ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যশোরে কুইন্স হসপিটালে প্রসূতির মৃত্যু, ভাংচুর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
যশোরে কুইন্স হসপিটালে প্রসূতির মৃত্যু, ভাংচুর পিংকী-ছবি:সংগৃহীত

যশোর: যশোরে ভেজাল ইনজেকশনে পিংকী (৩০) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে বেসরকারি হসপিটাল কুইন্সে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

এ সময় ভুক্তভোগীদের রোষানল থেকে রেহায় পেতে হসপিটালে দায়িত্বরত চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মচারীরা পালিয়ে যায়। পরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

 

সংশ্লিষ্টরা বাংলানিউজকে বলেন, যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের পুত্রবধূ এবং বিশিষ্ট কম্পিউটার ব্যবসায়ী পার্থ প্রতীম দেবনাথ রথির স্ত্রী পিংকীর প্রসব বেদনায় শহরের কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গাইনি চিকিৎসক ডা. জাকির হোসেনের তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পিংকি একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করেন।

রথি-পিংকী দম্পত্তির বিবাহিত জীবনের আট বছর পরে চিকিৎসার মাধ্যমে প্রথম ফুটফুটে সন্তান জন্ম হওয়ায় আনন্দে মেতে ওঠে গোটা পরিবার। শহরে রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত মোহিত নাথের পরিবারে নতুন অতিথির আগমনে নবজাতকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে, আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা যায় পরিবার-পরিজনদের।  

তবে হঠাৎ রাত ১২টার দিকে শহরে জানাজানি হয় কুইন্স হসপিটালে ভেজাল ইনজেকশ পুশের কারণে প্রসূতি পিংকীর মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীর পরিবার-পরিজন ও শুভাকাঙ্খীরা হাসপাতালে ছুটে আসে। এ সময় অপচিকিৎসার অভিযোগ তুলে হাসপাতালটির সপ্তম তলায় আসবাবপত্র তছনছ করে। ভেঙে ফেলে জানালার গ্লাসগুলো।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বাংলানিউজকে বলেন, অপচিকিৎসার অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীর লোকজন হাসসপাতাল ভাংচুরের সময় অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনরা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। একপর্যায়ে হাসপাতালে অবস্থানরত চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মচারীরা পালিয়ে যান। পরে সংবাদ পেয়ে কোতোয়ালী মডেল থানা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত লোকজনকে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

মৃত প্রসূতির ভাসুর (স্বামীর বড় ভাই) রানা নাথ বাংলানিউজকে জানান, দুপুরে সিজারের মাধ্যমে পিংকী মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। এরপর থেকে মা ও নবজাতক সুস্থ ছিলেন। তবে সন্ধ্যায় ডা. জাকির প্রসূতির জন্য ‘ওমেপ’ নামে একটি ইনজেকশন (ওমিপ্লাজন গ্রুপ) লেখেন। রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের সেবিকা জেসমিন ওই ইনজেকশনটি প্রসূতির শরীরে পুশ করেন। এর কিছু সময়ের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন পিংকী।

তবে ডা. জাকির হোসেনের দাবি, রোগীর স্বজনরা পাশের একটি ফার্মেসি থেকে ‘ওমিজিড’ নামে ইনজেকশন কেনেন, যেটি ছিল ভেজাল। এই ‘ভেজাল’ ইনজেকশন পুশ করার কারণে প্রসূতির মৃত্যু হতে পারে।  

যদিও, উত্তেজিত ভুক্তভোগীদের দাবি ওই ভেজাল ইনজেকশন বাইরে থেকে কেনা হয়নি, নিজেদের পিঠ বাঁচাতে মিথ্যা কৌশল নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।  

যশোর কোতোয়ালী মডেল থানার (ওসি, তদন্ত) আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, কুইন্স হসপিটালে ভাংচুরের খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে, বর্তমানে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।

এ ব্যাপারে জানতে কুইন্স হসপিটালের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবীর কবুর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে হসপিটালটির ব্যবস্থাপক মিঠু সাহা দাবি করেন, রোগী মৃত্যুর খবর জেনে কিছু উত্তেজিত লোকজন সামান্য ভাংচুর করেছে। এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৪০৪ ঘণ্টা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ 
ইউজি/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।