ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঐতিহ্য হারিয়েছে সার্কিট হাউজ পশুর হাট  

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮
ঐতিহ্য হারিয়েছে সার্কিট হাউজ পশুর হাট   রোববার থেকে এখানেই বসবে পশুর হাট-অনিক খান 

ময়মনসিংহ: রীতিমতো ঐতিহ্য হারিয়েছে ময়মনসিংহ শহরের সার্কিট হাউজ মাঠের পশুর হাট। মূলত মাঠের বদলে ক্রীড়া পল্লি আবুল মনসুর সড়ক, জয়নুল উদ্যানের একাংশ ও শহরের কাঁচারি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত করা হয়েছে এক সময়কার বৃহৎ এই হাট। তবুও মূল মাঠের চেয়েও ছোট হয়ে এসেছে মাঠের পরিধি। 

ফলে গত তিন বছর কোনো ইজারাদারই জমিয়ে তুলতে পারেননি মাঠ। দীর্ঘশ্বাস আর কান্না নিয়ে প্রতিবারই হাট ছাড়তে হয় ব্যাপারিদের।

আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে পুরনো ইজারাদার এবার আর হাট নেননি। ফলে নতুন ইজারাদারের হাতে হাটটি তুলে দিয়েছে ময়মনসিংহ পৌরসভা।  

ঈদের মাত্র তিনদিন আগে রোববার (১৯ আগস্ট) থেকে বসবে এই হাট। সেই টার্গেট নিয়েই গেট তৈরি, আবুল মনসুর সড়কের ডান পাশে বাঁশের বেড়া, সুরকি-বালু ফেলে নিচু স্থান ভরাট ও বাঁশ দিয়ে খুঁটি স্থাপন করছেন শ্রমিকরা। শুক্রবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় হাটটি ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর সার্কিট হাউজকে ঘিরে এই মাঠের গোড়াপত্তন হয়। ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এই মাঠেই আগে ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর হাট বসতো। এটিই ছিল ঐতিহ্য।  

কিন্তু ২০১৫ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রওশন এরশাদ এই মাঠে কোরবানির পশুর হাটের ইজারা বন্ধে নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই সার্কিট হাউজ মাঠের পরিবর্তে পশুর হাটের জন্য ইজারা দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় আবুল মনসুর সড়ক, জয়নুল উদ্যানের বাইরের একাংশ ও কাঁচিঝুলি এলাকা।  

সংশ্লিষ্টরা জানায়, বিরোধী দলীয় নেতার এই নির্দেশে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যে ছেদ পড়েছে। মাঠ পরিচ্ছন্ন রাখতে তার এই নির্দেশনা প্রশংসিত হলেও পৌর এলাকার ভেতরে বিকল্প বড় কোনো মাঠ না থাকায় বাধ্য হয়েই এই মাঠের আশেপাশের সড়ককেই কোরবানির পশুর হাট হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে।  

জানা গেছে, গত কয়েক বছর জেলার সবচেয়ে বড় এই পশুর হাটের ইজারা নিয়েছিলেন ময়মনসিংহ পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মান্নান। কিন্তু আকার ছোট হওয়ায় গত কয়েক বছর জমেনি পশুর হাট। ফলে মোটা অঙ্কের আর্থিক লোকসান গুণতে হয়েছে তাকে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইজারাদার আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে জানান, পশুর এই হাটটি ছোট হতে হতে একেবারে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এটিও মাঠ না জমার অন্যতম কারণ।  

তিনি বলেন, গতবার আমরা দুইদিনে ৪২ লাখ টাকা লোকসান গুণেছি। এইবার ৪০ লাখ টাকা ডাক দিয়েছিলাম। কিন্তু আরেকজন ৭৬ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছেন। কোনো অবস্থাতেই এই টাকা উঠানো সম্ভব হবে না।  

ময়মনসিংহ পৌরসভার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এবার চার দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। শেষ পর্যন্ত এন.এইচ এন্টারপ্রাইজ দরপত্রে অংশ নিয়ে ৭৬ লাখ টাকায় পশুর হাটটি ইজারা নিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এই হাটটি এবারও জমে ওঠে কি না এ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে অনেকের ভেতরেও।  

তবে এ ব্যাপারে ইজারাদার নেজামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এবার মাঠটি জমিয়ে তুলতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মাইকিং ও ব্যানার-ফেস্টুন করা হয়েছে। এবার আশেপাশে কোনো অবৈধ হাট বসবে না, এমন আশ্বাস মিলেছে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে। আমরা আশাবাদী এবার হাট জমবে।  

সংশ্লিষ্টরা জানায়, রোববার থেকে এই হাট বসলেও মূলত ধুম বিক্রি হতে পারে ঈদের আগের দুইদিন। প্রথমদিন স্বল্প পরিসরে গরু-ছাগল ওঠবে। তবে পরের দুইদিন দূর-দূরান্ত থেকে ব্যাপারি ও বিক্রেতারা এই হাটে পাড়ি জমাবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮ 
এমএএএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad