ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৬ দিন পর কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, ২ ঘাতক আটক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
৬ দিন পর কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, ২ ঘাতক আটক বাম থেকে নিহত সবুজ ও হত্যাকারীরা

বাগেরহাট: বাগেরহাটের চিতলমারীতে নিখোঁজ হওয়ার ৬ দিন পরে সবুজ বিশ্বাস (১৭) নামে এক কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই স্কুল শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।

রোববার (১৯ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা সদরের লাল্টু বিশ্বাসের কোচিং সেন্টারের পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কচুরিপানা ওয়ালা ডোবা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে চিতলমারী থানা পুলিশ।

নিহত সবুজ বিশ্বাস উপজেলার হিজলা ইউনিয়নের শিবপুর কাটাখালী গ্রামের পরিতোস বিশ্বাসের ছেলে এবং চিতলমারীর শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট শাখার একাদশ শ্রেণির ছাত্র।

আটক শিক্ষার্থীরা হলো- উপজেলার সদর ইউনিয়নের আড়ুয়াবর্ণী চড়পাড়া গ্রামের আবদুস সালাম খানের ছেলে সিব্বির খান ওরফে সাব্বির খান (১৭) ও একই গ্রামের মো. হাসমত খানের ছেলে মো. লিমন খান (১৭)। এরা চিতলমারী এস এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাব্বির ৯ম শ্রেণি এবং লিমন ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী। কিছুদিন আগে মেয়ে ঘটিত একটি ব্যাপারে সাব্বির ও লিমনসহ ১২ জনকে বহিষ্কার করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

সবুজের বাবা পরিতোষ বিশ্বাস জানান, ১৩ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় সবুজ। এরপর অনেক খোঁজাখুজি করেও না পেয়ে পরদিন ১৪ আগস্ট চিতলমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন সবুজের চাচা স্কুল শিক্ষক সন্তোষ কুমার বিশ্বাস।  

পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলেকে ওরা হত্যা করেছে। আমি ওদের বিচার চাই। ওদের ফাঁসি চাই।

বাগেরহাট সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৪ আগস্টের জিডির সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত করতে থাকে। পরে বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) লিমন ও সাব্বির মোবাইল ফোনে চট্টগ্রামের একটি ঠিকানা বলে ৯০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সবুজের পরিবারের কাছে। সবুজের পরিবার আমাদের ওই মোবাইলের নম্বর দেয়। ফোন নম্বর ট্রাকিং করে ওদের অবস্থান নিশ্চিত হই। শনিবার (১৮ আগস্ট) ভোর রাতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বাগছিপাড়ার একটি বাড়ি থেকে সবুজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলসহ সাব্বির ও লিমনকে আটক করি।  

পরে ওদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লাল্টু বিশ্বাসের কোচিং সেন্টারের পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কচুরিপানা ওয়ালা ডোবা থেকে সবুজের মরদেহ উদ্ধার করি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
 
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আটক দুই শিক্ষার্থী বলেছে, ১৩ আগস্ট বিকেলে সবুজের মোটরসাইকেলে ৩ জন মিলে পাটরপাড়ায় ফুটবল খেলা দেখতে যায়। সেখান থেকে ফিরে সন্ধ্যার দিকে লাল্টু বিশ্বাসের কোচিং সেন্টারের পেছনে থাকা একটি রুমে বসে সবুজকে হাতুরি দিয়ে আঘাত করে তারা। পরে গলায় বিদ্যুতের তার পেচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে হাত পা বেঁধে শরীরে কাঁথা পেচিয়ে কচুরিপানার মধ্যে ফেলে পালিয়ে যায়।

সবুজকে মেরে ফেলার কারণ হিসেবে দুই কিশোর পুলিশের কাছে বলে, মাস তিনেক আগে স্থানীয় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে লিমনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় সবুজের। ওই ঘটনায় লিমনের হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে পোচ দেয় সবুজ। এর কিছুদিন পরে লিমন, সাব্বিরসহ কয়েকজন লাল্টুর কোচিংয়ের পেছনে একটি মেয়েকে নিয়ে গল্প করছিল। এ ঘটনা সবুজ দেখে ফেলে এসএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানায়। এ প্রেক্ষিতে শিক্ষকরা লিমন ও সাব্বিরসহ ১২ জনকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করে। ছুরির পোচ ও বহিষ্কারের জেরে তারা সবুজকে হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

এদিকে সবুজের মরদেহ উদ্ধারের পরে সবুজের সহপাঠি ও গ্রামবাসীরা খুনিদের বিচারের দাবিতে থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।