রোববার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে আছেমকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ সময় তার কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট, একটি মোবাইল, তার প্রতিষ্ঠানের তিনটি রেজিস্টার, বিকাশের হিসাব রেজিস্টারসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও অবৈধ সম্পত্তির কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (২০ আগস্ট) সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডি'র অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মোল্যা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, পাঁচদিন আগে আছেমকে একবার গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনদিনের রিমান্ড শেষে আদালত তাকে জেলখানায় পাঠানো হয়। গতকাল জামিনে বের হয়ে গেলে অন্য একটি মামলায় তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়।
আছেমের বাবা আনোয়ার হোসেন ও তার বড়ভাই মোহাম্মদ খোবায়েদ দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া আছেন। সেই সুবাদে আছেম ও তার ছোট ভাই জাভেদ মোস্তফা মানব পাচারের জন্য প্রথমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাতে দালাল নিয়োগ করেন। মালয়েশিয়ায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোকজন সংগ্রহ করে টেকনাফ থেকে ট্রলারযোগে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ডে নিয়ে জঙ্গলে আটকে রাখেন।
তাদের আটক রেখে মৃত্যুর হুমকি দিয়ে বাংলাদেশে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করেন। এরপর পাচার লোকজনের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপণের টাকা আছেম ও তার সহযোগীদের কাছে নগদ, ব্যাংক একাউন্টে বা মোবাইল ফাইন্যানসিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠায়। যারা টাকা দিতে ব্যর্থ হয় তাদের থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মেরে ফেলা হয়। মুক্তিপণের টাকা প্রদানকারীদের পরে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের কাছ থেকে আবার টাকা দাবি করতো চক্রের সদস্যরা।
আছেম তার নিজ নামে, ছোট ভাই জাভেদ মোস্তফা, মা খদিজার নামে এবং তার সহযোগী আরিফ, একরাম, ওসমান সারোয়ারের নামে ঢাকা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফে ব্যাংকে একাউন্ট খুলে মানবপাচারের ২০-২৫ কোটি টাকা নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর বাইরে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় শতকোটি টাকা অবৈধভাবে নিয়েছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে নজরুল ইসলাম বলেন, আছেম মানবপাচারের এই টাকা দিয়ে টেকনাফে বাড়ি ও জমি কিনেছেন এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভূঁইগড়ে একটি ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
পরবর্তীতে এই মানবপাচার ব্যবসার আরও প্রসার হলে মুক্তিপণের টাকা নেওয়ার জন্য আছেম এসিএম কর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।
ঘটনার সূত্রপাত প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ২০১৪ সালে এই চক্রটি সাগরপথে সিরাজগঞ্জের মাসুদকে মালয়েশিয়ায় পাচার করে। এরপর পাচারকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে মাসুদের বাবা আ. ছালাম ইসলামী ব্যাংকের একটি একাউন্টে মুক্তিপণের টাকা পাঠান। কিন্তু এরপরও তার ছেলে মুক্তি না পেলে এ ঘটনায় তিনি ২০১৬ সালের ১১ মার্চ উল্লাপাড়া থানায় মামলা করেন।
সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম মুক্তিপণের টাকা পাঠানো ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের সূত্র ধরে চক্রটি চিহ্নিত করে। মুক্তিপণের মাধ্যমে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত বছরের মে মাসে সিআইডি বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং আইনে বনানী থানায় আরেকটি মামলা করে।
এ পর্যন্ত কতজনকে সাগরপথে পাচার করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডি'র ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, তাদের যে পরিমাণ টাকার লেনদেন, তাতে হাজারের উপরে মানুষ পাচার হয়েছে বলে ধারণা পাওয়া যায়।
আছেমকে রিমান্ডে এনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৮
পিএম/আরআর