ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দেবর-ভাবির পরকীয়ার বলি মনির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮
দেবর-ভাবির পরকীয়ার বলি মনির পুলিশের হাতে আটক ঘাতকরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: দেবর আজমল হক মিন্টু ও ভাবি কাজল রেখার মধ্যে ৮-৯ বছরের অনৈতিক সম্পর্ক। সম্পর্কের এক পর্যায় তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় মিন্টুর রড়ভাই ও কাজলের স্বামী মনিরুজ্জামান মনির।

মিন্টু তার ভাবি কাজলকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি বলেন, ‘বিয়ে করতে হলে তোমার ভাইকে সরিয়ে দিতে হবে। ’ ভাবির কথা শুনে বড়ভাই মনিরকে হত্যা করতে তিন ভাড়াটে খুনির সঙ্গে এক লাখ টাকার চুক্তি করেন মিন্টু।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় ডেকে নিয়ে মনিরকে খুন করে ভাড়াটে খুনিরা।

গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে বাড্ডার সাতারকুল এলাকার একটি মাঠ থেকে ছুরিকাঘাতে নিহত একটি অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহতের ছোটভাই মিন্টু মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেন।  

সন্দেহ এড়াতে ভাই মৃত্যুর ঘটনায় মিন্টু বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ছিনতাইয়ের কারণে হত্যা হতে পারে বলে ধারণা তাদের।  

শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ এসব তথ্য জানান।  

তিনি বলেন, ক্লু-লেস এই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ নিহত মনিরের স্ত্রী কাজলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা এবং নিজে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন কাজল।

কাজলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছোটভাই আজমল হক মিন্টু ও ভাড়াটে খুনি আব্দুল মান্নান, সোহাগ ওরফে শাওন ও ফাহিমকে গ্রেফতার করে বাড্ডা থানা পুলিশ।

পুলিশের ডিসি মোস্তাক বলেন, নিহত মনির ফেনীতে কাজ করতেন। তবে তার পরিবার থাকতো গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। মিন্টু ঢাকার একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। মাঝে একবার অসুস্থ হয়ে গ্রামের বাড়িতে গেলে ভাবির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যান তিনি।  

‘সম্প্রতি মনির বাড়ি যান, তখনই দেবর-ভাবি মিলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। সে অনুযায়ী মিন্টু তার কোম্পানিতে কর্মরত মান্নানের সঙ্গে বিষয়টি আলাপ করে। মান্নান মিন্টুর প্রস্তাবে রাজি হয় এবং এজন্য এক লাখ টাকা দাবি করে। দর কষা-কষি শেষে এক লাখ টাকা দিতেই রাজি হয় এবং ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয় মিন্টু। ’

তিনি বলেন, ঢাকায় মিন্টু তার কনে দেখার কথা বলে বড়ভাই মনিরকে ঢাকায় আসতে বলেন। ছোটভাইয়ের অনুরোধে দিনাজপুর থেকে বাসে ঢাকার গাবতলীতে আসেন মনির। তিনি ঢাকার তেমন কিছু চিনতেন না। মিন্টুকে ফোন দিলে তিনি ঘাতক মান্নানকে বন্ধু পরিচয় দিয়ে তার নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেন।  

‘পরিকল্পনা অনুযায়ী মনিরকে রিসিভ করে মান্নান বাড্ডা এলাকার সাতারকুলের নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। এসময় তাদের সঙ্গে শাওন ও ফাহিম ছিলেন। প্রথমে ফাহিম ছুরি দিয়ে মনিরের গলায় আঘাত করেন। এরপরই মান্নান তার গলায় আরও একটি আঘাত করেন। তিনি মাটিতে পড়লে মনিরের পেটে উপর্যুপরি আঘাত করে শাওন তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। ’

ঘাতকদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, খুনের জন্য অগ্রিম পাওয়া ৩০ হাজার টাকার মধ্য থেকে মান্নান নেন ১০ হাজার টাকা, ফাহিমকে দেওয়া হয় ৫ হাজার টাকা এবং বাকি ১৫ হাজার টাকা নেন শাওন। বাকি টাকা পরিশোধের আগেই সবাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মিন্টুসহ তিন ভাড়াটে খুনি কড়াইল বস্তিতে থাকতেন বলেও জানান ডিসি মোস্তাক আহমেদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮
পিএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।