ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘মোরা তো কফাল ঠিহা মাছ পাই’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮
‘মোরা তো কফাল ঠিহা মাছ পাই’ আড়তে ইলিশ এলেও তা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা

বরিশাল:  ‘আষ্টো-দশদিন আগে ভালো মাছই (ইলিশ) আওয়া শুরু অইছিলো, এহন আবার গত দুইদিন ধইরা ইলিশের কোনো দ্যাহা নাই। মোরা তো কফাল ঠিহা মাছ পাই, কারণ হাত আন্দাজে জাল ফালাইয়া মাছ ধরতে অয়’।

ভরা মৌসুমে ইলিশের দেখা না মেলায় বাংলানিউজের কাছে এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন বরিশাল নগরের বেসরকারি অন্যতম বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পোর্ট রোডের ব্যবসায়ী মো. আলামিন।

তিনি জানান, উন্নত সরঞ্জামের (টেকনোলজির) কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জেলেরা যেখানে পানির নিচে মাছের অবস্থান নিশ্চিত করে ইলিশ শিকার করে, সেখানে বাংলাদেশের জেলেরা অনেকটাই কপালের জোরে জাল ফেলে মাছ শিকার করে।

এতে কোন সময় মাছ পাওয়া যায় আবার কোন সময় খালি হাতেই ফিরতে হয়।

আলামিন জানান, মূলত  চাপ না থাকলে বরিশালে ইলিশের দেখা মেলা কঠিন। অল্প মাছ হলে ফিসিংবোট নিয়ে বরিশালে আসতে নিষেধ করেন মালিকরাই। কারণ সাগর থেকে মাছ নিয়ে বরিশালে আসতে যেমন সময় লাগে, তেমনি খরচও বাড়ে। তাই অল্প মাছ হলে সময় ও খরচ বাঁচাতে মৎস্য বন্দর মহিপুর ও আলিপুরেই তা বিক্রি করে দিতে বলা হয়। যাতে বোটগুলো আবার তাড়াতাড়ি সাগরে ফিরে যেতে পারে। আর মাছ না মেলায় বর্তমানে বরিশালের বাজারে তেমনভাবে ইলিশের দেখা মিলছে না।

পোর্টরোডের অপর ব্যবসায়ী মাসুম বেপারী বলেন, গত বুধবার (০৮ আগস্ট) মৌসুমের প্রথম বড় ইলিশের চালান আসে। ওইদিন প্রায় আড়াই হাজার মণ ইলিশ আসে। যার অধিকাংশই সাগরের ফিসিং বোট থেকে। এরপর কয়েকটা দিন বেশ ভালোই কাটে। তবে গত সোমবার থেকে মাছের চালান কমতে শুরু করে। যা এখন প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

সাগরে ও নদীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশ না পাওয়ায় বরিশালের অবতরণ কেন্দ্রে মাছ নেই বললেই চলে। এ বিষয়ে মাসুম বেপারী বলেন, গতিপথ পাল্টে যাওয়া, নাব্যতা সংকটসহ বিভিন্ন কারণে নদীর ইলিশের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আর সাগরে যে ইলিশ পাওয়া যায় তা বরিশালে এনে পোষাতে না পারায়, উপকূলীয় অবতরণ কেন্দ্রগুলোতে বিক্রি করে দিয়ে আবারো সাগরে ফিরে যাচ্ছেন জেলেরা।  

এদিকে জেলেরা জানিয়েছেন, এবারে মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় দীর্ঘ অপেক্ষার পর সাগরে ইলিশ ধরতে শুরু করেন তারা। তারপর আবার সাগরে গিয়ে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় মাঝপথেও বেশ কয়েকবার ফিরে আসতে হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। তাই আশানুরূপ ইলিশ শিকার সম্ভব হয়নি।

মো. ইউসুফ মাঝি নামে ভোলার এক জেলে জানান, মাঝে মাঝে বেশ ভালো ইলিশ পাচ্ছেন জেলেরা। আবার অনেকে হতাশও হচ্ছেন। এটা পুরোটাই ভাগ্যের বেপার, তবে নিরাশ হওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহে বেশ ভালো ইলিশ নিয়েই অবতরণ কেন্দ্রে আসতে পেরেছেন। কিন্তু ওইসময় চাপ বেশি থাকায় দর পরে যায়। আর এখন ইলিশের চাপ না থাকায় দর বেশি।  

তবে বরিশাল পোর্টরোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের শ্রমিক হাবিব জানান, বাজারে নদীর চেয়ে সাগরের মাছের পরিমাণ বেশি। আর শুরুর দিকে কখনো বাজার বোঝাই ইলিশ থাকে আবার কখনো ইলিশ শূন্য বাজারও থাকে। তবে সময় যতো যাবে ইলিশের আমদানি বাড়বে, সঙ্গে বাড়বে শ্রমিকসহ সবার কর্মব্যস্ততা।

বরিশাল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ইজারাদার নীরব হোসেন টুটুল জানান, গত বছর এ সময়ে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার মণ ইলিশ এসেছে বরিশালের পোর্টরোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে, আর এখন হচ্ছে তার উল্টো। যে ইলিশ আসছে তাও আমাদের স্থানীয় নদীর নয়, সবই সাগরের।

আশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ৩/৪ বছর আগে যেমন ছোট আকারের ইলিশের (জাটকা) দেখা মিলতো স্থানীয় বাজারগুলোতে, এখন আর তা দেখা যায় না। বরং মৌসুমে বাজার বড় আকারের ইলিশেই সয়লাব থাকে। নির্ধারিত সময়ে মাছ শিকারে সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, জাটকা নিধন বন্ধ, কারেন্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, অভয়াশ্রম ঘোষণাসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে প্রতিবছরই ইলিশের পরিমাণ বাড়ছে। গত বুধবার (৮ আগষ্ট) থেকে কয়েকদিন প্রচুর পরিমাণে ইলিশ এসেছে। ওইসময় জেলেরা জানিয়েছেন, সাগরে প্রচুর ইলিশ রয়েছে, কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় তারা তা ধরতে পারছে না।

তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে বোটগুলো ভালোভাবে ফিরে এলে আবারো প্রচুর ইলিশের দেখা মিলবে বাজারে এমনটাই আশা করছেন তিনি।

বর্তমানে বাজারে, মণ প্রতি এলসি সাইজ সাগরের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০ হাজার টাকায় আর নদীর ইলিশ ৩৭/৩৮ হাজার টাকায়, এলসির কম সাইজের সাগরের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৩/২৪ হাজার টাকায় আর নদীর ইলিশ ২৬/২৭ হাজার টাকায়, কেজি সাইজের সাগর ও নদীর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৮/৫০ হাজার টাকায়। যা একসপ্তাহ আগে মণপ্রতি ৫-৭ হাজার টাকা কমে বিক্রি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৮
এমএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad