প্রায় ৫৩ বছর আগে এই হাটের কিছু জায়গা ইজারা নেন বাজারের মালিক দাবিদার আফছর উদ্দিনের পরিবার। সেই থেকেই ওয়াকফ এস্টেটের পুরো জায়গা জুড়েই চলছে পশুরহাট।
কোরবানির ঈদে হাটের ব্যপ্তি ছড়ায় যান চলাচলের রাস্তায়ও। আর ঈদের আগের রাতে কাজিরবাজার সেতুমুখ থেকে তালতলা পেরিয়েও যায় এই পশুরহাটের আয়তন। এই হাটের পশু বেচাকেনা চলে হাসিলের মাধ্যমে। কিন্তু আয়ের এই উৎস থেকে বঞ্চিত থাকলেও এতোদিন ধরে কুম্ভকর্ণের ঘুমে সিটি করপোরেশন।
যদিও হাটের দখল বুঝে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের প্রতি উচ্চ আদালতের এক নির্দেশনা ছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে জেলা প্রশাসন থেকে হাটটি বুঝে নেওয়া হয়নি।
অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদালতের নির্দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশ থাকলেও বিপরীতে আরেকটি দরখাস্ত আদালতে দাখিল করা হয়। এতে করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় প্রশাসনকে।
কাজিরবাজার নিয়ে উচ্চ আদালতের মামলার কাগজাত থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, কাজিরবাজার হাট সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের এক আদেশের কপি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয় সচিব, খান বাহাদুর এহিয়া ওয়াকফ এস্টেটের মোতায়াল্লি হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার, সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাজিরবাজার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং তোপখানার মৃত কামাল উদ্দিনের স্ত্রী হামিদা খাতুনকে দেওয়া হয়। কিন্তু বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন কোনো পক্ষকেই আদেশ পালনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ পরিলক্ষিত হয়নি।
মামলা থাকলেও একটি পক্ষ বিরোধপূর্ণ জায়গায় হাট বসিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। আর প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে বিরোধপূর্ণ এ হাটটিকে প্রেসনোটের মাধ্যমে বৈধতা দেয় পুলিশ প্রশাসন ও নগর কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূর্ণ নিরাপত্তাও দেয়া হয় হাটটিতে।
নগরের একমাত্র পশুরহাট কাজিরবাজারকে বলা হলেও এই হাট থেকে কোনো ধরনের রাজস্ব পায় না সিটি করপোরেশন। এক্ষেত্রে আদালতে চলমান মামলার অজুহাত দেখানো হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হাটটি ওয়াকফ এস্টেটের জায়গাতে বসানো। আর ব্যক্তিমালিকানাও হয়ে থাকলে এলাকায় থাকা হাটের ইজারা দেবে সিটি করপোরেশন-এটাই নিয়ম। এই হাট সিটি করপোরেশনের আয়ের বড় একটি খাত। হাটটি ইজারা দিয়ে প্রতিবছর অন্তত ৩ কোটি টাকা ইজারা দেওয়া যেতো। সে হিসেবে প্রায় ৫৩ বছরে ১৫৯ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
সিলেটের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মৃণাল কান্তি দেব বাংলানিউজকে বলেন, কাজিরবাজার পশুরহাটের পুরো জায়গাটাই ওয়াকফ এস্টেটের। এই হাট থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তবে মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাচ্ছে না।
সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরি জামান হাটটির বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বিপরীতে একটা পিটিশন মামলা আছে। ওটা চলমান থাকায় বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। হাটটির দখল বুঝে নেওয়ার পর আদালতকে অবহিত করা হবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, কাজিরবাজার হলো স্থায়ী পশুরহাট। এখানে সপ্তাহে দু’দিন হাট বসে। ঈদেও সেভাবে নিয়মিত হাট বসানোর জন্য বলা হয়েছে। এর বাইরে নয়। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, হাটের পরিচালনায় নিয়োজিতদের বলে আসছি, হাটের সীমানায় লাল পতাকা সম্বলিত খুঁটি বসাতে। রাস্তায় যেসব পশু বিক্রি হবে সেখানে হাসিল না করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে হাট কর্তৃপক্ষকে।
এ প্রসঙ্গে কাজিরবাজার পশুহাটের মালিক দাবিদার আফছর উদ্দিন বলেন, হাটটির মামলার বিষয় অনেক লম্বা। বলতে গেলে অনেক কিছুই বলতে হবে। তবে সব কথার শেষ কথা কাজিরবাজার পশুরহাট নিয়ে মামলটি এখনও বিচারাধীন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
এনইউ/আরবি/