ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদে রোহিঙ্গাদের পাতে থাকবে মাংস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৮
ঈদে রোহিঙ্গাদের পাতে থাকবে মাংস নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমাচ্ছে রোহিঙ্গারা (ফাইল ছবি)

কক্সবাজার: গত বছরের ঈদুল আযহার সময় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জীবন ছিল সংশয়ে। প্রাণে বাঁচতে তারা আশ্রয় নিয়েছিল বন-জঙ্গল, পাহাড় আর ধানক্ষেতে। নিজ দেশের সেনাবাহিনীর হাত থেকে জীবন বাঁচাতে মাইলের পর মাইল হেঁটে, ছোট ডিঙিতে করে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে কিংবা নদী সাঁতরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় লাখ লাখ রোহিঙ্গা। 

সেসময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এক অনন্য মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন থেকেই বাস্তুহারা জনগোষ্ঠী হিসেবে উখিয়া আর টেকনাফে রয়েছে মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা।

এরপর কেটে গেছে এক বছর। আবারও দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। গত ঈদের ব্যথা কিছুটা লাঘব করতে ঈদের দিন তাদের খাবারের তালিকায় মাংস রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর তার নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে মাঠে কাজ করছে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উখিয়া ও টেকনাফে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে সরকার। বিভিন্ন দাতা ও সেবা সংস্থার সহযোগিতায় তাদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাদের ঈদ আনন্দকে বাড়িয়ে দেওয়ার। এই লক্ষ্যে ৩০টি ক্যাম্পের এক লাখ ৯৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে কোরবানির মাংস দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শুধু রোহিঙ্গা নয়, রোহিঙ্গা আশ্রয় দিতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়া স্থানীয় দরিদ্র পরিবারগুলোতেও আমরা কোরবানির দিন পশুর মাংস বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এজন্য প্রায় ১০-১২ হাজার গবাদিপশু প্রয়োজন। দাতা ও এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,  মাংস সরবরাহ ও বিতরণ মনিটরিং করতে জেলা প্রশাসককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে জেলা প্রশাসক ছাড়াও রয়েছেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরআরসি), উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার ওসি।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তে খুশিতে আত্মহারা আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

এ বিষয়ে কুতুপালং সরকারি বনভূমিতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বসতির বিভিন্ন ব্লকের মাঝি (নেতা) আবু ছিদ্দিক, আবুল কালাম, সৈয়দ আলম ও নূর কামাল বলেন, ২০১২ সাল থেকে এখানে রয়েছি। কিন্তু অবৈধভাবে অবস্থান করায় এতদিন কোনো সহযোগিতা পাইনি। তবে গত বছরের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের বর্বরতার পর পুরনো-নতুন সব রোহিঙ্গাই তালিকাভুক্ত হয়েছে। এরপর থেকে সরকারিভাবে সব ধরনের সহযোগিতা পেয়ে আসছি। এবার সরকার কোরবানির ঈদে রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদাভাবে পশু কোরবানির ব্যবস্থা করছে জানতে পেরেছি। মনে হচ্ছে, আশ্রিত জীবনে এবারই প্রথম রোহিঙ্গারা ঈদুল আযহার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।  

মধুরছড়ার ‘ও’ ব্লকের বাসিন্দা সলিমউল্লাহ বলেন, প্রাণ বাঁচাতে এপারে এলেও মনটা বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে পড়ে আছে। সেখানে নিজেদের ডজনাধিক গবাদিপশু ছিল, ছিল ধানের জমি। জমা থাকতো ধান। ব্যবসার দোকান ছিল। কোরবানি দেওয়া হতো নিজেদের পালিত পশু, কত আনন্দ হতো। ঈদুল আযহার চাঁদ উঠার পর থেকে শুধু তাই মনে ভাসছিল। ধরে নিয়েছিলাম এবারে হয়তো কোরবানির মাংসও চোখে দেখব না। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি এদেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য মাংসের ব্যবস্থা করেছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, ২০ আগস্ট রাত ১১টা পর্যন্ত ৬ হাজার গরু ত্রাণ হিসেবে পেয়েছি। আরও হাজার তিনেক পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। যা পাওয়া যাবে সেসব গবাদি পশুর মাংস প্যাকেটজাত করে বণ্টন করা হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, যত পশু উপহার হিসেবে পাওয়া যাবে তার ২৫ ভাগ স্থানীয়দের জন্য ও বাকিগুলো রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি পরিবার যাতে অনন্ত ঈদের দিন মাংস খেতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৮
টিটি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।