ফুল, বেলুন ও খেলনা বিক্রি করে সারাদিন খাটা-খাটুনি পর একবেলার ভাত জোগাড় করতে পারলেই তাদের আনন্দ সীমা ছাড়ায়। তবে আর সবার মতো তাদের প্রত্যাশাও থাকে একটু বেশি।
নির্দিষ্ট কোনো দিনে নতুন জামা পরে একটু অন্যরকম আনন্দ, প্রতিদিনের একঘেয়েমি খাবারের পরিবর্তে ফিরনি, পায়েস ও সেমাইয়ের মতো একটু আহ্লাদী খাবার। একাকীত্ব জীবনে অন্তত সবার সঙ্গে নতুন পাঞ্জাবি পরে নামাজ আদায় আর একজন বন্ধুর সঙ্গেও একটু ঘোরাঘুরি। শহরের হাজারও পথশিশুদের আকাঙ্খা বা প্রত্যাশা এর থেকে খুব বেশি নয়। অন্তত তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমনটাই। রোববার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে খেলনা বিক্রি করা শিশু ইসমাইল বলে, শুধু খেলনা বিক্রি করে দু’বেলার খাবার জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। এর ভেতর ঈদের পোশাক আর ঘোরাঘুরি জন্য টাকা জমানো বেশ কষ্টের। তবুও প্রতিদিন একটু একটু করে টাকা জমিয়ে রাখি। ঈদের দিন আনন্দ করতে খরচ করার জন্য।
বিকেলে পান্থপথ এলাকায় কথা হয় ফুলের মালা বিক্রেতা শিশু শায়লার সঙ্গে। নীল গেঞ্জি পরে ভাইয়া আর আপুদের একসঙ্গে দেখলেই সে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে হাত, যেন একটা বকুল বা বেলি ফুলের মালা তার কাছ থেকে কিনতেই হবে। এক পশরা মালা বিক্রি শেষ করে খেলতে থাকে আনমনে ডানা মেলে।
কথা হলে শায়লা বাংলানিউজকে বলে, ঈদে সবাই নিজেদের জন্য কেনাকাটা করে, আমাদের তো কেউ কিছু দেয় না। তাই এখন থেকেই মালা বিক্রি করে টাকা জামাচ্ছি। এই টাকা দিয়ে চাঁদরাতে হাতের চুড়ি আর মেহেদি কিনব। সঙ্গে একটা নতুন জামাও।
মহাখালীতে বেলুন বিক্রি করা তুহিন বলে, ঈদে নতুন পোশাক পরে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরব। এজন্য তো টাকা লাগবে। তাই এখন বেলুন আর খেলনা বিক্রি করছি। এমনিতেই বেলুন সারাবছরই বেচি। তবে ঈদের আগে অনেক বেশি কাস্টমার থাকে, বেশি বেচা যায়। তবে ঈদে আনন্দ করার পাশাপাশি অনেকেই আবার রাজধানীর বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি ঘুরবেন বলেও জানিয়েছে অনেকেই।
এ প্রসঙ্গে শায়লা বলে, এই ঈদে তো সব বড়লোক মানুষগুলো কোরবানি দেয়। ঈদেরদিন আমরা তাদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করব। এরপর সন্ধ্যায় সবাই মিলে সেই মাংস দিয়ে পিকনিক করব ।
অনেক ছেলে শিশু এদিন কোরবানির কাজে অনেককে সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন অনেকে।
কেননা তারা মনে করে, সমাজে বাস করা সামর্থ্যবানদের ঈদ উদযাপনে রয়েছে নানা উপায়। কিন্তু, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের একটুখানি ঈদের আনন্দ নিতে করতে হবে অনেকটা পরিশ্রম।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
এইচএমএস/এএটি