সোমবার (২০ আগস্ট) ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরি বোঝাই হয়ে ফিরতে দেখা গেছে যাত্রীদের। ফলে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটে নেমেছে যাত্রীদের ঢল।
তবে ঘরে ফিরতে পথে পথে যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এই বাড়তি ভাড়ার চাপ মাথায় নিয়েই গন্তব্যের গাড়িতে নিজের জায়গা করে নিতে প্রতিযোগিতা চলছে যাত্রীদের মধ্যে।
শিমুলিয়া ঘাট থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোটে বাড়তি ভাড়া দিয়ে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে নেমে গন্তব্যের পরিবহনে উঠতে আবারো গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে দূরপাল্লার পরিবহনগুলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে খুলনা, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, ভাটিয়াপাড়া, টেকেরহাট, বরিশাল, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন স্থানের পরিবহনেই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে।
জানা গেছে, কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে বরিশাল পর্যন্ত পরিবহনগুলো নিচ্ছে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা, খুলনা সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’, গোপালগঞ্জ ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’, ভাটিয়াপাড়া আড়াইশ’ টাকা। দূরপাল্লার পরিবহন ছাড়া লোকাল পরিবহনেও বেড়েছে ভাড়া। কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে মালিগ্রাম ও ভাঙ্গা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে ১শ’ টাকা। মাইক্রোবাসে খুলনা ও বরিশালে বর্তমানে নিচ্ছে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা। যেখানে আগে ভাড়া ছিল ২শ’ টাকা।
এসব স্থানে আগে পরিবহন ভেদে বরিশাল ২শ’ টাকা, খুলনা ২শ’, ভাটিয়াপাড়া ১৫০, গোপালগঞ্জ ১৫০ টাকা ছিল। কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে মালিগ্রাম পর্যন্ত ভাড়া ৫০ টাকা এবং ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬০ টাকা।
এদিকে কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে বরিশাল, খুলনা, নড়াইলসহ বিভিন্ন স্থানের মাইক্রোবাসেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে পরিবহনের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তিরা জানান, কাঁঠালাবাড়ী ঘাট থেকেই যাত্রী নিয়ে খুলনা, বরিশাল, গোপালগঞ্জ বা বিভিন্ন স্থানে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ফিরতে এই ঈদ মৌসুমে কোনো যাত্রী পাওয়া যায় না। পরিবহনগুলো যাত্রী নামিয়ে দিয়ে খালি ফিরে আসে। ফিরে আসার জ্বালানি খরচও ওঠে না। এ কারণে ঈদের সময় ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হয়।
বরিশালের যাত্রী ইশরাত জাহান বলেন, শিমুলিয়া ঘাট থেকে স্পিডবোটে ২শ’ টাকা নিয়েছে। যেখানে ভাড়া দেড়শ’ টাকা। সেই সঙ্গে বড় কোনো ব্যাগ থাকলে তারও ভাড়া দাবি করছে চালকেরা। এখন কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসেও পরিবহনে ডাবল ভাড়া! কোনোভাবেই কিছু কম নিচ্ছে না।
ভাঙ্গাগামী যাত্রী রুহুল আমিন বলেন, ৬০ টাকার ভাড়া ১শ’ টাকা দিতে হচ্ছে। লঞ্চেও ৩৫ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা দিয়ে এসেছি। ঈদ আসলেই ঘাটে নৌযান ও পরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের উৎসব চলে। আমাদের এসবের ভোগান্তি নিয়েই ঘরে ফিরতে হয়।
বিআইডব্লিউটিসি’র কাঁঠালবাড়ী ঘাট সূত্রে জানা গেছে, কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে যাত্রীদের চাপ মোকাবিলায় ৮৬টি লঞ্চ ও দুই শতাধিক স্পিডবোট রয়েছে। গত ১০ দিন নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হলেও শনিবার দুপুর থেকে ফেরি চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক। লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিতে করে গন্তব্যে ফিরছে সাধারণ মানুষ।
শিবচর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কাঁঠালবাড়ী ঘাটে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, ভ্রাম্যমাণ আদালতের একাধিক টিমসহ অসংখ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সারাক্ষণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে। নৌরুটের পদ্মা নদীতেও র্যাব ও নৌপুলিশের টহল রয়েছে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান আহমেদ জানান, যাত্রীরা যেন কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা রয়েছে।
বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেলে অবশ্যই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৮
আরএ