ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

শেষ মুহূর্তে দেশি গরুর দাম কমায় বিক্রি তুঙ্গে

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৮
শেষ মুহূর্তে দেশি গরুর দাম কমায় বিক্রি তুঙ্গে রাজশাহীর জমজমাট পশুর হাট/ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: ত্যাগের মহিমায় দুয়ারে ঈদুল আজহা। রাত পোহালেই খুশির ঈদ। তাই জনস্রোত এখন কোরবানির পশুর হাটমুখী। সকাল থেকে পশু কেনাবেচায় যেনো রাজ্যের ব্যস্ততা ভর করেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাথায়। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই কারো। শেষ মুহূর্তের কেনাবেচায় রাজশাহীর সিটি হাটে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। পশুর আমদানি ও ক্রেতা দুইই বেড়েছে। 

শেষ দিনে হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ীদের মুখে। রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এবং শহরের কাছে হওয়ায় সিটি হাটেই ছুটছেন ক্রেতারা।

মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকেই কেনাকাটায় সরগরম হয়ে উঠেছে এই পশু হাট। গরু আর খাসির আমদানিও হয়েছে প্রচুর। পিছিয়ে নেই মহানগরীর উপকণ্ঠে থাকা কাটাখালির মাসকাটা দীঘি, গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি, পুঠিয়ার বানেশ্বরের পশু হাটও।

পশুহাট ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় গরু আসা নিয়ে এখন আর ব্যবসায়ীদের মনে কোনো শঙ্কা নেই। হাটে কিছু ভারতীয় গরু থাকলেও অধিপত্য রয়েছে দেশি গরুরই। ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর কাছেই ক্রেতাদের ভিড় বেশি। তবে আশার কথা হচ্ছে দুপুরের দিক থেকে দাম কমতে শুরু হয়েছে।  

খেই ধরে না রেখে অল্প লাভ হলেও সামান্য দর-দামেই এখন নিজের পশুটি ছেড়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। আর শেষদিন বলে ক্রেতারাও সেই সুযোগ হাতছাড়া করছেন না। ফলে বৃহত্তম সিটি পশুর হাট এখন জমজমাট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষিতে হাটের প্রতিটি প্রান্ত থেতেই কানে ভেসে আসছে বিপুল লোক সমাগমের ধ্বনি। উভয়পক্ষই চেষ্টা করছেন কীভাবে আরও কম দামে গরু-ছাগল পাওয়া যায়, আর একটু কম দাম হলেও তা বিক্রি করে কীভাবে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা যায়।

ক্রেতা-বিক্রেতা ও হাট কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে তিন দিন থেকে হাট জমে উঠেছে। তবে আজই লোক বেশি এবং অন্যদিনের তুলনায় দামও কম। সকাল ৬টা থেকেই মহানগরীর আশপাশে থেকে হাটে আসা শুরু করেছে গরু, ছাগল ও মহিষ। দুপুর ১২টা গড়াতেই জমে ওঠে হাট। পশু হাটে এখন বেচা-কেনা চলছেই। বিকেলে মুখরিত হয়ে উঠবে হাট ও তার আশপাশের এলাকা। সন্ধ্যা গড়িয়ে এ বেচা-কেনা চলবে ভোররাত পর্যন্ত।

মহানগরীর শালবাগান এলাকার রেজাউল করিম জানান, বেলা ১১টায় হাটে এসেছেন। গরু দেখেছেন ঘুরে ঘুরে। গত কয়েকদিন আগেও দাম বেশ চড়া ছিল। কিন্তু আজকের দাম অনেকটাই নাগালের ভেতরে। তাই দুপুর গড়ানোর আগেই দরদাম করে ৫৪ হাজার ৫০০ টাকায় গরু কিনেছেন তিনি।

তিনি বলেন, বড় গরু দাম কম। হাটে দেশি মাঝারি ও ছোট আকারের গরুরই দাম হাঁকানো হচ্ছে বেশি। তবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকৃতির গরু ৪৫ থেকে ৬০ হাজার ও বড় আকৃতির গরুগুলো ৬৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় মিলছে।  

তবে এর ওপরে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিশালাকৃতির গরুও রয়েছে বলে জানান তিনি।

এছাড়া ছাগলের দামও আজ আগের দিনের তুলনায় কম। ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের ছাগলের দাম ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১৪ থেকে ১৮ কেজি ওজনের ছাগলের দাম ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা ও বড় আকৃতির ছাগল ১২ থেকে ২০ হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে বলে জানান সিটি হাটে আসা নিউমার্কেট এলাকার শফিকুজ্জামান বিশাল নামে আরেক ক্রেতা।  

রাজশাহীর পবার নারিকেল বাড়িয়া থেকে আজ হাটে ৫টি গরু নিয়ে এসেছেন রাফেদ আলী। তার সবচেয়ে বড় গরুটির দাম হাঁকছেন তিনি ৯০ হাজার টাকা। বাকিগুলো ৪৫ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে। কোরবানির মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত হাটে তিনি ১৫টি গরু বিক্রি করেছেন।  

এক প্রশ্নের জবাবে রাফেদ আলী বলেন, আমাদের গরুর খামার আছে। সারা বছর গরু পালনের পর হাটে নিয়ে এসেছি। লাভ একটু বেশি আসা করেছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে খুব বেশি লাভ হচ্ছে না।  

সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বাংলানিউজকে বলেন, এবার ভারতীয় গরুর আমদানি কম। দেশি গরুর মজুদ ও চাহিদা দুটোই বেশি। বিক্রেতারা প্রথম দিকে চড়া দাম হাঁকলেও আজ সে অবস্থান থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন। ফলে সবাই গরু কিনেই বাড়ি ফিরছেন। হাটে জাল টাকা শনাক্তে মেশিন বসানো হয়েছে। হাসিল নিয়েও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একজন চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে৷ সব মিলিয়ে শেষ সময়ে সিটি পশুরহাট এখন জমজমাট।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৮
এসএস/এএ  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।