ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

১৮০০ স্প্লিন্টার আঘাত করলেও আ’লীগ ছাড়েননি মাহবুবা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৮
১৮০০ স্প্লিন্টার আঘাত করলেও আ’লীগ ছাড়েননি মাহবুবা মাহবুবা পারভীন

সাভার (ঢাকা): দেশের জন্য রাজনীতি করতে গিয়েই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় রক্তাক্ত হয়েছিলেন। শরীর ঝাঁঝরা করে ফেলেছে শত শত স্প্লিন্টার। তবু রাজনীতি ছাড়েননি। ছাড়েননি স্বাধীনতার নেতৃত্বদাতা দল আওয়ামী লীগকে। শরীরে ১৮শ স্প্লিন্টার নিয়েই রাজনীতি করছেন তিনি। দলের প্রতিটি মিছিল-মিটিংয়ে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখে থেকে অংশ নিচ্ছেন। দেশের উন্নয়নের নিমিত্তে দলের পক্ষে ভোটও প্রার্থনা করছেন।

তিনি সাভারের মাহবুবা পারভীন। ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এখন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়া তিন শতাধিক মানুষের মধ্যে তিনি একজন।

বাংলানিউজকে আলাপ তুলতেই সেই ভয়াবহ স্মৃতিচারণ করছিলেন মাহবুবা, ‘খুব ভালো নেই আমি। ১৮শ স্প্লিন্টার আমার দেহটাকে ঝাঁঝরা করে ফেলেছে। এখন আমি দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক ঘণ্টাও ঘুমাতে পারি না। আর ঘুমাতে না পারলে সেই মানুষ কখনও ভালো থাকতে পারে না। ’

শারীরিকভাবে এমন অসুস্থ থেকেও কেন রাজনীতি করেন? মাহবুবা বলেন, ‘আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তাই আমি ছোট একজন মানুষ হয়েও আমার সুন্দর জীবনটা দেশের জন্য ও আওয়ামী লীগের জন্য উৎসর্গ করতে পেরেছি, এতে আমি খুবই তৃপ্ত। ’

গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসাটাকে অলৌকিক ঘটনা মনে হয় মাহবুবার। বলছিলেন, ‘কোরআন-হাদিসে আছে আল্লাহ মৃত মানুষকেও জীবিত করতে পারেন। তাই আমি যে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি এটা আল্লাহর একটি রহমত। আমি যখন গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম, তখন আমি স্বাক্ষরও করতে পারতাম না। এরপরও টিপ সই দিয়ে পাপপোর্ট বানিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ’

মাহবুবা পারভীনরাজনীতিতে কি পেয়েছেন? এমন প্রশ্নে মাহবুবার উত্তর, ‘রাজনীতিতে আমি পাওয়ার চাইতে বেশি দিতে পেরেছি। কারণ আমি রাজনীতি করি দেশের ও মানুষের জন্য। আমার সন্তানরা সুখে থাকুক এটাই আমি চাই। বাংলাদেশের প্রত্যেক বাবা-মায়ের সন্তানরা যেন সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে লক্ষ্য নিয়ে নতুন প্রজন্মকে সুন্দর একটি বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমি আওয়ামী লীগ করি। ’

২০০৪ সালে মাহবুবা ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নিজের সব ধরনের কাজকর্ম ফেলে রেখে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশে অংশ নেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য শেষে যখন ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দেবেন, ঠিক তখনই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে প্রাণঘাতী গ্রেনেড। চলে গুলিবর্ষণও। এতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ও পরে রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী নারী নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন তিন শতাধিক মানুষ।

যারা বেঁচে আছেন, তাদের শরীরে অসংখ্য গ্রেনেডের স্প্লিন্টার। যার যন্ত্রণায় ছটফট করতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে গেছেন। এদেরই একজন মাহবুবার বাঁ হাত এখনও অচল, চোখে কম দেখেন, ডান কানে কম শোনেন, শরীরের চামড়ার ভেতরেও ঘা হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট এমএ মাসুদের স্ত্রী মাহবুবার চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার একটাই দাবি, মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত যেন তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) বিনা পয়সায় চিকিৎসা করাতে পারেন এবং দুই ছেলে আসিফ পারভেজ ও রুশাদ জোবায়েরকে বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।

আসিফ পারভেজ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করছেন। আর রুশাদ জোবায়ের স্নাতকে পড়ছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে। সংসারের খরচ জোগাতে স্বামী এমএ মাসুদ বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৮
এএটি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।