ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জানেন সবাই মানেন না কেউ

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
জানেন সবাই মানেন না কেউ

ঢাকা: নিরাপদে রাস্তা পার হতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানীর প্রায় সবগুলো সড়কেই রয়েছে ফুটওভার ব্রিজ। এতোদিন অভিযোগ করা হতো নোংরা পরিবেশের কারণে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে নিরুসাহিত নগরবাসী। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রায় সবগুলো ফুটওভার ব্রিজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ফুটওভার ব্রিজের দুই পাশে ফুলের টব বসিয়ে বাড়ানো হয়েছে সৌন্দর্যও। কিন্তু এতেও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের মধ্যে তেমন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।

রোববার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজের কাছে রাস্তা পারাপারের দৃশ্য দেখে মনে হলো, অর্ধেকের বেশিরভাগ লোকই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। আসাদগেটে ফুটওভার ব্রিজের সামনে মিনেট দশেক দাঁড়িয়ে দেখা যায়, রাস্তায় দ্রুতগতিতে গাড়ি চলতে থাকলেও ফুটওভার ব্রিজকে পাশে রেখেই পথচারীরা হাত তুলে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন।

কেউ গাড়ি থামলো কি-না, সেদিকেও তোয়াক্কা না করে দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি হার্ড ব্রেক কষেও যেন বিপদ এড়াতে পারছিলেন না চালকরা।
 
মো. ইয়াছিন (৪৫) আসাদগেট থেকে রাস্তা পার হয়ে সংসদের পাশের রাস্তায় উঠলেন। কাছে গিয়ে যখন প্রশ্ন করা হয় কয়েকগজ দূরেই তো ফুটওভার ব্রিজ ছিল। এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হলেন কেন? তার সোজা উত্তর, ‘একটু ফাঁকা দেখলাম তো তাই চলে আসছি। তবে ভুল হয়ে গেছে। আসলে ফুটওভার ব্রিজ দিয়েই আসা উচিত। ’ 
যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সড়ক পারাপার পথচারীর।  ছবি: বাংলানিউজকিছুক্ষণ পর রব্বানী নামের আরেক পথচারী একই কাজ করলেন। সমান প্রশ্নে প্রায় একই উত্তর, ‘অন্যরা পার হয়েছে দেখেই আমি এভাবে আসছি। ’ যদি গাড়ির নিচে চাপা পড়তেন তাহলে কার ক্ষতি হতো? উত্তর, ‘ভুল হয়ে গেছে। ’
 
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট। সেখানে অল্প দূরত্বেই বেশ ক’টি ফুটওভার ব্রিজ। খামারবাড়ি পুলিশ বক্সের কাছেই রয়েছে একটি ফুটওভার ব্রিজ। এর কয়েকগজ পরেই আবার চর্তুমুখী ফুটওভার ব্রিজ। এরপর আনন্দ সিনেমা হলের পাশে আরেকটি, এবং কয়েকগজ এগোলেই ডেইলি স্টার অফিসের সামনে আরেকটি ফুটওভার ব্রিজ। এতোগুলো ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও অনেককেই দেখা গেলো ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে।
 
খামারবাড়ি পুলিশ বক্সের সামনে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও যেন ক্লান্ত। একের পর এক বাঁশি দিচ্ছেন, কিন্তু ঠিকই দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছেন নারী-পুরুষসহ সব বয়সী পথচারী। এতটুকুন ভ্রুক্ষেপও নেই কারও। পুলিশ সদস্যরা হাত দিয়ে দেখাচ্ছেন ফুটওভার ব্রিজ। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
 
মো. মজিবর নামে এক পথচারী গাড়ির চিপা-চাপা গলেই রাস্তা পার হলেন। অনেকটা হাঁপিয়ে উঠলেন যেন। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘হুম। ফুটওভার ব্রিজ দিয়েই আসা দরকার ছিল। অন্যরা আসছে তাই আমিও আসছি। ’ নিজে আইন মানছেন না অন্যের দোহাই কেন দিচ্ছেন? মাথা নেড়ে সোজা উত্তর, ‘ভুল হয়ে গেছে। ’ 
এমন সুন্দর ফুটওভার ব্রিজও টানছে না পথচারীদেরআসাদগেটে মধ্যবয়সী এক পথচারীর কাছে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক উঁচুতে উঠতে কষ্ট হয়। তাই ঝুঁকি নিয়েই পার হয়েছি। ’
 
তার ভাষ্যে, এ ফুটওভার ব্রিজে ২২টি ধাপ অতিক্রম করে উঠতে হয়। যেটা আসলে বয়স্ক মানুষ বা বোঝা বহনকারী মানুষের পারাপারের উপযোগী নয়।
 
এ বিষয়ে আলাপ করলে স্থপতি ইকবাল হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, পথচারীবান্ধব রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা না রেখে জোর করে লোকজনকে ফুটওভার ব্রিজে ওঠানো যৌক্তিক নয়। যেখানে সিগন্যালিং সিস্টেম আছে সেখানে তো ফুটওভার ব্রিজ দরকার নেই, সেখানে সিগন্যাল পড়লেই মানুষ পার হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটা হচ্ছে না।  

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলামোটরে কী হচ্ছে? সিগন্যাল সিস্টেমও আছে, আবার পাশেই ফুটওভার ব্রিজ। তাছাড়া ফুটওভার ব্রিজ উঁচু হওয়ায় মানুষ ব্যবহার করতে চান না। সেজন্য আন্ডারপাস করা যেতে পারে, সেখানে স্কেলেটরও ব্যবহার করা যায়। যা উন্নত দেশে হয়।  

তবে পুরো বিষয়টা ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা করেই ঠিক করা উচিত বলে মনে করেন এই স্থপতি। তার মতে, সঠিক নিয়ম সঠিক জায়গায় হচ্ছে না বলেই মানুষ তা মানছে না।
 বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
এসএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad