ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদ ঘিরে কামারপট্টিতে ক্লান্তিহীন কাজ

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
ঈদ ঘিরে কামারপট্টিতে ক্লান্তিহীন কাজ বটি দা, তৈরিতে বিশ্রামহীন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। ছবি: আবু বকর

সিলেট: ঠুংঠাং শব্দের শব্দের ঝঙ্কার চারিদিকে। অনেকের কাছে এই শব্দ বিরক্তির কারণ হলেও কামারদের কাছে তা রুটি রুজির। ধরণীতে যখন প্রখর রোদের উত্তাপ। একটু প্রশান্তির খোঁজে উচ্চবিত্ত যখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে। কামারেরা তখন আগুনে উত্তাপ ছড়ান লোহা দিয়ে দা, বটি দা, ছুরি, চাকু ও চাপাতি তৈরিতে। কোরবানির অনুসঙ্গ হিসেবে ভূমিকা কামারদের। তাদের তৈরি দা, ছুরি, চাপাতি দিয়েই করতে হয় পশু জবাই। তাই বিক্রির জন্য তৈরিকৃত দা, ছুরি, চাকু, চাপাতি রাস্তার পাশে দোকানে সাজিয়ে রাখেন কামাররা।

পশু জবাই’র উদ্দেশ্যে বিক্রির জন্য কামারশালায় লোহা দিয়ে তৈরি দা, ছুরি, চাকুর বাজার বসেছে সিলেটে। কসাই ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ পশু কোরবানির উদ্দেশ্যে কিনে নিচ্ছেন ছুরি, চাকু।

আর এসব ছুরি, চাকু, দা, বটি দা, তৈরিতে ঈদুল আজহায় বিশ্রামহীন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা।

সিলেটের চাঁদনীঘাট, কাজিরবাজার, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, টিলাগড়, চাঁদনীঘাট, পুরাতন রেলস্টেশনসহ অসংখ্য স্থানে ছুরি চাপাতি তৈরিতে ব্যস্ততা পরিলক্ষিত হয়েছে।

সরেজমিন নগরের চাঁদনীঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কামাররা লোহার উপকরণ দিয়ে কোরবানির পশু জবাইয়ের বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাত-দুপুর নেই দিন কাটছে দোকানে। এখানেই খাওয়া-দাওয়া। বটি দা, তৈরিতে বিশ্রামহীন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা।  ছবি: আবু বকরকামাররা বলেন, কোরবানির ঈদ তাদের জন্য সিজন। তাই ঈদের আগে অর্থ উপার্জনের সময়। আগে থেকেই মালামাল প্রস্তুত করে রেখেছেন। ঈদের সময় বিভিন্ন হাট-বাজারে তা বিক্রি করছেন।

গ্রামাঞ্চলের বিক্রেতারা শহরের হাট থেকে এসব ছুরি, চাপাতি, চাকু কিনচ্ছেন। তবে বাজারে লোহার দাম বেশি হওয়াতে পরিশ্রম অনুযায়ী মূল্য পাওয়া যায় না। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এরপরও ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করতেই কামার পেশাকে ধরে রেখেছেন বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশরা।

কামাররা বলেন, নতুন একটি ছোরা ৩৫০ থেকে চারশ টাকা, বিভিন্ন সাইজের চাকু ৫০ থেকে একশ টাকা, বটি ২০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য ঈদ উপলক্ষ্যে বিক্রি বেশি হওয়ায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে দাম কম রাখা হচ্ছে। বটি দা, তৈরিতে বিশ্রামহীন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা।  ছবি: আবু বকরচাঁদনীঘাট এলাকার অরূপ কর্মকার বাংলানিউজকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আগেই অতিরিক্ত মালামালের অর্ডার নেওয়া হয়েছে। এসব মালামাল তৈরিতে প্রচুর সময় ব্যয় হয়েছে। এছাড়া দোকানে রাখার জন্য অতিরিক্ত মালামাল তৈরি করতে হয়েছে। এজন্য গত পাঁচদিন থেকে নতুন কাজের অর্ডার নেইনি।

তিনি বলেন, ঈদের আগে লোহার দাম বেড়েছে। যে কারণে একটু বেশি দামে তৈরিকৃত কোরবানির সরঞ্জাম বিক্রি করতে হচ্ছে। একটি বড় দা পাঁচ কেজির লোহা দিয়ে তৈরি করে মজুরিসহ আটশ টাকা, এককেজির কুড়াল দুই থেকে আড়াইশ টাকা, চাপাতি আকারভেদে চার থেকে পাঁচশ টাকা, বড় ছোরা ওজন ভেদে তিন থেকে সাড়ে ছয়শ টাকা, কুড়াল তিন থেকে চারশ টাকা দরে বিক্রি করছি।

একই এলাকার বিপুল কর্মকার বলেন, ‘ঈদে মজুরি বাবদই দিনে প্রায় দুই হাজার টাকা আয় করছি। এছাড়া রোজার ঈদের পর থেকেই কোরবারনির ঈদে পশু কোরবানির জন্য নতুন ছুরি, চাপাতি, চাকু তৈরির ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী লোহার দা, বটি, ছুরি, কাঁচি তৈরীর পাশাপাশি দোকানে রেখে বিক্রির মালামাল তৈরি করতে হয়। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিনই বিক্রি বাড়ছে। ঈদের আগের দিন সারারাত দোকানে বিক্রি থাকে বলেন তিনি।

নগরীর সুরমা মার্কেট এলাকার কামার আওলাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পশু জবাইয়ের জন্য লম্বা দা তৈরি করলেও এগুলো যেনো সন্ত্রাসীরা কিনে না নেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। প্রকৃতপক্ষে কোরবানির জন্য নেওয়া হচ্ছে কিনা লোক দেখলেই অনুমান করা যায়। অন্যথায় বিক্রি বন্ধ রাখি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘন্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।