ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাতক্ষীরার মিষ্টির সুনাম দেশজুড়ে

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
সাতক্ষীরার মিষ্টির সুনাম দেশজুড়ে সাতক্ষীরার সন্দেশ, প্যাড়াসহ বিভিন্ন মিষ্টি। ছবি: বাংলানিউজ

সাতক্ষীরা: স্বাদে, মানে ও গুণে অনন্য হওয়ায় সাতক্ষীরার সন্দেশ, সরপুরি, প্যাড়া ও দইসহ বিভিন্ন মিষ্টান্নের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। 

এখানকার মিষ্টির কথা উঠলেই সামনে আসে ঐতিহ্যবাহী ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, সাগর সুইটস, ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের নাম। এসব দোকানের সন্দেশ, সরপুরি, প্যাড়া ও দই যাচ্ছে সারাদেশে।

 

একই সঙ্গে এসব দোকানে উৎপাদিত রসমালাই, কুসুমভোগ, জামরুল, গোলাপ জাম, মৌচাক মিষ্টিরও চাহিদা বেশ।  

জানা গেছে, ১৯৬০ সালে গোলাম মোহাম্মদ ফকির আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী সাতক্ষীরা শহরের শহীদ কাজল সরণিতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। সেই থেকে আজ অবধি সুনামের সঙ্গে চলছে এই প্রতিষ্ঠানটি। সারাদেশে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পরিচিতি রয়েছে ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের। সাতক্ষীরার মানুষের দেখা পেলে ফকিরের সন্দেশের কথা শোনেন না, এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। আবার সাতক্ষীরা থেকে কেউ আসবে, এমন কথা শুনলে ফকিরের সন্দেশ আনতে বলতেও ভোলেন না কেউ।  

প্রায় সমসাময়িক সময়েই শেখ আব্দুর রশিদ নামে আরো একজন ব্যবসায়ী শহীদ কাজল সরণিতে প্রতিষ্ঠা করেন হোটেল সাগর। ভারতসহ সারাদেশে পরিচিতি রয়েছে সাগরেরও। সাগরের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রতিধানযোগ্য। সাগরের সন্দেশ বা সরপুরির কথা যেন ভুলতে পারেন না কেউ। রেস্তোরাঁ ধাচ পাল্টে প্রায় ১৬ বছর ধরে শুধু মিষ্টি উৎপাদন করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। সেই সঙ্গে নামও পাল্টে হয়েছে সাগর সুইটস।  

দেশের যে প্রান্তে যে ধরনের অনুষ্ঠানই হোক না কেন সাগরের সরপুরি না হলে যেন তা অপূর্ণ থেকে যায়! 

তবে, মাত্র কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে সারাদেশে দইসহ অন্যান্য মিষ্টি পাঠাচ্ছে ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।  ঐতিহ্যবাহী সাগর সুইটস ও ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।  ছবি: বাংলানিউজ
    
শুধু এই তিন প্রতিষ্ঠানই নয়, একই এলাকার মাতৃভাণ্ডার, জায়হুণ মিষ্টান্ত ভাণ্ডার, পোস্ট অফিস মোড়ের হালিমা হোটেল, বড় বাজারের সুশীল, সাহা ও নুর সুইটসে উৎপাদিত মিষ্টি স্বাদে ও মানে অনন্য।  

এসব প্রতিষ্ঠানে নলেন গুড়ের সরপুরি ও প্যাড়া (শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয়), সাদা সন্দেশ, রসমালাই, সানার জিলাপি, জামরুল, গোলাপ জাম, মৌচাক, বালিশ চমচম, দানাদার, দুধ মালাই (শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয়), ক্ষীর সন্দেশ, রসগোল্লা, দইসহ নানা রকম মিষ্টি তৈরি হয়।  

জানা গেছে, দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ দুগ্ধ উৎপাদনকারী জেলা সাতক্ষীরা। দুধের সহজলভ্যতা এই জেলার মিষ্টি উৎপাদন ও বিকাশে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। সঙ্গত কারণেই উৎপাদিত মিষ্টির দামও তুলনামূলকভাবে কম।  

প্রতিদিনের উৎপাদন সম্পর্কে ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের ম্যানেজার ওসমান গণি বাংলানিউজকে বলেন, তাদের কারখানায় প্রতিদিন রাতে তিন থেকে সাড়ে তিনশ’ কেজি দুধের মিষ্টি তৈরি হয়। শো’কেসে সাজানোর আগেই বিক্রি হয়ে যায় সব। ক্রেতাদের মধ্যে বড় অংশই জেলার বাইরের। তবে, পাইকারি ক্রেতা নন তারা। সাতক্ষীরায় বেড়াতে এসে ফকিরের সন্দেশ নিয়ে যাবে না, তা কি হয়?

উৎপাদিত মিষ্টির স্বাদ, গুণ ও মানে প্রতিষ্ঠাকাল ও বর্তমানের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশি গরুর দুধের মিষ্টি ভালো হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশি গরুর দুধ পাওয়া দুষ্কর। তাই জার্সি গরুর দুধ সরবরাহ বেড়েছে। এই আর কি।  

ফকির মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে ১৯ বছর ধরে কাজ করছেন রবিউল ইসলাম বাবু। বাংলানিউজকে তিনি জানালেন তার অভিজ্ঞতার কথা।  

তিনি বলেন, ভাই, ১৯ বছর ধরে এখানে কাজ করি। কোনোদিন আমাদের মিষ্টি সম্পর্কে কোনো অভিযোগ শুনিনি। মিষ্টি তৈরির পরপরই সব বিক্রি হয়ে যায়। অনেকে আগে খেয়ে স্বাদ ও মান পরীক্ষা করেন, তারপর কেনেন। তাতে আমরাও খুশি হই। আবার অনেকে বিকাশে টাকা পাঠালে আমরা গাড়িতে মিষ্টি পাঠিয়ে দেই।  

রাজধানী থেকে সাতক্ষীরায় এসেছিলেন ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। ফেরার পথে ফকিরের সন্দেশ ও সাগরের সরপুরি নিতে ভুল করেননি। বললেন, এর আগেও সাতক্ষীরায় এসেছি। তখন সহকর্মীর পরামর্শে মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলাম। আর এবার আসার সময় আপনার ভাবি বলেছিলেন, সাতক্ষীরা থেকে মিষ্টি নিয়ে যেতে।  

সাগর সুইটসের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, ভাই পাকিস্তান আমলে আমাদের এই প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। এখনও সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছি। কেউ কোনোদিন অভিযোগ দিতে পারেনি। কলকাতা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী, যারা সাতক্ষীরায় আসেন তারা সাগর বললে এক নামে চেনেন। এমনিতেই সাতক্ষীরার মিষ্টির আলাদা সুনাম রয়েছে সারাদেশে। আমরা মিষ্টিতে ভেজাল দেই না।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।