ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জৌলুস হারিয়েছে বরিশালের হাটখোলার কামারপট্টি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮
জৌলুস হারিয়েছে বরিশালের হাটখোলার কামারপট্টি ক্রেতাশূন্য বরিশালের হাটখোলার কামারপট্টি-ছবি-বাংলানিউজ

বরিশাল: দিনে দিনে জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে বরিশাল নগরের হাটখোলার কামারপট্টি এলাকা। এখন সেখানে সারাবছর ধরে আগুনে পোড়ানো নরম লোহায় হাতুড়ি পেটানো ঠুংঠাং শব্দ শোনা যায় না। সে শব্দ সংকুচিত হয়ে এখন আর কামারপট্টি ভেদ করে না।

তবে কোরবানির ঈদকে ঘিরে বেড়েছে কর্মব্যস্ততা। তবে এখনকার ব্যস্ততার কাছে ১০ বছর আগের ব্যস্ততা নিছক একটা গল্পই।

ব্যয় আর শ্রমের সঙ্গে বিক্রিত পণ্যের লাভের হিসাব মেলাতে না পেরে অনেকেই ছেড়েছেন এ পেশা, কিংবা চলে গেছেন অন্যত্র। আর যারা আছেন কোনভাবে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ছোট্ট টুপরি ঘরে।  

চল্লিশের কাছাকাছি বয়স হাটখোলার কামারপট্টির অমল কর্মকারের। গরম লোহার ওপর হাতুরি পিটিয়ে চলছেন নিজের বয়সের অর্ধেক বেশি সময় ধরে।

তিনি জানান, হাটখোলার মতো বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, বানারীপাড়াসহ প্রতিটি উপজেলায়ই কামারদের পট্টি ছিলো আলাদা। যেখানে কর্মযজ্ঞ মানেই লোহার ওপর হাতুরি পেটানোর শব্দ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাটখোলাসহ আশপাশের প্রায় সব কামারপট্টিই তাদের পুরনো জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে।

তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে এ পেশা কষ্টে ছেড়েছেন, আর বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কেউ তো এ কাজে বসতে চায় না। এখানে ঘাম ঝড়ার সুযোগ পায় না, ঘাম শুকিয়ে যায়।  

বরিশালের হাটখোলায় সারাবছর কাজ হয় জানিয়ে তিনি বলেন, কাজ তো সারাবছর হয় কিন্তু সে কাজ দিয়ে পেট চালানো দায়। হাটখোলায় একসময় ২৫টির মতো কামারদের দোকানঘর ছিলো, কিন্তু এখন হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র টিকে আছে। যে যার মতো সরে গেছে শুধু পেটের দায়ে।

বছর ঘুরলেই লোহা আর কয়লার দাম বাড়ছে, তার ওপর কোরবানিকে পুঁজি করে তো আরও বাড়ানো হয়। বর্তমানে ৫০ কেজির এক বস্তা কয়লা ৮শ’ টাকা আর লোহা ১২০ টাকা। এক কেজি লোহা পুড়িয়ে তৈরি দা, বটি, ছুরি যা বিক্রি করা হয়, তা দিয়ে একবেলায় একজনের কোনভাবে ভাত খাওয়া সম্ভব হয়।

হাটখোলার অমিত এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী অসিম জানান, হাটখোলায় এখন লোহা পেটানো কিংবা কয়লা জালিয়ে রাখতে ব্যবহৃত বাতাসের শব্দ বাইরে থেকে আর শোনা যায় না। বিক্রি কমে গেছে। আগে শুধু কোরবানিতে যে বিক্রি হতো এখন কোরবানিসহ সারাবছরেও তা হয় না।

কামারদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও পেশা ছেড়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা অনেকেই ব্যবসা ছেড়েছেন, নয়তো এই ব্যবসার সঙ্গে অন্য ব্যবসা শুরু করেছেন।  

বিক্রি কমে যাওয়ার পেছনে কাঁচা পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট দোকনঘর ও আধুনিক এবং রেডিমেট সামগ্রীর প্রভাব রয়েছে বলে দাবি করেনে আরেক ব্যবসায়ী অশোক কুমার রায়।

তিনি বলেন, এখন অনেক এলাকায় কামারের দোকান রয়েছে যেখানে দা, বটি, ছুরি ধার দেওয়াসহ নতুন বিক্রিও করা হয়। তবে নতুন বিক্রির সংখ্যাটা সব জায়গাতেই কমে গেছে। নতুন কেনার চেয়ে পুরনোগুলোতেই শান দিতে বেশি ঝুঁকছেন ক্রেতারা।

কোরবানি ঈদের কয়েকদিন বাকি থাকলেও হাটখোলার কামারপট্টি ও লোহাপট্টি ঘুরে তেমন কোনো কর্মব্যস্ততা দেখা যায়নি। ক্রেতাশূন্য বাজারে দা-বটি সাজিয়ে রেখে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা।

হাটখোলোয় বর্তমানে কেজি হিসেবে চাপাটি ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, দা ৩৫০ থেকে ৪শ’ টাকা ও বটি ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছুরি আকারভেদে ৩০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, ১৮ আগস্ট, ২০১৮
এমএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।