ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মহাসড়কের পাশে পশুর হাট, উচ্ছেদের আশ্বাস ডিসি’র 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
মহাসড়কের পাশে পশুর হাট, উচ্ছেদের আশ্বাস ডিসি’র  পশুর এ হাটের ফলে দুর্ভোগে পড়তে হবে যাতায়াতকারীদের/ছবি- অনিক খান

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ সদর উপজেলার রহমতপুর বাইপাস সংলগ্ন স্থানে কোরবানির পশুর হাটের ইজারা দিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। সেখানে ইজারার শর্তে বলা হয়েছে, ‘সড়ক/মহাসড়কের সন্নিকটসহ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন স্থানে হাট বসানো যাবে না’।

কিন্তু শর্ত লঙ্ঘন করে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মাত্র তিন গজের মধ্যে হাট বসিয়েছেন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা সাইফুল ইসলাম। রোববার (১৯ আগস্টে) বিকেল থেকে বসেছে এই হাট।

এর ফলে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগের পাশাপাশি ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

শুধু এ হাটই নয়, ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ঠিক পাশে স্থানীয় শিকারিকান্দা মাদ্রাসাকে পশুর হাটের ইজারা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ইজারার দখল হস্তান্তর প্রসঙ্গে ওই মাদ্রাসার আধা কিলোমিটারের পূর্ব দিকে খালি জায়গার কথা বলা হলেও মূলত মহাসড়কের ঢালুতেই বসেছে এই হাট। এটিও বসেছে রোববার বিকেলে।  

এর ফলে হাটের গরু আনা-নেওয়ার সময় মহাসড়কে দিব্যি যানজট সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এমনকি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কা না করে কীভাবে এই দু’টি হাটের ইজারা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।  

এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোন অবস্থাতেই ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করা যাবে না। শর্ত ভেঙে কেউ যদি মহাসড়কের ওপর হাট বসায় আমরা সেই হাট উঠিয়ে দিবো। ’ 

সরেজমিনে ওই দুই হাট ঘুরে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ময়মনসিংহ অংশের সড়ক প্রশস্ত মাত্র ১৮ ফিট। কিন্তু এই সরু মহাসড়ক ঘেঁষেই হাটের গেট থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন যানজট তৈরি হবে তেমনি ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনাও। একই অবস্থা স্থানীয় শিকারিকান্দা মাদ্রাসার পশুর হাটের।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই পশুর হাটের ইজারাদারের সহকারী মো. শামীম বাংলানিউজকে জানান, হাটের ফলে সড়কে কোন সমস্যা হবে না। যানজট যাতে না সৃষ্টি হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখবো।  

একই দাবি করে শিকারিকান্দা মাদ্রাসা হাটের ইজারাদারের কর্মচারী মো. মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এই হাটের ফলে মহাসড়কে কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরাই কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবো।  

এদিকে, মহাসড়কের পাশের এই দুই হাটকে রীতিমতো অবৈধ বলে দাবি করেছে ময়মনসিংহ পৌরসভা। এমনকি ময়মনসিংহ পৌর এলাকার ভেতর যত্রতত্র পশুর হাট না বসাতে দুই দফায় গত ৬ ও ১৬ আগস্ট জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু। কিন্তু এরপরেও সাড়া মেলেনি বলে দাবি করেন ময়মনসিংহ পৌরসভার বাজার পরিদর্শক খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এই দু’টি এলাকা ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। সিটি করপোরেশনের আগে পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এলাকা দু’টি। উপজেলা প্রশাসন কোনোভাবেই পৌর এলাকার ভেতরে এই দু’টি হাটের ইজারা দিতে পারে না। এটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।  

তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকার এখনো ইউনিয়ন পরিষদের ভাতা দিচ্ছে। সরকারের যাবতীয় সুবিধা ওই দুই ইউনিয়নে ব্যয় হচ্ছে। এটা এখনো সদর উপজেলা পরিষদের অধীনেই রয়েছে’। তবে মহাসড়কের পাশে হাট থাকলে উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।  

সংশ্লিষ্টরা জানায়, এই দু’টি হাটের ফলে ময়মনসিংহ পৌরসভার ইজারা দেওয়া ক্রীড়া পল্লি আবুল মনসুর সড়কের হাটের ইজারাদার চরম আর্থিক লোকসানের মুখে পড়বেন। একইসঙ্গে হাটের ইজারাদার নেজামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রায় ৭৬ লাখ টাকায় হাটটি নিয়েছি।  

কিন্তু অবৈধ এসব হাট চলতে থাকলে আমাদের লাখ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হবে। জেলা প্রশাসন এই বিষয়ে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে পৌরসভা আর কোন ইজারাদার খুঁজে পাবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮ 
এমএএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।