ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রকাশ্যে গুলি করে ৬ জনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮
প্রকাশ্যে গুলি করে ৬ জনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর পুলিশ বক্স

খাগড়াছড়ি: শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকার পুলিশ বক্সের দ্বায়িত্বে ছিলেন উপ-পরিদর্শ (এসআই) মো. রফিকুল ইসলাম। হঠাৎ গুলি শুরু করে ৫/৬ জনের একদল সন্ত্রাসী।

এলাকার বাজারে উপস্থিত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পুলিশ বক্সে ঢুকে পড়েন। পুলিশ বক্সের পিছনের দেয়ালে ৫/৬টি গুলি লাগে।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলা করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, সকালবেলা স্বনির্ভর পুলিশ বক্সে রাতে যারা ডিউটি করেছে তাদের কাছ থেকে দায়িত্ব পরিবর্তনের কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ বক্সের পিছন থেকে এলোপাথারি গুলি ছোড়া হয়। এ সময় আশপাশের আতঙ্কিত লোকজন ভয়ে পুলিশ বক্সে ঢুকে পড়ে। আমরা পাল্টা গুলি ছোড়ার সময়টুকুও পাইনি।
এক নিহতের স্বজনদের আহাজারিশনিবার (১৮ আগস্ট) সকাল পৌনে ৯টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৬ জন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন ৩ জন। নিহতদের অধিকাংশ ইউপিডিএফ সমর্থিত সংগঠনের নেতা-কর্মী।

নিহতরা হলেন, মহালছড়ির চোংড়াছড়ির এলাকার বাসিন্দা ও ইউপিডিএফ-এর প্রসিত বিকাশ গ্রুপ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি তপন চাকমা (২৮), মহালছড়ির মনাটেক এলাকার বাসিন্দা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলার সহ-সভাপতি পলাশ চাকমা (৩০), মাইস্যাছড়ি মানিকছড়ির বাসিন্দা ও পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক এল্টন চাকমা (২২), জেলা সদরের উত্তর খবংপুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা (৫৩), একই গ্রামের কান্দারা চাকমার ছেলে এইচএসসি পরিক্ষার্থী রূপম চাকমা (২০) এবং ধীরাজ চাকমা (২৭)।  

ধীরাজ চাকমা ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন বলে জানা গেছে।  

পলাশ চাকমা, জিতায়ন চাকমা ও ধীরাজ চাকমার মরদেহ ঘটনাস্থলের স্বনির্ভর মোড় থেকে, তপনের মরদেহ ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনের মাঠের বাউন্ডারির পাশ থেকে, এল্টনের মরদেহ কার্যালয়ের বাম দিকের পুকুর পাড় থেকে এবং রূপম চাকমার মরদেহ তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।
৬ জনকে গুলি করে হত্যার পর খাগড়াছড়ি শহরে জোর নিরাপত্তাএ ঘটনায় আহতরা হলেন সমর বিকাশ চাকমা (৪৮), সুকিরণ চাকমা (৩৫) ও সোহেল চাকমা (২২)। গুলিবিদ্ধ ৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘শনিবার সকালে গ্রামবাসীদের নিয়ে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা ছিলো ইউপিডিএফ-এর। আমরা সকালে ওই কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর আগেই ঘটনাটি ঘটে। সন্ত্রাসীরা কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে হামলাটি করেছে। প্রথমে পুলিশ বক্স লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তারা। হামলায় সন্ত্রাসীরা সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের মতো সময় নিয়েছে। আমরা যে পাল্টা আক্রমণ করবো সেই সুযোগও ছিল না।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা ভারী অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। ইউপিডিএফ-এর কাছেও অস্ত্র ছিল। কিন্তু সন্ত্রাসীরা হঠাৎ আক্রমণ করায় ইউপিডিএফ সুবিধা করতে পারেনি।

হাসপাতালে কথা হয় ধীরাজ চাকমার মামা বিশ্বকল্যাণ চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ধীরাজ ঢাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঈদের বন্ধে তিনি শনিবার সকালে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়িতে আসেন। পানছড়ির উলুছড়িতে নিজ বাড়িতে যেতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন ধীরাজ। সন্ত্রাসীরা তাকেও গুলি করেছে।

হাসপাতালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রূপম চাকমার মা সেবিকা চাকমা। তিনি বলেন, ‘রূপম কোনো দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার ছেলে এবার এইসএসসি পরিক্ষার্থী ছিল। আমার ছেলের কী দোষ? আমার বুকটা কেন খালি করলো?  

ইউপিডিএফ’র জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। জনসংহতি সমিতির সংস্কারবাদীরা এ ঘটনায় জড়িত। তারা পাহাড়ে হত্যার রাজনীতিতে নেমেছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, ঘটনাটি ইউপিডিএফ’র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল। এ ঘটনায় আমাদের পার্টি কোনভাবে জড়িত না।

ঘটনার পর থেকে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। স্বনির্ভর বাজারসহ আশপাশের এলাকার সব ধরনের দোকানপাটও বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শহরে জোরদার করা হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্যদিকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত চলছে। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি।

চলতি বছরের ৪ মে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর এলাকায় ব্রাশ ফায়ারে ৫ জন নিহত হন। এর একদিন আগে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে হত্যা করা হয়। মূলত শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়ায় যাওয়ার সময় ইউপিডিএফ’র একাংশের প্রধানসহ ৫ জনকে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮
এডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।