ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ভাঙন আতঙ্কে ঈদ আনন্দ নেই কমলনগরে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮
ভাঙন আতঙ্কে ঈদ আনন্দ নেই কমলনগরে ভাঙন ঠেকাতে দেওয়া হয়েছে জিও ব্যাগ

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে সারা বছর ধরে মেঘনার ভাঙন অব্যাহত থাকে। তবে বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়। ভেঙে যায় ফসলি জমি, ঘর-বাড়ি, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। নিঃস্ব হয় শত শত পরিবার।

চলতি বর্ষা মৌসুমেও ভাঙছে মেঘনা উপকূল। ভাঙনের মুখে পড়েছে নদী তীররক্ষা বাঁধও।

গত এক মাসে বাঁধে ধস নেমেছে তিন বার।  

এদিকে, প্রতিদিনই ভাঙছে উপজেলার ফলকন, সাহেবেরহাট, কালকিনি ও পাটারিরহাট ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ জনপদ। এমন পরিস্থিতিতে মেঘনাপাড়ের লক্ষাধিক মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন। যা তাদের ঈদ আনন্দ মলিন করেছে।

কমলগরের মেঘনাপাড় অরিক্ষিত। বেড়িবাঁধ নেই। একদিকে ভাঙন অন্যদিকে জোয়ারের পানি এখানকার মানুষকে সরসময় তাড়া করে। নির্মাণাধীন নদীর তীর রক্ষাবাঁধ ভাঙনের কবলে পড়ায় স্থানীয়রা আরও বেশি হতাশ হয়ে পড়েন। এসব পরিস্থিতির কারণে মেঘনার পাড়ে মানুষের মধ্যে এখন কেবলই হতাশা। ঈদ নিয়ে তাদের ভাবনা নেই। তারা চরম ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন।  

লক্ষ্মীপুরের মেঘনা তীরে কমলনগর উপজেলার অবস্থান। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়ন নদীতে ভাঙছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও ৩টি ইউনিয়ন। দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে কমলনগরের মেঘনা নদী অব্যাহতভাবে ভাঙছে। তবে গত ৯/১০ বছর ধরে ভাঙনের তীব্রতা কয়েকগুন বেড়েছে।  

জানা গেছে, নদী ভাঙন প্রতিরোধে উপজেলার মাতাব্বরনগর এলাকায় এক কিলোমিটার তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণাধীন। কিন্তু যথাযথভাবে কাজ না করায় ওই তীর রক্ষাবাঁধ এক বছরে আট বার ধস নামে।  

স্থানীয়রা জানায়, দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দুই পাশের এলাকায় অব্যাহতভাবে ভাঙছে। আশপাশের এলাকায় ভাঙনের কারণে বাঁধ ধসে পড়েছে। অনিয়মের মধ্য দিয়ে নিন্মমানের কাজ করায় বারবার বাঁধে ধস নামছে বলে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন থেকে অভিযোগ করে আসছেন।  

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এখানে ভাঙন প্রতিরোধে আন্তরিকভাবে কারো প্রচেষ্টা নেই। রামগতির উপজেলার সদর আলেকজান্ডারে ভাঙন প্রতিরোধ করা হলেও কমলনগরের ক্ষেত্রে কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। যে কারণে নদী ভাঙছে। ভাঙনের মুখে থাকায় তাদের মধ্যে ঈদ আনন্দ নেই। নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা হলেই তাদের মধ্যে আনন্দ ফিরবে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের  নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে এক কিলোমিটার বাঁধ যথেষ্ট নয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হলে বাঁধ রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। ভাঙন প্রতিরোধে আরো সাড়ে ১৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে।  

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীররক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার, রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটার সফলভাবে বাস্তবায়ন করে। এদিকে ওই বরাদ্দের ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি.। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ওই বছর নিম্মমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অনিয়মের প্রতিবাদে ও যথাযথভাবে কাজ করার দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮
এসআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।