নাশকতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মহানগরী ও জেলার উপজেলা সদরগুলোতে র্যাব-পুলিশের প্রায় আড়াই হাজার সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন, নিশ্চিত করেছেন র্যাব-পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরমধ্যে পোশাকধারী, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা (ডিবি) ও বিশেষ শাখা (সিটিএসবি) পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত টিম নিরাপত্তায় কাজ করে যাবে।
বিশেষ করে ঈদের দিন বড় জামাতগুলো, যেখানে বিশিষ্টজনেরা ঈদের নামাজ আদায় করবেন, সে হিসাবে শাহী ঈদগাহ ও হযরত শাহজালাল (র.) মাজার, শাহপরাণ (র.) মাজার, আলিয়া মাদ্রাসা ময়দান, কালেক্টরেট ভবন এলাকায় ঘিরে থাকবে অধিকাংশ নিরাপত্তা বলয়। পাশাপাশি অন্য ঈদগাহ ও মসজিদগুলোতেও পুলিশ মোতায়েন রাখা হবে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, সিলেটে যে নয়টি ইস্যুতে নিরাপত্তা দেওয়া হবে, তারমধ্যে ঈদের আগে ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টির খপ্পর থেকে মানুষকে বাঁচাতে, জালটাকা
কারবারিদের প্রতিহত করতে, গাড়িযোগে কোরবানির গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা, সড়কে-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা দূরীকরণে, ঈদের দিন ঈদ জামায়াতের নিরাপত্তা এবং ঈদের পরের তিনদিন ফাঁকা নগরীর বাসা-বাড়িতে চুরি-ডাকাতি, চামড়া পাচাররোধ ছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তায় থাকছে পোশাকে-সাদা পোশাকে প্রায় ৩ সহস্রাধিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, ছিনতাই প্রতিরোধে মাঠে ছদ্মবেশে থাকছে চৌকুশ সুন্দরী নারী পুলিশ। অজ্ঞাত পার্টির তৎপরতারোধে হাটে চা দোকান বসানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনে চলছে বাড়তি তৎপরতা। জালটাকা প্রতিহতে বাজারগুলোতে জানটাকা শনাক্তকরণ মেশিন বসানো হয়েছে।
এছাড়া ঈদের প্রতিটা বড় জামাতে মাইন ডিটেক্টর ছাড়াও মেটাল ডোর দিয়ে প্রবেশ করানো হবে মুসল্লিদের। সেসঙ্গে বাইনোকোলারে দৃষ্টিসীমা পর্যবেক্ষণে রাখা ছাড়াও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেও পর্যবেক্ষণ করা হবে সার্বিক পরিস্থিতি। ঈদের দিন বিনোদনকেন্দ্র, সিনেমা হলেও নিরাপত্তা দেবে পুলিশ।
ঈদ পরবর্তী তিনদিন বাসা বাড়িতে চুরি-ডাকাতি ও ফাঁকা সড়কে ছিনতাইরোধে, দেশি-বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তায় এবং চামড়া পাচাররোধেও তৎপর থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তিন ধাপের নিরাপত্তায় সিলেট মহানগর জেলার প্রতিটি উপজেলায় পুলিশ ও র্যাবের অন্তত আড়াই হাজার ফোর্স কাজ করবে।
সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মুহম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বাংলানিউজকে বলেন, ৩দিনের নিরাপত্তায় পোশাকে সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। সেসঙ্গে সাদা পোশাকে পুরুষের পাশাপাশি নারী পুলিশও নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ঈদে সিলেট জেলার ১৩ উপজেলায় অন্তত ১শটি হাট বসেছে। হাটগুলোতে গরু ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তায় চায়ের দোকান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যাতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিষক্রিয়াযুক্ত কিছু না খাওয়াতে পারেন। এছাড়া জালটাকা শনাক্তে মেশিন দেওয়া হয়েছে বাজারে বাজারে। ঈদেরদিন নিরাপত্তায় ঈদ জামাত কেন্দ্রিক থাকবে নিরাপত্তা এবং ঈদের পরে সিলেটে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশও নিরাপত্তা দেবে। সব থানায় ওসিকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈদে নিরাপত্তায় অন্তত ৭ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে সিলেটে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯) অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ আগে হাটবাজার, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন কেন্দ্রিক নিরাপত্তা জোরদারে রয়েছে র্যাবের টহল টিম। এছাড়া প্রতি হাটে জালটাকা ব্যবসায়ীদের ধরতে রয়েছে র্যাবের বিশেষ টিম। বিশেষ করে মহাসড়কে পশুবোঝাই ট্রাক নিয়ে বিক্রেতারা যাতে নির্বিঘ্নে আসতে যানজটে না পড়েন, সেক্ষেত্রে বিশেষ নজরদারি রয়েছে। ফেসবুকে চার ঘণ্টা পর পর রোড ট্রাফিকের আপডেট দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে মানুষ র্যাবকে চায়। তাই মানুষের চাহিদার তুলনায় ফোর্স সংখ্যা অপ্রতুল। এরপরও তিনদিন পর পর্যন্ত নিরাপত্তায় র্যাবের ৫শতাধিক ফোর্স নিয়োজিত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
এনইউ/এএটি