ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফিরলো ইন্টারকন্টিনেন্টাল 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
ফিরলো ইন্টারকন্টিনেন্টাল  ঢাকায় আবার চালু হয়েছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে সাজানো হোটেলটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।

 

১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিলো দেশের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের। স্থপতি উইলিয়াম বি ট্যাবলারের চমৎকার নকশার এ হোটেলটি আজও চমৎকার স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন।

এটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামেই চলে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। এরপর স্টারউড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় ১৯৮৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ঢাকা শেরাটন হোটেল নামে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে। শেরাটনের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘রূপসী বাংলা হোটেল’ নামে এটি পরিচালিত হয়।

হোটেলটির মালিক সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপ (এশিয়া প্যাসিফিক) প্রাইভেট লিমিটেডের (আইএইজি) সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধের পর ২০১৫ সালের মার্চে সংস্কার কাজ শুরু হয়।

রূপসী বাংলা হোটেলে কক্ষ ছিলো ছোট-বড় মিলে ২৭২টি। সংস্কারের পর সংখ্যা কমে ২৩১টিতে দাঁড়িয়েছে। আয়তনের দিক থেকে কক্ষের আকার দাঁড়িয়েছে ২৬ থেকে ৪০ স্কয়ার মিটার। বিশ্বমানের অতিথি সেবা নিশ্চিত করতে পরিবর্তন করা হয়েছে সুইমিং পুল ও ডাইনিং হলের স্থান। এর আগে হোটেলটির বলরুম ছিল একদিকে, উইন্টার গার্ডেন নামে সবচেয়ে বড় হলরুমের অবস্থান ছিল আরেক দিকে। এখন দু’টি এক করে দেওয়া হয়েছে। হোটেলটির মূল ফটকও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেতরের সুইমিং পুলটিও স্থানান্তর করে সাজানো হয়েছে নতুন করে। গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় নিয়ে বাড়ানো হয়েছে সুযোগ-সুবিধা। সংস্কার কাজে প্রায় ৬২০ কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে। বাহিরের দেওয়াল ও ছাদ ছাড়া মোটামুটি বাকি সবই সংস্কার করা হয়েছে।

১৯৭১’র ২৫ মার্চের কালোরাতে জীবন বাজি রেখে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার ছবি ধারণ করেছিলেন হোটেলে অবস্থানরত বিবিসির বিখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি ও সাইমন ড্রিং, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) পাকিস্তান ব্যুরোর প্রধান আর্নল্ড জেইটলিন, ক্লেয়ার হলিংওর্থ, ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদক ডেভিড গ্রিনওয়ে। এসব ছবির মাধ্যমে বিশ্ব জানতে পেরেছিলো বাংলাদেশ কী নৃশংসতার স্বীকার হয়েছে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: পিআইডিহোটেলটি উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনন্য সাক্ষী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল বাংলাদেশের সাফল্যের ইতিহাসে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সাথে ১৯৭১ সালের মহন স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাস অতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।  

''এটিই ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল। ১৯৬৬ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা নামে যখন এটি চালু হয়, তখন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানীর নাম ছিলো ঢাকা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার সাক্ষী এই হোটেল। '

তিনি বলেন, ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর থেকে এখানে অনেক রাজনৈতিক ঘটনা সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এখানেই দুই দফা আক্রমণ চালিয়েছিলেন সেক্টর দুইয়ের অধীন ক্র্যাক প্লাটুন খ্যাত গেরিলারা। ১৭ জন তরুণের মুক্তিযোদ্ধার দল বাঙালি জাতির মুক্তি এবং পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঢাকায় প্রথম গেরিলা অপারেশন ‘অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-হিট এন্ড রান’ চালাতে আসেন। অত্যন্ত সফল এ অভিযানের মাধ্যমেই মূলত বাঙালির প্রতিরোধ যুদ্ধ সম্পর্ক জানতে সক্ষম হয় পুরো পৃথিবী।

'আজ যখন ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কথা বলছি তখন মনে পড়ছে সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের সাথে জড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের বহু স্মৃতি। এটি আমাদের জন্য নিশ্চয়ই আনন্দের বিষয় যে, হোটেলটি পুনরায় আগের চেয়ে আরও আধুনিক সেবা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নতুন উদ্যমে চালু হতে যাচ্ছে। '

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ৬০ বছরের পুরনো ভবন সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রূপে সেঁজেছে পাঁচতারকা এই হোটেল। ভবনের মূল কাঠামো ঠিক রেখে যুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মোগল স্থাপত্যশৈলী। সঙ্গে আধুনিক সময়ের চাহিদা মেটাতে আনা হয়েছে অবকাঠামোগত পরিবর্তন। এটি অনেক বছরের পুরনো একটি হোটেল। বর্তমানে আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক মানের আরো আধুনিক হোটেল রয়েছে। সে হিসেবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে হোটেলটিকে নতুন রূপ দেওয়ার দরকার ছিলো।  

'আন্তর্জাতিক মান রক্ষার জন্য হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ইন্টারকন্টিনেন্টালে যে ধরনের সেবা ও সুবিধা পাওয়ার কথা, এই হোটেলটিকেও সেভাবে অতিথিদের জন্য নতুন রূপে গড়ে তোলা হয়েছে। ' 

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সম্পূর্ণ গ্রিন হোটেল হিসেবে এবং সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ এই হোটেলটি বিশ্ব গ্রাহকদের কাছে নতুন এক চমক সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। এই হোটেল বিদেশি পর্যটক ও অতিথিদের ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত কাজের ক্ষেত্রে আরও আকৃষ্ট করবে। ফলে দেশের জিডিপিতে যোগ হবে বাড়তি মাত্রা।

‘বাংলাদেশ আজ প্রতিটি সেক্টরে বিশ্ব সভায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ইতিহাস-ঐতিহ্য আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় নতুনভাবে সজ্জিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল দেশে ও বিদেশে সুনাম কুড়াতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।  

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান, বিমান ও পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হক, বিএসএল (বাংলাদেশ সার্ভিস লি.) এর এমডি মোকাব্বের হোসেন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের আঞ্চলিক প্রধান ডেভিড।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
এমইউএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।