ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাবাসহ ৩ জনকে অভিযুক্ত করে বিউটি হত্যা মামলার চার্জশিট

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
বাবাসহ ৩ জনকে অভিযুক্ত করে বিউটি হত্যা মামলার চার্জশিট বাম থেকে নিহত বিউটির বাবা ও তার মরদেহ

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে লোমহর্ষক বিউটি হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে আদালতে। এতে বিউটির বাবা ছায়েদ মিয়া, সহযোগী ময়না ও ভারাটে খুনী কামালকে আসামি করা হয়েছে। তবে ভারাটে খুনী কামাল এখনও পলাতক।

রোববার (১৯ আগস্ট) দুপুরে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা এক সংবাদ সম্মেলনে চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে শনিবার (১৮ আগস্ট) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম হবিগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এসপি বিধান ত্রিপুরা জানান, মামলাটির দীর্ঘ তদন্তের পর আসামি এবং সাক্ষীদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে বিউটির বাবা ছায়েদ মিয়া, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত মহিলা মেম্বার প্রার্থীর স্বামী ময়না মিয়া এবং ভারাটে খুনি কামাল তিনজন মিলে বিউটিকে হত্যা করে। তাই তাদের আসামি করেই মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়।  

এছাড়া বিউটিকে ধর্ষণ করলেও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল না বাবুল। তাই তাকে হত্যা মামলার চার্জশিটে জড়ানো হয়নি।

তবে বাবুল এবং তার মা কলমচাঁন বিবিকে আসামি করে বিউটি ধর্ষণ মামলার চার্জশিটও নারী শিশু নির্যাতন দমন আদালতে দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। বাবুল ১৭/১৮ দিন তার বাসায় রেখে বিউটিকে ধর্ষণ করে এবং বাবুলকে সহযোগিতার অভিযোগে তার মা কলমচাঁনের নামও চার্জশিটে রাখা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই তার বাবা ছায়েদ মিয়া যে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন সেই মামলাটিরও ফাইনাল রিপোর্ট করা হয়েছে।  

এদিকে বিউটি হত্যার ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি ভারাটে খুনি কামাল। তাকে গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান এসপি বিধান ত্রিপুরা। দ্রুত গ্রেফতারের স্বার্থে কামাল সম্পর্কে এর বেশি তথ্য দেননি তিনি।

গত ১৭ মার্চ সকালে জেলার শায়েস্তাগঞ্জের পুরাইকলা বাজার সংলগ্ন হাওর থেকে বিউটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সেদিনই বিউটিকে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে তার বাবা ছায়েদ বাদী হয়ে বাবুল (৩২) ও তার মা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য কলমচাঁন বিবির (৪৫) নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিউটির নিথর মরদেহের ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। হত্যা ও ধর্ষণে জড়িতদের বিচার দাবিতে দেশজুড়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিউটি হত্যার চার্জশিট দাখিলের সংবাদ সম্মেলন২১ মার্চ বাবুলের মা কলমচাঁন এবং বন্ধু একই গ্রামের ইসমাইলকে আটক করে পুলিশ। এরপর ৩১ মার্চ সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় বাবুলকে। ৬ এপ্রিল হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বাবুল বিউটি হত্যা ও ধর্ষণের দায় স্বীকার করেন।

এর মধ্যে ৫ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয় বিউটির প্রতিবেশী চাচা ময়নাকে, ৬ এপ্রিল ধরা হয় ছায়েদকে। পরে বিউটির বাবা ও মামলার বাদী ছায়েদ পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী জবানবন্দিতে অকপটে স্বীকার করে নেন মেয়ে হত্যার পেছনে তার জড়িত থাকার কথা। হত্যাকাণ্ডের রাতে নিজেই নানার বাড়ি থেকে বিউটিকে নিয়ে তুলে দেন খুনিদের হাতে।  

১৬ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় লাখাই উপজেলার গণিপুরের নানীর বাড়ি থেকে বিউটিকে নিয়ে যান ময়না, ছায়েদ ও তাদের ভাড়াটে খুনি কামাল। রাত ১২টায় ঘটে হত্যাকাণ্ড। বটতলা এলাকায় বিউটিকে ধরে রাখেন ভাড়াটে খুনি, ছুরি দিয়ে পাঁচবার আঘাত করেন ময়না। ২০ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন বাবা ছায়েদ।

বাবুল মিয়া শায়েস্তাগঞ্জের ওলিপুরে একটি কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন। তার মা কলমচাঁন বিগত ইউপি নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হন। আর্থিকভাবে প্রভাবশালী বাবুল এর আগে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এর মধ্যে তার নজর পড়ে স্কুলছাত্রী বিউটির ওপর। তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভন দেখান এবং নিজের কোম্পানিতে চাকরির আশ্বাস দেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত বাবুল ওলিপুর এলাকায় এক হাজার টাকায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে বিউটিকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একসঙ্গে থাকেন। ৯ মার্চ বিউটিকে নিয়ে যান সেই কোম্পানিতে। একই কোম্পানিতে কাজ করেন বিউটির মা হুসনা বেগমও। বিষয়টি জেনে তিনি মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসেন। আর তখন থেকেই পরিকল্পনা করা হয় হত্যাকাণ্ডের।

বিগত ইউপি নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের মেম্বার পদে নির্বাচন করেন ময়নার স্ত্রী আসমা আক্তার ও বাবুলের মা কলম চাঁন। কথা ছিল কলম চাঁন নির্বাচনে না গিয়ে আসমাকে ছাড় দেবেন। কিন্তু কথা না রেখে কলমচাঁন ভোট করে আসমাকে হারিয়ে দেন। এরপর উভয় পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ছায়েদ আলী প্রথম মামলাটি করলে এতে সাক্ষী হন তার ঘনিষ্ঠ ও এলাকার আদম ব্যবসায়ী ময়না। বিউটিকে নানার বাড়িতে পাঠানোর পর এই ময়না প্রায়ই ছায়েদ মিয়াকে বোঝাতে থাকেন, বিউটিকে বাবুল বিয়ে না করলে তাকে আর কেউ বিয়ে করবে না। অন্য সন্তানদেরও আর বিয়ে হবে না। এরপর বিউটিকে মেরে বাবুল ও তার মাকে ফাঁসানোর ছক বোঝাতে থাকেন।

এক পর্যায়ে ময়নার ফাঁদে পা দেন ছায়েদ মিয়া। নিজের মেয়েকে নানীর বাড়ি থেকে বের করার সময় চেয়ারম্যানের কাছে নেওয়ার কথা বলা হয়। পরে লাখাইয়ের সেই বটলতায় ঘটে হত্যাকাণ্ড। বিউটিকে খুনের পর রক্ত ধুয়ে মরদেহটি হাওরে ফেলে রাখা হয়। মরদেহ উদ্ধারের খবরে নানী বিউটিদের বাড়িতে এলে তাকে শাসিয়ে দেওয়া হয় কোনো কিছু না বলার জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad