারো কারো ঢাকা ছেড়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। তাই আমাদের কথা চিন্তা করে বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া এটা বন্ধ করা ঠিক হবে না।

এদিকে, রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় ভিন্ন মতামত পোষণ করেন মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সেলিম রেজা।  

তিনি বলেন, সরকারের হয়তো অন্য পরিকল্পনা আছে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে। কিন্তু মাথায় রাখা উচিৎ আর কিছুদিন পর দেশে জাতীয় নির্বাচন। আগের ইতিহাস অনুসারে জাতীয় নির্বাচনের সময় এ ধরনের শ্রমিকদের মহাসড়কে আন্দোলনের নামে ধ্বংসযজ্ঞের কাজে লিপ্ত করা হয়। তা আমরা সবাই জানি। আর ঠিক এ সময়ে যদি এই লেগুনা শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ে তাহলে তাদের বেআইনি কাজে ব্যবহার করাটা খুব সহজ হবে। তাছাড়া এই বেকার শ্রমিকরা রাজধানীতে ছিনতাই ডাকাতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সবকিছু বিবেচনা করে বিকল্প ব্যবস্থা চালু করেই লেগুনা বন্ধ করা উচিত।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
এমএমএ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।